ফাহিম আল সামাদ»
উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার। আগ্রাবাদের বাদামতলীতে রাস্তার পাশের নালায় পড়ে নিহত হন তিনি।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদে নালায় পড়ে যান আন্তজার্তিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ১ম বর্ষের ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া (২০)। ফায়ার সার্ভিসের ৫ ঘন্টা অভিযানের পর রাত ৩টায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে জানাযা শেষে নগরীর বড়পোল এলাকায় তাকে দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার নানা ও মামার সাথে আগ্রাবাদের বাদামতলীর সুলতান মার্কেটে এক চোখের ডাক্তারের চেম্বারে যান সাদিয়া। সেখান থেকে রাত ১০টার দিকে বাসায় ফেরার পথে মাজারগেটের সামনে প্রাইম ব্যাংকের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি বড় খোলা নালায় পড়ে যান তিনি। ঘটনার সাথে সাথে তার মামা মো. জাকির হোসেনও ঝাঁপ দেন, তবে সাদিয়ার কোনো হদিস তিনি পাননি।
সাদিয়ার মামা মো. জাকির হোসেন বাংলাধারাকে বলেন, সন্ধ্যার পর আগ্রাবাদ মোড় থেকে মাজারগেট পর্যন্ত এলাকা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়। কোনো সড়কবাতি নেই এত বড় রাস্তায়। বৃষ্টির কারণের আগে থেকেই রাস্তাটি কিছুটা পিচ্ছিল ছিল, তার সাথে এই ঘুটঘুটে অন্ধকার। অন্ধকারে দেখতে না পেয়েই আমার ভাগ্নি ওই নালায় পড়ে যায়। ১২ ফুট গভীর ওই নালায় ময়লা ছিল অনেক বেশি সাথে স্রোতও তুলনামূলক বেশী। যার ফলে সাথে সাথে ঝাঁপ দিয়েও উদ্ধার করতে পারিনি সাদিয়াকে। পরে ঘটনাস্থলের ৩০ গজ দূর থেকে ফায়ার সার্ভিস তার নিথর দেহ উদ্ধার করে।
নিহতের অশ্রুসিক্ত নানা হাজী জামাল বলেন, ‘মনকে কোনোভাবেই বুঝাতে পারছি না কোনোভাবে। আমার হাত ধরেই ছিল সাদিয়া। হঠাৎ নালায় পড়ে গেল। সঙ্গে আমি ও আমার ছেলে ঝাঁপ দিলাম। কিন্তু পানির স্রোতের জন্য কিছুই করতে পারিনি।‘
জানা গেছে, নগরীর বড়পোলের মইন্যাপাড়া এলাকার প্রবাসী মোহাম্মদ আলী সন্তান শেহেরীন। মোহাম্মদ আলীর দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার বড় সে। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাদিয়া। স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে উদ্যোক্তা হওয়ার। তবে সেই স্বপ্ন এখন কেবল স্বপ্নই রয়ে গেল।
পরিবারের দাবি, একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকলে আজ হয়তো সাদিয়া বেঁচে থাকতো।
সাদিয়ার পরিবার জানায়, শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা আগ্রাবাদে একটি নালা খোলা পড়ে আছে। কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই।
এদিকে, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে ঘটনাটির জন্যে সিডিএর অবহেলাকে দায়ী করলেন চসিক মেয়র মো: রেজাউল করিম।
তিনি জানান, ‘দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। কাজের সময় সবকিছুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থেকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের।‘
তিনি আরও বলেন, ‘নালার পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকলে দুর্ঘটনা ঘটতো না। সিটি করপোরেশনের রেলিং ও স্ল্যাব ছিল নালার ওপরে। সিডিএ কাজ করতে গিয়ে এগুলো নষ্ট করে ফেলছে। কিন্তু পরে তারা আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়নি। সিডিএর কাজের কারণে সমস্ত ময়লা গিয়ে নালায় পড়ছে। তাই নালাও ময়লায় পরিপূর্ণ ছিল। অবহেলার ও অসতর্কতার জন্য এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে।‘
যেসব সংস্থা উন্নয়ন কাজ করছে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও জানান চসিক মেয়র।
বাংলাধারা/এফএস/এফএস













