একসময় শান্তিপূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য ছিল কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার শিলখালি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আলিচান মাতব্বর পাড়া। কিন্তু এখন এই জনপদে রাত নামলেই শুরু হয় মাদক, বখাটে, বাইরের আগন্তুক আর অপরাধীদের দাপট। আর এই অন্ধকার জগতের হোতা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে আবদুর রশিদ ওরফে ‘বাইট্টা রশিদ’।
খামারকর্মীর ছদ্মাবরণে মাদকের ঘাঁটি
জানা গেছে, রশিদ মূলত ‘বনানী পল্লী’ নামক একটি খামারে নাইট ডিউটির কর্মী হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এই চাকরির আড়ালে কৌশলে আশপাশে গড়ে তুলেছে মাদকের জমজমাট আখড়া। স্থানীয় সূত্র বলছে, খামারের সুনসান পরিবেশ আর রাতের অন্ধকারকে কাজে লাগিয়ে সে নিয়মিত মাদক ব্যবসা চালাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে টমটম, মোটরবাইক ও অটোরিকশাযোগে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসে রশিদের কাছে মাদক কিনতে ও সেবন করতে। বিশেষ করে ‘টাক বাদাম গাছ’ এলাকা রাত ১০টার পর পরিণত হয় মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে।
একাধিকবার গ্রেপ্তার, তবুও ব্যবসা বন্ধ হয়নি
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রশিদ একাধিকবার গ্রেপ্তার হলেও রহস্যজনক কারণে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এতে স্থানীয়রা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন।
একজন বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা বলেন, “রশিদ কয়েকবার গ্রেপ্তার হইছে, কিন্তু কয়দিন না যাইতেই আবার ছাড়া পায়। তারপর আবার মাদকের ব্যবসা শুরু করে।”
গোপন পাহাড়ি রাস্তা মাদক চক্রের নিরাপদ রুট
স্থানীয়রা জানান, পুলিশের উপস্থিতি টের পেলেই মাদকসেবীরা পালিয়ে যায় সবুজপাড়া হয়ে একটি গোপন পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে। বর্তমানে এই রুট মাদকচক্রের জন্য নিরাপদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে অভিযানের সময়ও কাউকে ধরা যায় না।
এক যুবক বলেন, “যদি এই গোপন রাস্তাটা বন্ধ না করা হয়, রশিদকে ধরলেও লাভ হবে না। ওরা আগেই পালায়।”
সমাজ ধ্বংসের হুমকি
একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে পুরো যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। এখনই যদি প্রশাসন শক্ত অবস্থান না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে এই এলাকা থেকে মাদক নির্মূল করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।”
এলাকাবাসীর দাবিসমূহ
আবদুর রশিদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও দৃশ্যমান আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ
‘টাক বাদাম গাছ’ ও আশপাশের এলাকায় নিয়মিত পুলিশের টহল
সবুজপাড়ার গোপন পাহাড়ি রাস্তায় স্থায়ী চেকপোস্ট ও নজরদারি ক্যামেরা স্থাপন
বাইরের এলাকা থেকে আগতদের যাচাই-বাছাই বৃদ্ধি
বনানী পল্লী খামার ও আশপাশে অনুসন্ধান ও নজরদারি
স্থানীয়ভাবে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠন
প্রশাসনের শক্ত অবস্থান ছাড়া রক্ষা নেই
আলিচান মাতব্বর পাড়ার মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে পেতে চায়। তারা চায় শিশুদের হাসিমুখ, নিরাপদ সন্ধ্যা ও নির্ভয়ে চলাচলের অধিকার। কিন্তু কিছু চিহ্নিত অপরাধীর কারণে সবকিছুই ভেঙে পড়ছে। তাই এলাকাবাসীর আকুল আবেদন এই মাদকচক্র বন্ধ করতে নামমাত্র অভিযান নয়, চাই টেকসই, কার্যকর ও জিরো টলারেন্স ভিত্তিক পদক্ষেপ।
এ বিষয়ে আবদুর রশিদের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।













