৪ নভেম্বর ২০২৫

ইউএসটিসি’র কর্মী ছাটাই, প্রতিবাদে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজপথ

মুহাম্মদ আব্দুল আলী »

সকাল পেরিয়ে দুপুরের খরতাপে মাথা থেকে কপাল চুইয়ে মুখ গড়িয়ে পড়ছে ঘাম। সারা শরীর জবজবে ভেজা। দেখলেই বোঝা যায় এই করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি ও কাঠফাটা রোধে কেন তারা রাজপথে নেমেছেন। একদিকে করোনা হানার ভয় অন্যদিকে জীবিকার জন্য চাকরি রক্ষা নিয়ে আন্দোলনে রাজ পথে। যখন বৈশাখের রোদের প্রখরতা তখনই স্বাস্থকর্মীরা এই কাঠফাটা রোদের মধ্যে ব্যানার, পেস্টুন হাতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত চাকরি রক্ষার আন্দোলনে। বলছি চট্রগ্রামের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি’র (ইউএসটিসি) কর্মচারী ছাটাইয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত কর্মচারিদের কথা।

মঙ্গলবার (১২ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর ফয়েজ লেকস্থ বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসাপাতালের (বিবিএমএইচ) সামনে ইউএসটিসি’র কর্মচারিদের কোন কারণ ছাড়া কর্মচারী ছাটাই নোটিশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসাপাতালের (বিবিএমএইচ) ৩৫ কর্মচারিকে কোন কারণ ছাড়া ছাটাই প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের এই চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষাকেন্দ্রকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার প্রত্যয়ে কর্মচারিরা এই মানবন্ধন করেন বলে জানান কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।

সূত্রে জানা গেছে, এমতাবস্থায় সকল আলাপ-আলোচনা সমঝোতার পথরুদ্ধ করে দিয়ে কর্তৃপক্ষ যখন কোন প্রকার সমঝোতায় আসছে না এবং কর্মচারিদের উল্টো নির্যাতনস ও ছাটাই অব্যহত রেখেছে। অতএব এই পরিস্থিতিতে বিএলএফ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল তথা ইউএসটিসি’র কর্মচারিরা বাংলাদেশ লেভার ফাউন্ডেশনকে (বিএলএফ) সাথে নিয়ে রাজপথে সমাধানে বাধ্য হচ্ছে।

মানবন্ধনে বক্তব্য রাখেন মহানগর শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক আহমেদ, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন (বিএলএফ) চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন, কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মানিক মিয়াসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সাথে উপস্থিত ছিলেন সাউদার্ণ মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতা কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ হাবিব।

এছাড়াও মানবন্ধনে উপস্থিত ছিলেন অটেরিক্সা-অটোটেম্পু শ্রমিক ফেডারেশনের (২১/৮১) নেতৃবৃন্দ, কর্মচারী, চট্টগ্রাম সিটি বাস, মিনিবাস হিউম্যান হলার সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের (২১/৬৭) নেতৃবৃন্দ, সাউদার্ণ মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতা কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক ও কর্মচারিবৃন্দ।

জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল বিনা নোটিশে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসাপাতালের (বিবিএমএইচ) ৩৫স্টাফকে কর্মচ্যুত করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্তের পক্ষে কোন কারণ দর্শানো হয়নি। ছাটাইকৃত কর্মীরা প্রত্যকেই দীর্ঘদিন থেকে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে পূর্বের কোন অভিযোগ না থাকায় হঠাৎ কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে অনেকেই হতবিহবল হয়ে পড়েন। চাকরিচ্যুতের সিদ্ধান্তে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি দেশের এই সংকট সময়ে চাকরি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন।

মানবন্ধনে নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বলেন, ইউএসটিসি’র ব্যবস্থাপনা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে গাত ৫ এপ্রিল ২০জন নার্সকে বেআইনীভাবে ছাটাইসহ ১৫জন আয়াকেও ছাটাই করে দেয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এইসব কর্মচারিদের প্রতিষ্ঠানের প্রতি ১৫-২০ বছরের অভিজ্ঞতা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার বিষয়টি বিবেচনায় না এনে হঠাৎ করে তাদের ছাটায়ের নোটিশ প্রদান করে।

‘আমরা এই বেআইনীভাবে কর্মচারী ছাটাই করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ। উল্টো কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সিনিয়ির সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট শোকজ নোটিশ জারি করে এবং পরবর্তীতে সার্সপেনশন আদেশসহ আন্দোলনরত অনেক নেতৃবৃন্দকে চাকরি চলে যাবার হুমকি প্রদান করা হচ্ছে।’

বক্তারা আরো বলেন, ইউএসটিসি আজ বিকলাঙ্গের পথে। দুর্বল প্রসাশনের নিকট আমাদের আরজ-আবেদনের কোন মূল্যে নেই। এটি বুঝতে পেরে আমরা বিষয়টি প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করেছি। দেশের খ্যাতিমান চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. নুরুল ইসলাম প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করার জন্য কিছু প্রশাসন নামধারী কুচক্রী হম নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মানিক মিয়া বলেন, এই করোনা পরিস্থিতিতে নিজেদের জীভন জীবিকার স্বার্থে ও চট্টগ্রামের অন্যতম প্রসিদ্ধ চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার মহান প্রত্যয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য নিয়ম বিধি পালন করে আমরা আজকের মানববন্ধনের মাধ্যমে আমাদের দাবিগুলো নিয়ে হাজির হয়েছি।

তিনি বলেন, আয়া এবং সুইপারদের তো রেজিস্ট্রেশন লাগে না, তাদেরকে কেন কোন কারণ দর্শনো ছাড়া চাকরিচ্যুত করা হল বুঝলাম না। আমাদের একটা বৈধ ট্রেড ইউনিয়ন আছে। তারা ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। কিন্তু কোন আইনের ধারার তোয়াক্কাই করে নি। এখন হঠাৎ করে এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমরা কষ্ট পেয়েছি।

হাতে পেস্টুন নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে থাকা কর্মচারিদের একজন বলেন, করোনাভাইরাসে এই সঙ্কটাপন্ন সময়ে আমাদের রাস্তায় এসে এই খররোদে দাঁড়িয়েছি শুধু আমাদের সহকর্মীদের ছাটাই করার প্রতিবাদে। অবিলম্বে কর্তপক্ষকে তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা আন্দোলনে নেমেছি এবং সফল না হওয়া পূর্ব পর্যন্ত আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। এভাবে অন্যায়ভাবে কর্মচারী ছাটাই করা মানি না, মানব না।

উল্লেখ্য, বিএলএফ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল তথা ইউএসটিসি’র কর্মচারিদের পরবর্তী কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে। তা হলো- সপ্তাহব্যাপি বিভিন্ন হাসপতালের নেতৃবৃন্দের সাথে নিয়ে মতবিনিময়, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে ইউএসটিসিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, শ্রম অধিদপ্তর ঘেরাও ও চেয়াম্যানের বাংলো ঘেরাও। এছাড়াও যদি সমঝোতা না হয় তাহলে মহাসমাবেশ, সকল হাসপাতালে ধর্মঘট ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেবে বলে জানিয়েন আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নেতৃবৃন্দ।

আরও পড়ুন