মুজতবা সউদ »
আগামীকাল ২৯ আগস্ট। ১৯৭৬ সালের এই দিনে প্রয়াত হন আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা সনে দিনটি ছিল ১২ ভাদ্র (১৩৮৩)। ৩০ আগস্ট, ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আজাদ, দৈনিক বাংলা, The Observer, The Bangladesh Time সহ সকল দৈনিকে সংবাদটি রয়েছে।
২৯ আগস্ট বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর প্রয়ানে একটি দৈনিকের টেলিগ্রাম প্রকাশিত হয়েছিলো। স্বৈরশাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলা সালের আধুনিকায়নের নামে তারিখের রদবদল করেন। উদ্দেশ্য বিভেদ সৃষ্টি। যাতে লোকনাথ পঞ্জিকা ও চিরায়ত বাংলা সালের রীতিতে বিভেদ তৈরি হয়। এতে আমাদের পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখ, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন পূজার দিন রদবদল হয়ে যায়। বাংলাদেশে সেটাই হয়েছে।
বাংলা সালের রীতি বা বিধি অনুসারে নির্ধারিত দিনের একদিন বা দুইদিন আগে বাংলাদেশে সানাতন ধর্মের পূজো বা অন্যান্য অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। সেই সাথে বাংলা সংস্কৃতির বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোও এক বা দুইদিন আগে পালিত হয়।
২৫ বৈশাখ, ১১ জৈষ্ঠ্য, ২২ শ্রাবণ পালিত হয় এক বা দুই দিন আগেই। ভারতে বিশেষ করে পশ্চিম বাংলায় যথা নিয়মেই এসব বিশেষ দিন পালিত হয়। পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও তাই। সাংরাই, বিজু ধরনের অনুষ্ঠান রয়েছে সে সব দেশে। যা বাংলাদেশের একদিন বা দুইদিন পর অনুষ্ঠিত হয়। একই ভাবে বাংলাদেশে ১২ ভাদ্র হয়ে গেছে গতকাল। আজ ভারতে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর জন্ম বা মৃত্যু বার্ষিকী নিয়ে এই বিভ্রান্তি কেন? বড়ো আশ্চর্য হই যখন দেখি বাংলাদেশের সাংবাদিকরা লিখছেন বা বলছেন ১৯৭৬ সালের ১২ ভাদ্র। ইংরেজি সাল, বাংলা মাস। কোন কোন সংবাদ মাধ্যমে আবার বলা বা লিখা হচ্ছে ১৯৭৬ সালের ২৭ আগস্ট। একবারও কী ভ্রান্তি দূর করতে বা সঠিক তথ্য যাচাই করতে, তারা ১৯৭৬ সালের ৩০ আগস্ট প্রকাশিত দৈনিক দেখে নিতে পারে না? নাগালের মধ্যেই তো রয়েছে।
পিআইবি, জাতীয় গ্রন্থাগার, বাংলা একাডেমি গন্থাগার সহ দেশের প্রাচীন ও প্রধান প্রধান প্রধান লাইব্রেরিতে পাওয়া যাবে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় তারিখে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য, স্বৈরশাসকরা যে সব কৌশল অবলম্বন করেছে, বাংলা সালের তারিখ বদল তার অন্যতম। এমন কী ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের নাম্বার পরিবর্তন করার জন্য পুরো ধানমন্ডির রাস্তাগুলোর নম্বর পরিবর্তন করেছে তারা। এ দেশের মানুষের হৃদয়ে ৩২ নম্বর চিরকাল থাকবে। তবে ধানমন্ডির অন্যান্য রাস্তাগুলো নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা নতুন নাম্বারে চেনে। এই ধূম্রজাল থেকে বেরিয়ে আসার সময় এখনই।
আমার চোখে যে দৃশ্যটি, ভাসমান সেই দৃশ্যটি ছিল ২৯ আগস্ট। সেদিন আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি, কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের ছেড়ে ‘চিরতরে দূরে চলে’ গেলেন। ছুটে গেছিলাম শেষকৃত্যে। স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের কড়া নাটক আর নজরদারিতে কাছে যেতে পারিনি। দূর থেকেই দেখেছি বিদ্রোহী কবির শেষকৃত্য। তাঁকে ‘মসজিদেরই পাশে’ কবরে নামিয়ে দেয়া হলো। অনেক পরে, তিন মুঠো মাটিও দিতে পেরেছিলাম। এটা আমার পরম সৌভাগ্য বলেই আমি মনে করি। আমি জানি, আমার যে বন্ধুরা সশরীরে সেখানে থাকতে পারেন নি, তাদের হৃদয় সেখানে ছিল।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতীয় কবিকে কোলকাতা থেকে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন। সকল প্রটোকল থেকে বেরিয়ে, পরম শ্রদ্ধা, মমতা আর হৃদয় নিংড়ানো অকৃত্রিম ভালোবাসায় জাতীয় কবিকে ঢাকায় বরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাংলাধারা/এফএস/এআই













