২৫ অক্টোবর ২০২৫

ঈদ আনন্দে মলিন গ্রাম

কাউছার আলম, পটিয়া »

ঈদের সময় ফাঁকা হয়ে যায় শহর আর প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে গ্রামগুলো। সেখানে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে ঈদ আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। দীর্ঘদিন পর এ সময়টাতেই খুঁজে পাওয়া যায় ছোটবেলার সঙ্গীদের। সে মুহূর্ত কি যে আনন্দের! এখনো ঈদে গ্রামের মানুষের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন মনে করিয়ে দেয় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের সেই বিখ্যাত গান- ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’। কিন্তু এবারের ঈদটাই ঠিক বিপরীত! সবখানেই সুনসান নীরবতা, নেই কোথাও কোন কোলাহল। কেউ করো বাসা বাড়িতে যাওয়া আসা হতেও বিরত থাকছে।

আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে একসঙ্গে ঈদ কাটানোর উদ্দেশে শহুরে ব্যস্ততা ঘেরা পরিবেশ ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ছুটে আসতোস মানুষজন। ঈদের আগের রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় শিশুদের ঈদআনন্দ। নারীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েন হরেক রকমের রান্নাবান্না আর পিঠা তৈরিতে। ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে ঈদগাহে লোকজন ছোটবেলার সঙ্গী, মুরুব্বিদের সঙ্গে কোলাকুলি করেন। বাড়ি ফিরেই পরিবারের সঙ্গে মাতেন ঈদআনন্দে।

বিকেলে বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে যান অনেকে। গ্রামে পাড়া-প্রতিবেশীর সে আন্তরিকতা, মমতা ও ভালোবাসা শহরে কি আর খুঁজে পাওয়া যায়! আবহমানকালের সেই সামাজিক বন্ধন এখনো টিকে আছে কিছুটা। নারীরাও সন্তানদের নিয়ে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি ঘুরে বেড়ান।

এবারের নিরানন্দ ঈদে নেই তার ছিটেফোঁটাও। যে যার স্হানে থেকেই ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে যাচ্ছে মুঠোফোনে। নেই কোন কোলাকুলি কিংবা হাত মিলানো।

ঈদের সময় বন্ধুবান্ধব ও পরিবার-পরিজন মিলে অনেকে পর্যটনকেন্দ্রে বেড়াতে যান। আনন্দঘন পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য দেশে অনেক পর্যটন স্পট রয়েছে, যা সহজেই মানুষকে আকৃষ্ট করে। ঈদের ছুটিতে এসব এলাকায় ছুটে যান অনেকেই। সেই বিনোদন কেন্দ্র গুলো পর্যন্ত খাঁ খাঁ রোদ্দুর।

ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন হেলাল উদ্দিন গত কোরবানির ঈদে গ্রামে গেলেও এবারেন ঈদুল ফিতরের সময় বাড়ি ফিরেননি তিনি। আরো বলেন, গ্রামের ঈদ মানেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। মানুষের সঙ্গে আন্তরিকতা বাড়ানোর সুযোগ। গ্রামে ঈদ করার সত্যিই কোনো তুলনা নেই। কিন্তু এবারই প্রথম আমার জীবনের মতো আরো অনেকের জীবনে পরিবার পরিজনদের ছেড়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমন এড়ানোর জন্য ঢাকায় ঈদ করা।

এমনিতেই গ্রামের অনেকেই কর্মসূত্রে দেশ-বিদেশে থাকেন। শুধু ঈদের সময় ফিরে আসেন আপন নীড়ে। ছুটি শেষ হলে ফিরে যেতে হয় কর্মক্ষেত্রে। ধীরে ধীরে আবার নিস্তেজ হয়ে পড়ে গ্রামগুলো। কিন্তু এবারের ঈদে তাদের ও ফেরা হলোনা আপন নীড়ে। বিশ্ব ব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারীর কারনে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর গুলো বন্ধ থাকার ফলে। তারাও সেখানে কাটিয়েছে নিরানন্দ ঈদ। এমনকি ঈদের নামাজ পর্যন্ত ও পড়তে পারেনি মসজিদে। যে যার বাসায় পড়েছে ঈদের নামাজ। দিনবর কারফিউ জারির কারনে কেউ বাসা হতে বেরও হতে পারেনি। এমটি জানিয়েছেন মুঠোফোনে সৌদিআরব প্রবাসী হাজী আরিফুর রহমান, নাসির উদ্দীন সহ আরো অনেকে।

গৃহিনী নারগিস আকতার বলেন, জীবনের এ প্রথম ঈদ গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়নি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বন্দী ঘরে সাদামাটা ঈদ উদযাপন করছি। আর বাচ্চাদের কে পুরানো কাপড় পড়ে ঈদের কষ্টটা আরো বাড়িয়ে তুলল। তারপরও আমি মনে করি করোনা ভাইরাস হতে বাঁচতে এরচেয়ে আরো কোন কঠিন পরিস্থিতির সন্মুখীন হতে হলেও মেনে চলতে সকলকে মানসিক ভাবে দৃঢ় থাকতে হবে। তাহলেই ভয়কে জয় করা সহজ হবে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন