৩০ অক্টোবর ২০২৫

আরো তিন ডজনাধিক ইয়াবা কারবারির আত্মসমর্পণ ফেব্রুয়ারিতে

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় দ্বিতীয় দফে আরো প্রায় তিন ডজন ইয়াবাকারবারি ফেব্রুয়ারির শুরুতে আত্মসমর্পণ করছেন। টেকনাফ সরকারি ডিগ্রি কলেজ মাঠে এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজন করার উদ্যোগ নিয়ে এগুচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনী।

এতে প্রধান অতিথি থাকছেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক এমনটি জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি টেকনাফের শীর্ষ ১০২ ইয়াবাকারবারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তাদের মধ্যে কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চার ভাইও রয়েছেন। এই ১০২ ইয়াবাকরবারীর মাঝে একজন ইতোমধ্যে কারাগারে মারা যান। বাকি ১০১ জনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালতে অভিযুক্তপত্র (চার্জশীট) দাখিল করে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ।

জেলা পুলিশের সুত্র মতে, দ্বিতীয় দফায় আত্মসমর্পণ করতে যাওয়া ইয়াবাকারবারীর সংখ্যা ৩০-৪০ জন হবে। তবে সংখ্যাটি এখনো সুনির্দিষ্ট নয়। আত্মসমর্পণকারীদের মাঝে ১৮ ইয়াবাকারবারী গত ৯ মাসেরও বেশী সময় ধরে কক্সবাজার শহরের পুলিশ লাইনের আশেপাশের এলাকায় মধ্যস্থতাকারীদের হেফাজতে রয়েছে। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান দেখভাল করতে শীগগিরই পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন এন্ড ক্রাইমস) মো. জাকির হোসেন খান কক্সবাজার আসবেন। দ্বিদফা আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানটি প্রাথমিকভাবে ২৯ জানুয়ারি হবার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারী নির্ধারিত করা হয়েছে।

সরকারের শীর্ষ মহল থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে স্বেচ্ছায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ইচ্ছুক এসব ইয়াবাকারবারির তালিকা তৈরি করা হয়। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, ইয়াবাকারবারিদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হলেও মাদক বিরোধী নিয়মিত অভিযানে কোনও শিথিলতা আসবে না। বরং আরো তীব্রতর করা হবে। আত্মসমর্পণের আওতায় না এসে ইয়াবাকারবারিরা কৌশলে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করলে তাদের পরিণতি হবে আরো ভয়াবহ।

আত্মসমর্পণ করতে যাওয়া এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্যরা জানান, বন্দুকযুদ্ধে প্রতিদিনই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কেউ না কেউ মারা পড়ছে। তাই ভয়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

শৃংখলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, টেকনাফে ইয়াবা বন্ধে কঠোরতা বাড়ায় মাদক কারবারিরা পদ্ধতি পরিবর্তন করছে। স্থানীয়রা প্রাণভয়ে গা-ঢাকা দিলেও ইয়াবা পাচারে নতুন করে সক্রিয় হয়েছে মিয়ানমারের নাগরিকরা। তারা মিয়ানমার থেকে স্থল ও জলপথে ইয়াবা এনে পৌঁছে দিচ্ছে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। মিয়ানমারের সংঘবদ্ধ চক্র উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরেও রমরমা ইয়াবা ব্যবসা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রতিনিয়ত ইয়াবাসহ ধরা পড়ছে রোহিঙ্গারা। মাদকবিরোধী অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হচ্ছে মাদক কারবারি রোহিঙ্গারাও।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ২৬ দিনে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৯ মাদক কারবারি নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৬ জনই রোহিঙ্গা। আর ২০১৮ সালের মে থেকে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ অভিযানে ইয়াবাকারবারি, ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ৫৬ জন রোহিঙ্গাসহ ২০৯ জন ইয়াবাকারবারি ও ডাকাত-সন্ত্রাসী নিহত হয় কক্সবাজার জেলায়। পাশাপাশি গত এক বছরে এক কোটি ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ৫৭০ পিস ইয়াবাসহ ২ হাজার ৩৩৮ জনকে আটক এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ফলে ২০১৯ সালের মতো ২০২০ সালেও জাতীয় পুলিশ সপ্তাহে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন দ্বিতীয় বারের মতো বিপিএম (সেবা) পদক পেয়েছেন। সর্বোচ্চ অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য উদ্ধারকারী জেলা হিসাবেও পেয়েছেন ২ টি আইজিপি পদক ও সম্মাননা।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন