২৯ অক্টোবর ২০২৫

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় শহর ছাড়ছে নগরবাসী

তারেক মাহমুদ »

করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম। বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংবাদগুলো আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে জনমনে। চারদিকে বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এই ভাইরাস প্রতিরোধে এখনো আবিষ্কার হয় নি কোন প্রতিষেধক। করোনা প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে লকডাউনের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। চলাফেরা করতে গিয়ে কে কখন, কিভাবে আক্রান্ত হবেন এ আতঙ্কে শহর ছাড়ছেন নগরবাসী। এরই মধ্যে ফাঁকা হতে শুরু করেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম।

নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকেই নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। চট্টগ্রামে যাদের স্থায়ী বাস তারাও প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। কেউ কেউ আবার স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। আবার কেউ বাড়িতে অবস্থান করেই অফিসের কাজ সারছেন। যাত্রী সংকটের কারণে রাস্তায় নামছেনা অধিকাংশ গণপরিবহন। এতে চিরচেনা নগরীর রাস্তাঘাটগুলো যেন দিন দিন অচেনা রুপে আবির্ভূত হচ্ছে।

নগরীর প্রধান সড়কগুলো ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ কর্মব্যস্ত দিনের তুলনায় গত ক’দিন ধরেই রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। যান চলাচলও কম। ঘরমুখো মানুষেরা ভীড় জমাচ্ছেন নগরীর বিভিন্ন বাস কাউন্টার ও রেল স্টেশনে।

যাত্রীদের ভিড় নিয়ে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জানান, সকলেই বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়াবহতা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। প্রায় ১০ দিন টানা ছুটি পাওয়ায় কর্মজীবী মানুষেরা পরিবার-টরিজন নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন স্ব স্ব গন্তব্যে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাওয়া মেইল ট্রেনগুলোতে ভীড় তুলনামূলকভাবে বেশি চোখে পড়েছে।

দামপাড়ায় হানিফ পরিবহনের এক কর্মকর্তা বাংলাধারাকে বলেন, সকাল থেকে দূরপাল্লার বাসগুলোতে বেশ ভিড় ছিল। করোনা আতঙ্কে অনেকেই পরিবার পরিজনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠাচ্ছেন। একেখানের সকল বাস কাউন্টারগুলোতেও সকালে দূরপাল্লার বাসগুলোতে যাত্রীদের ভিড় ছিল বলে জানান তিনি। গতকাল সরকারীভাবে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করার পর থেকেই ভীড় বেড়ে গেছে।

এস আলম পরিবহনের চালক আল আমীন বলেন, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে যাত্রীসংখ্যা বেড়ে গেছে। সবাই ছুটছেন গ্রামের দিকে। আমরাও চেষ্টা করছি নিরাপদে সবাইকে যার যার গন্তব্যে পৌছে দিতে।

বেল্লাল আকন নামে এক যাত্রী বাংলাধারাকে জানান, আমি আগ্রাবাদ থেকে ওয়াসা এসেছি। রাস্তায় যানজট ছিল না, গাড়ির সংখ্যা ছিল খুবই কম। তবে সারাদেশে করোনায় কয়েকজনের মৃত্যুর কথা শুনতে পেয়ে খুব আতঙ্কিত হয়ে গেছি। তাই গ্রামে চলে যাচ্ছি স্বজনদের কাছে।

করোনা আতঙ্কের মধ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং সেন্টারসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করায় শহর ছাড়ছেন নগরবাসী। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সড়কে প্রাইভেট কার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাসসহ শিক্ষার্থী বহনকারী অন্য যান চলছে না। অনেকেই ঘরের বাইরে না যাওয়ায় গণপরিবহনে সাধারণ যাত্রীও বেশ কমে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে এবং জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলো এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গ্রামীণফোন ইতোমধ্যে তাদের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ঘরে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অফিসের কাজ করতে। এমনকি ব্যক্তিমালিকানাধীন অনেক প্রতিষ্ঠানও তাদের কর্মচারীদের ছুটি দিয়েছে। নগরীর স্টেডিয়ামগুলোতে খেলাধুলা বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে আগেই। সিনেমা হলও বন্ধ। অসুস্থ থাকলে মসজিদেও না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে নগরীর শপিং মল ও মার্কেটগুলোয়ও সাধারণ সময়ের তুলনায় ক্রেতার উপস্থিতি কম। ভিড় নেই শহরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোয়ও।

আতঙ্কের কারণে নগরীর রেস্টুরেন্টগুলোতেও যাচ্ছে না ভোজনরসিকরা। বলা যায়, এক প্রকার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে নগরীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট। এরই মধ্যে নগরীর রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন প্রকাশ্য জনসমাবেশ বাতিল করেছে। করোনা আতঙ্কে বন্ধ হয়েছে পর্যটন স্পটগুলোও।

এছাড়া দেশের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বিমানের অধিকাংশ ফ্লাইটই বাতিল করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের নগরবাসীরাও করোনা আতঙ্কে ভুগছে। তাই তাদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। এ নিয়ে অচেনা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে মোট চারজনের মৃত্যু হলো। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩৯ জনে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন