২৯ অক্টোবর ২০২৫

উখিয়ায় আগুনে পুড়লো হাজারো রোহিঙ্গার বসতি

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফের ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গভীর রাতে কুতুপালং ৫ নম্বর ক্যাম্পের এ ব্লকের সাব ব্লক এ/৮-এ লাগা আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় হাজারো রোহিঙ্গা বসতি।

শনিবার (৬ জানুয়ারি) দিনগত রাত ১টার দিকে এই আগুনের ঘটনা ঘটে এবং রাত তিনটা পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। প্রায় দু’ঘণ্টার প্রচেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল বাহিনী, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয়রা। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিঃস্ব হলেও, হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

অগ্নিকান্ড ঘটা ৫ নম্বর ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ হামিদ হোসাইন বলেন, শনিবার দিনগত রাত ১টার দিকে হঠাৎ আগুনের লেলিহান দেখে আমরা সবাই ঘর থেকে বের হয়। কারা আগুন লাগিয়েছে সেটা জানিনা, এর আগেও ক্যাম্পে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আগুনে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ হাজারের অধিক ঘর পুড়ে গেছে। পুড়েগেছে মসজদি, মাদ্রাসা, স্কুলসহ এনজিও সংস্থার বিভিন্ন অফিস। ক্ষতিগ্রস্তরা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোহাম্মদ ইকবাল জানান, কুতুপালং ৫ নম্বর ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে এপিবিএনের টিম ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট কাজে যোগ দেয়। প্রায় ২ঘণ্টার প্রচেষ্টায় রাত ৩টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। কে বা কারা আগুন দিয়েছে অথবা আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। বিস্তারিত জানার প্রচেষ্টা চলছে।

উখিয়া ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন ম্যানেজার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় রোহিঙ্গাদের এক হাজার ৪০ বসতি ভস্মিভূত হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হওয়ায় বড় ধরণের ক্ষতি হতে রক্ষা পায় ক্যাম্পটি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আরো দেরি হলে, পুরো ক্যাম্পে আরো ভয়ানক পরিণতি হতো।

শীত থেকে মুক্তি পেতে পোহানো আগুনের সূত্র থেকে অসাবধানতাবশত ঝুপড়ি বসতিতে আগুন লেগে বাতাসের গতিতে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে বলে ধারণা এ দমকল বাহিনী কর্মকর্তার।

তবে হোয়াটসঅ্যাপে প্রেরিত একটি ভিডিওতে বলতে শোনা গেছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনী ‘আরসার সদস্যরা’ এই আগুন ধরিয়ে দিয়ে ক্যাম্পে অরাজকতা সৃষ্টি করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা ক্যাম্পে মানুষ হত্যার পাশাপাশি এখন আগুন দিয়ে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

রোহিঙ্গা নেতা হামিদ উল্লাহ বলেন, রাত ১টার দিকে আরসা সন্ত্রাসীরা ৫ নম্বর ক্যাম্পে প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে। রাত তিনটা পর্যন্ত জ¦লা আগুনে হাজারের অধিক ঘর পুড়ে গেছে।

এদিকে, আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। তাদের নিজস্ব টুইট বার্তায় আটশতাধিক রোহিঙ্গা পরিবার অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ চলছে বলেও উল্লেখ করে সংস্থাটি।

উল্লেখ্য, এ ক্যাম্পে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর একইভাবে আরও একটি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪০-৫০টি রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরো অন্তত অর্ধশতাধিক ঘর। এর আগে ২০২৩ সালের ৫ মার্চ একই ক্যাম্পের অন্য একটি বøকে আগুন দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। ওই অগ্নিকান্ডে পুড়ে যায় দুই হাজার ২০০ ঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ তিনটি ক্যাম্পে এক সঙ্গে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ঘটনা ঘটে। এতে ১১ জন নিহত ও ৫ শতাধিক আহত হন। পুড়ে গেছিল ৯ হাজারের বেশি ঘর।

আরও পড়ুন