মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
ঈদে রেলের ই-টিকেটিং সিডিউর নিয়ে বিভ্রান্তী দেখা দিয়েছে। অনলাইনের এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য ফেসবুক পেইজে ভাইরাল হয়েছে গত প্রায় ৫দিন আগে। ওই সিডিউলে লেখা রয়েছে ২৭ এপ্রিল বিক্রি হবে ২৩ এপ্রিলে যাত্রার অগ্রিম টিকেট। এভাবে আগামী ১ মে পর্যন্ত বিভ্রান্তিমূলক ই-টিকেটিং সিডিউল প্রকাশ পেয়েছে। রেলমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের প্রায় ১০দিন আগে অগ্রীম টিকেট বিক্রির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। তবে ঈদের অগ্রিম টিকেট বিক্রির ৫ দিনব্যাপী এ কার্যক্রমে শতভাগ টিকেট স্টেশন কাউন্টার বা অনলাইন থেকে বিক্রি হবেনা। অগ্রীম টিকেট বিক্রি মোবাইলে ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি হওয়ায় যাত্রীরাও খুশি। তবে ১০ ভাগ সংরক্ষিত থাকবে মন্ত্রী, এমপি, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী ও ভিআইপি কোটার যাত্রীদের জন্য।
এদিকে, টিকেট কালোবাজারী রোধে ভোটার আইডি নম্বরসহ টিকেটে যাত্রীর নাম. বয়স ও জেন্ডার উল্ল্যেখসহ ৫ দিন আগে টিকিট বিক্রির কার্যক্রমে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের ৮টি এবং চট্টগ্রাম সিলেট রুটের ২টি ও চাঁদপুর রুটের একটি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রি কার্যক্রম। এবার চট্টগ্রাম থেকে ৩টি রুটে ছেড়ে যাওয়া মোট ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনের জন্য প্রতিদিনের আসনসহ টিকেট বরাদ্দ প্রায় ৫ হাজার। ৫ দিনের অগ্রীম টিকেট বিক্রির এ কার্যক্রমে প্রায় ২৫ হাজার টিকেটের মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার টিকেট সংরক্ষিত থেকে যাবে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম স্টেশনের আশপাশ এলাকায় থাকা মার্কেটগুলোতে কর্মরত কর্মচারীদের একটি সিন্ডিকেট প্রতিনিয়ত চট্টগ্রাম স্টেশনে টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এসব কালোবাজারিদের ধরতে কর্মাশিয়াল বিভাগের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নিলেও ভেস্তে যাবে কাউন্টারে থাকা অসাধু চক্রের কারণে। এদিকে, চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে কর্তব্যরত বুকিং ক্লার্কদের দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান এ কালোবাজারি সিন্ডিকেটকে সক্রিয় করে রেখেছে। সরকারি নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী একই পদে বা অবস্থানে তিন বছরের অধিক সময় না থাকার বিধান থাকলেও বুকিং ক্লার্করা ৫ বছরের অধিক সময় একই জায়গায় কর্মরত রয়েছেন। ফলে টিকেট কালোবাজারি সিন্ডিকেট সক্রিয় হচ্ছে অনেকটা তাদের মাধ্যমে।
আরও অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে ঈদ উপলক্ষে ছেড়ে যাওয়া ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির কার্যক্রমে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টিকেট বিক্রির সিডিউল ঠিক করা হয়েছে। প্রতিদিন ৫ হাজার টিকেট কার্যক্রমে ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনের ৫ দিনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির কার্যক্রমে আসনসহ প্রায় ২৫ হাজার টিকেট বিক্রি করার কথা কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে টিকেট কাউন্টারে ও ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি হবে ৯০ ভাগ। বাকি ১০ ভাগ ভিআইপি ও অন্যান্য কোটার জন্য বরাদ্দ থাকবে। এসব সংরক্ষিত টিকেট কাদের কাছে বিক্রি করা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এছাড়া যাত্রার দিনে প্রতিটি ট্রেনেই ৩ গুন স্ট্যান্ডিং যাত্রী থাকবে বলে স্টেশন কাউন্টার সূত্রে জানা গেছে। এতে আসনে বসা যাত্রীদের ভোগান্তী দাড়িয়ে থাকাদের চেয়েও খারাপ হবে।

চট্টগ্রাম স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের নির্দেশে এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে অগ্রিম টিকেট বিক্রির সময়সীমা ৫ দিনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে যাত্রার ৫ দিন আগে অর্থাৎ ২৩ এপ্রিল যাত্রার টিকেট বিক্রির কার্যক্রম শুরু হবে। এই কার্যক্রমে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে চট্টগ্রাম স্টেশন কাউন্টার, ই-টিকেটিং ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসব টিকেট বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রেল মন্ত্রনালয় থেকে দেশব্যাপী ৪৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট একইভাবে বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্টেশনগুলোকে।

আগামী ২৩ এপ্রিল বিক্রি হবে ২৭ এপ্রিল যাত্রার টিকেট, ২৪ এপ্রিল বিক্রি হবে ২৮ এপ্রিল যাত্রার টিকেট, ২৫ এপ্রিল বিক্রি হবে ২৯ এপ্রিল যাত্রার টিকেট, ২৬ এপ্রিল বিক্রি হবে ৩০ এপ্রিল যাত্রার টিকেট, ২৭ এপ্রিল বিক্রি হবে ০১মে যাত্রার টিকেট। যদি আগামী ১মে সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখা না যায় তাহলে ঐদিন সন্ধ্যার পর থেকে ২মে তারিখের টিকেট পাওয়া যাবে কাউন্টারে। অগ্রিম টিকেট বিক্রির এ কার্যক্রমে কোন ধরনের রিটার্ন বা ফরোয়ার্ড টিকেট করা যাবে না। ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রিম টিকেট বিক্রি কার্যক্রম সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাউন্টারে টিকেট থাকা শর্তে বিক্রির কথা রয়েছে। কিন্তু টিকেট বিক্রি শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাতেও বিক্রি অব্যাহত থাকবে ছিল।

পূর্বাঞ্চলীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দফতর সূত্রে জানা গেছে, ৫ দিনব্যাপী ঈদ যাত্রার অগ্রিম টিকেট বিক্রির কার্যক্রম শুরু এবং শেষ পর্যন্ত কোন ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ নেই। টিকেট কালোবাজারী রোধে এ বিভাগের পক্ষ থেকে ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনে যাত্রীদের ক্ষেত্রে যাত্রা শর্তের একটি ফরম পূরণের মধ্য দিয়ে টিকেট ক্রয়ের সুযোগ রয়েছে। তবে টিকেট থাকা শর্তে এ ফরম পূরণ কার্যকর করা হয়েছে। কালোবাজারি রোধে এসব শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, এনআইডি নম্বর, টিকেট ক্রেতার নাম ও মোবাইল নম্বর, ভ্রমণকারীর নাম, বয়স ও মোবাইল নম্বর, ক্রয় ও যাত্রার তারিখ, ট্রেনের নাম, আসন সংখ্যা (পুরুষ, মহিলা, শিশু), ক্রেতার সাক্ষর অথবা টিপসইসহ প্রায় ১১টি শর্ত রয়েছে। এছাড়ও কর্মাশিয়াল বিভাগের পক্ষ থেকে ভিজিলেন্স টিমসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কালোবাজারি রোধে কার্যকর থাকবে ।













