২৮ অক্টোবর ২০২৫

উখিয়ায় ১৫০ শয্যার বিশেষায়িত করোনা হাসপাতাল উদ্বোধন

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

বিশ্ব মহামারি করোনার প্রাদূর্ভাব কক্সবাজারে ক্রমে বাড়ছে। ছড়িয়ে পড়ছে মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও। গত ৫দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ রোহিঙ্গা। ইতোমধ্যে করোনা পজিটিভ এসেছে স্থানীয় টেকনাফের ৯ জন, উখিয়ার ৩২ জনের । করোনা আক্রান্ত উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে উখিয়ায় ১৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার ও বিশেষায়িত হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ মে) দুপুরে উখিয়ায় ইউএনএইচসিআর, ব্র্যাক ও রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে স্থাপিত হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।

এসময় জেলা প্রশাসক বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গা মানবিক আশ্রয়ে রয়েছেন। কক্সবাজারের স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি আশ্রিত রোহিঙ্গাদের করোনার প্রভাব থেকে বাঁচাতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। উপজেলা ভিত্তিক আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। ১৫০ শয্যা বিশিষ্ট বিশেষায়িত এ হাসপাতালটির মাধ্যমে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের সেবা প্রাপ্তি অনেকটা নিশ্চিত হবে। চিকিৎসার আশায় থাকার পরিবর্তে করোনা সংক্রমণ থেকে আত্মরক্ষায় সবাইকে আরো সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

উখিয়া ডিগ্রি কলেজের একটু দক্ষিণ পার্শ্বে প্রায় ৩একর জমির উপর কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের সামান্য ভিতরে এই কোভিড হাসপাতালটি তৈরী করা হয়েছে। সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে, স্বাস্থ্য বিধি মেনে হাসপাতালটির কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশন (ইউএনএইচসিআর) এর অর্থায়নে এই বৃহৎ আকারের আধুনিক করোনা আইসোলেশন হাসপাতালটি গত ৩০ মার্চ নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল।

এসময় হাসপাতালটিতে অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান ইউএনএইচসিআর-এর কক্সবাজার অফিসের হেড অব অপারেশন ইনাকু টুকি, কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, আরআরআরসি অফিসের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, উখিয়ার ইউএনও মো. নিকারুজ্জামান, ওসি মর্জিনা আকতার মর্জু, উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রঞ্জন বড়ুয়া রাজন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি, রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল এর প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ১৯ মে ১৫০ জনের মেডিকেল টিম কক্সবাজার এসে পৌঁছে। তাদেরকে হাসপাতালটি ২০মে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা এখন হাসপাতালে ট্রায়াল ব্যবস্থাপনা কাজ করছেন। প্রতিদিন ৩ শিফটে ৫০ জন করে চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, মিডওয়াইফ, ক্লিনার, আয়াসহ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড হাসপাতালটিতে ডিউটি করবেন। ১৫০ জনের মেডিকেল টিম ও সংশ্লিষ্ট আরো ১৫জনসহ মোট ১৬৫ জনের থাকার জন্য আবাসিক ব্যবস্থা হিসাবে উখিয়ার ইনানীতে একটি বড় হোটেল ভাড়া করা হয়েছে। ২টি বাস ও ২টি আধুনিক মডেলের মাইক্রোবাস তাদের যাতায়াতের জন্য রাখা হয়েছে। আবার তাদের ব্রেকফাস্টসহ ৩ বেলা উন্নতমানের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসম্মত খাবার, ২ বেলা নাস্তা সরবরাহের জন্য অপর একটি রেস্টুরেন্টের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। মূলত, হাসপাতালে ১৫০ বেডের উল্লেখ হলেও ২০০ বেডের চিকিৎসা সেবার ফ্যাসিলিটি থাকবে।

সূত্র আরো জানায়, উখিয়ার কোভিড হাসপাতালটিতে সবসময় ৩টি এ্যাম্বুলেন্স উপস্থিত থাকবে। ২টি এম্বুলেন্স আভ্যন্তরীণ রোগী আনা নেওয়া এবং অপর এম্বুল্যান্সটি চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দুরে কোথাও রোগী রেফার করা হলে সেখানে যাতায়ত করবে।

উখিয়ার ইউএনও নিকারুজ্জামান বলেন, ১৫০ শয্যার এ কোভিড হাসপাতালটি রোহিঙ্গা শরনার্থী ও স্থানীয়দের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের অভ্যন্তরে প্রায় সাড়ে ১১লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থীর জন্য ১১টি পৃথক পয়েন্টে নির্মিত হচ্ছে ১৯শ’ বেডের কোভিড আইসোলেশন হাসপাতাল। তারমধ্যে ৮০০ বেডের হাসপাতালের নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট আইসোলেশন হাসপাতাল গুলোর নির্মাণ কাজও আগামী ১০জুনের মধ্যে শেষ হবে।

ইউএনও আরো জানান, আজ (২১ মে) যেসব রোগীর স্যাম্পল টেস্টের রিপোর্ট ২২ মে ‘পজেটিভ’ আসবে শুধু সেসব রোগীদের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় ইউএনএইচসিআর এ করোনা সংক্রমণকালীন সময়ে কোভিড হাসপাতালটি নির্মাণ করেছে। এ হাসপাতালটি চালু হওয়ায় কক্সবাজারের রামু ও চকরিয়ার ২টি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের উপর চাপ কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে করেন তিনি।

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা (আরআরআরসি) মাহবুব আলম তালুকদার জানান, করোনা আক্রান্ত কোন রোগী স্বাস্থ্য বিভাগ রেফার করলেই কেবল উখিয়া কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হবে। অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত হাসপাতালটির সকল চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ, স্বাস্থ্য কর্মী, এ্যাম্বুলেন্স, খাদ্যসহ মাসিক সকল ব্যয়ভার ইউএনএইচসিআর কর্তৃপক্ষ বহন করবেন। এ হাসপাতালে আপাতত শুধুমাত্র করোনা ভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে। কক্সবাজারে এটি প্রথম পরিপূর্ণ একটি করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন