মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
রমজান শেষে ঈদের আনন্দ। এটাই অপেক্ষা সবার। তবে এই আনন্দ অনেকটা পোশাক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ধনী, গরিব সবার মাঝে কাজ করছে পোশাকের বাহার। টিনেজ থেকে শুরু করে শিশুদের মধ্যেও পোশাকের বাহার কাজ করছে প্রতিনিয়ত। তবে প্রবীণ সমাজ এক সময় সাধাসিধে পোশাক নির্ভরশীল থাকলেও ডিজিটাল এ যুগে এসে তৃতীয় প্রজন্মের দেখাদেখি রঙিন পোশাকে অনেকেই নিজেদের সাজাতে চায়। ফলে টিনেজদের সঙ্গে ছুটছে প্রবীণরাও। বিভিন্ন শপিং মলের ডিসপ্লেতে পছন্দসই পোশাক পাওয়া না গেলে ইন্ডিভিজুয়্যাল শো রুমগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে পছন্দের পোশাকের জন্য।
এদিকে, মার্কেটের বাইরে শিশুদের নজর কাড়তে বিদেশি খেলনা নিয়ে পসরা বসিয়েছে ভাসমান ব্যবসায়ীরা। পোশাকে চাকচিক্য চায় তরুণীরা। তৃতীয় প্রজন্মের এসব টিনেজরা রঙের সঙ্গে কাজের যেমন মিল খোঁজে তেমনি ওসব পোশাক পরিধানেও নানা অর্নামেন্টসের প্রতি উদগ্রিব থাকে। এর পেছনে কাজ করছে নিজেদের সাজিয়ে তোলার প্রয়াস। কথায় আছে ছেলেরা সুন্দর। তাই তাদেরকে সাজতে হয় না। কিন্তু মেয়েদেরকে সুন্দরী সাজাতে প্রয়োজন পোশাকের পাশাপাশি নানা হারবাল প্রক্রিয়ার ছোঁয়া।
প্রতিবছরই ঈদে নতুন চমক নিয়ে হাল ফ্যাশনের ডিজাইনের পোশাক নামে ভারতীয় ছবি ও আইটেম গার্লদের নামকে কেন্দ্র করে। আর বাঙালি পরিবারের মেয়েরা ঝুঁকে পড়ে এসব নামের উপর ভিত্তি করে পোশাকের খোঁজে। সেই ফাঁকে অসাধু ব্যবসায়ী ও ডিজাইনাররা নাম বিকিকিনির মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থান চাঙ্গা করে নেয়। মূলত দেশিয় সাজে, দেশিয় তৈরি পোশাকের প্রতি সচেতন নাগরিকদের নানা বুলি শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যায় বিভিন্ন শোরুমের ডিসপ্লেতে সাজানো পোশাকের ভিড়ে।

তরুণ সমাজের মধ্যে এবার টি শার্ট, পলো টি শার্ট, ক্যাজুয়্যাল টি শার্ট, ফরমাল টি শার্ট, ফতুয়া ও পাঞ্জাবি কমন আইটেমে পরিণত হয়েছে। তবে পাঞ্জাবির সঙ্গে তরুণরা এখন ওড়না ব্যবহারের যে ফ্যাশন তুলে ধরেছে তাতে শিশুরাও পাঞ্জাবির সঙ্গে তাদের চাহিদা মেটাতে অভিভাবকদের নজরে দিয়ে বিচরণ করছে মার্কেটগুলোতে। নগরীর বিভিন্ন শপিং মলগুলোর মধ্যে আমিন সেন্টার, আখতারুজ্জামান সেন্টার, চিটাগাং শপিং সেন্টার ছাড়াও একক শো রুমের মধ্যে ক্যাটস আই, সৃষ্টি, অঞ্জনস, সালসাবিলসহ নামিদামি বেশকিছু ডিসপ্লেতে এবার তরুণদের জন্য ভাল কালেকশন রেখেছে। আড়ংয়ের ফতুয়া ও পাঞ্জাবি কালেকশনে তরুণদের অবস্থান এক ধাপ এগিয়ে।

মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রে রঙের যেমন ছোয়া থাকতে হবে বর্তমান ফ্যাশনের আলোকে তেমনি ডিজাইন ও কাটিংয়ে বৈচিত্রপূর্ণ না হলে পোশাকের আগ্রহ কমে যায়। এমব্রয়ডারি ব্লক, চুমকিসহ বিভ্ন্নি মোটিভে পোশাক তৈরির ছোঁয়া ধরে রাখতে কারিগররাও টিনেজদের টার্গেট করেই পোশাক তৈরিতে সারা বছর ব্যস্ত সময় কাটিয়ে তৈরি পোশাকের সমাহারগুলো তুলে ধরে ডিসপ্লের মাধ্যমে। পোশাকে কটন, সিল্ক, মসলিন, লিলেন কটন, এন্ডি সিল্ক ও এন্ডি কটন কাপড়ে এবারের তরুণীদের আকর্ষণ কাড়তে ডিজাইনাররা তৈরি করেছে হরেক রকমের ফ্যাশনেবল পোশাক। কাটিং ও ডিজাইনে এসেছে নতুনত্ব। কিন্তু বুটিকস হাউসগুলো ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠলেও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আগের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে গেছে বলে চট্টগ্রামে ক্রেতা সাধারণের অভিমত। কটন, সিল্ক, হাফ সিল্ক, মসলিন কাপড়ে হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, মেশিন এমব্রয়ডারি ও ব্লক প্রিন্টের শাড়িতে গৃহিণীদের মাতোয়ারা করতে বিক্রেতাদের টার্গেট থাকবে চাঁদ রাত পর্যন্ত। এদিকে, স্যালোয়ার কামিজের অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে দামিদামি দর্জিরা।

চট্টগ্রামে প্রায় আড়াই শ’য়ের কাছাকাছি শপিং মল ও মার্কেট ইতোমধ্যে জমে উঠেছে। তবে তা ইফতারের পর। এরমধ্যে এ বছর আবার ইন্ডিভিজুয়্যাল শো রুমের সংখ্যাও বেড়ে গেছে ঈদকে কেন্দ্র করে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে এসবও জমে উঠবে রমরমা। নগরীর সবচেয়ে বেশি একক শো রুম দেখা যাচ্ছে চক বাজার, জিইসি ও আগ্রাবাদ কেন্দ্রিক ব্যস্ততম পয়েন্টে। পাশাপাশি বুটিকস হাউসগুলো পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে পোশাকের ¯তূপে আর ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট। ফ্যাশনের পাল্লা ভারী করতে আড়ংয়ের মত ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে তৈরি হাতের নকশী কালেকশনেও টিনেজদের পিছুটান নেই। এদিকে, বিভিন্ন ক্রেতারা নগরীর পাইকারি বাজার ও খুচরা বাজারের তুলনা করতে গিয়ে ঈদের পোশাকের দাম অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি বলে দাবি করেছেন। কিন্তু বিক্রেতারা বলছেন ফ্যাশনের কথা চিন্তা করতে গিয়ে কস্টিং বেড়ে গেছে। তাই দাম তুলনামূলকভাবে ততটা নাগালের বাইরে নয়।













