বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যাহত করার অভিযোগে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (সাময়িক অব্যহতি পাওয়া) উপাচার্য অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অপপ্রচার, আর্থিক ক্ষতি সাধন, ইচ্ছা মতো নিয়োগ, অনুগত ও পছন্দের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধিসহ নির্দিষ্ট ১৪টি অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে কর্মরত ১৭৬ জনের যৌথ স্বাক্ষরের ভিত্তিতে উপাচার্য অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হককে ক্যাম্পাস থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন অনিয়মে অভিযুক্ত উপাচার্য মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে কোনো সদুত্তর না দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। তিনি বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সেক্টরে নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে গেছেন। এ কাজে সহযোগী বেশ কিছু অনুগতদের তিনি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বারবার বৈষম্যমূলক আচরণ করেছেন। আর তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যের স্বীকার শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা তাঁকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায় , আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০ সালে উপাচার্য পদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা পূরণ করতে না পারায় অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের বিকল্প প্যানেল প্রস্তাবের নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রনালয়। তবে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ চার বছরের জন্য সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য হিসেবে তাকে নিয়োগ দেন।
সূত্রের দাবি, তাঁর এ নিয়োগে সুপারিশ ছিল আওয়ামী লীগ সরকারে বেশ কিছু হেভিওয়েট মন্ত্রীর। ক্ষমতা ব্যবহার করেই সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি পক্ষের হয়ে কুক্ষিগত করাই ছিল অধ্যাপক মোজাম্মেল হকের লক্ষ্য। এ সকল অনিয়ম এবং এর কারণ জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভায় তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দেন নি তিনি। উল্টো পরবর্তী সময় বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠান।
প্রফেসর মোজাম্মেল হক এভাবে আইন না মেনে একের পর এক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নস্যাৎ করার চেষ্টা রুখতে ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্তে অধ্যাপক মোজাম্মেল হককে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাঁর স্থলে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয় কোষাধ্যক্ষ ড. শরীফ আশরাফউজ্জামানকে।
তবে এর পরপরই বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে অপপ্রচার শুরু করেন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। যা দৃষ্টিগোচর হলে তাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরতরা।
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে মোজাম্মেল হক দাবি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অসাধু চক্র শিক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে জাল সনদ প্রদানসহ বেশ কিছু আর্থিক অনিয়মের সাথে যুক্ত।
অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাময়িক অব্যহতি পাওয়া উপাচার্য তাঁর বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জাল সনদের বিষয়ে তিনি জানান, বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জাল সনদ পাওয়া গেলেও এদের শনাক্তে আইনের আশ্রয় নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যরা যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়াই তার এই দাবির মূল কারণ। তবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব প্রফেসর সারওয়ার জাহান জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে জাল সনদ কাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধ্বে আদালতে মামলা চলমান,বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছে। এছাড়াও জড়িত দুই ব্যক্তি এখনো কারাগারে রয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে উপাচার্য-ট্রাস্টি বোর্ডের এমন দ্বন্দে বিচলিত শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, এ ঘটনায় বলির পাঁঠা হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। দুই পক্ষের দ্বন্দে নিজ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি এভাবে ক্ষুণ্ন হলে শিক্ষাজীবন শেষে মেধার যথার্থ মূল্যায়ন পেতে প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা করছেন তারা।
‘উন্নয়নের জন্য শিক্ষা’ স্লোগানে ২০০৩ সালে চট্টগ্রামে যাত্রা শুরু করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি’র মূল লক্ষ্য ছিল উচ্চতর শিক্ষাকে সহজতর করা।













