সাদমান সময়, মিরসরাই »
ফটিকছড়িতে ঘুরতে গিয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় অনিরুদ্ধ ইসলাম অভি (২৩) নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। বুধবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যায় ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার নন্দীর স্কুলের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত অভি মিরসরাই পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের মধ্যম মঘাদিয়া পোদ্দার তালুক এলাকার অদুমিয়া চেয়ারম্যান বাড়ির নজরুল ইসলামে একমাত্র পুত্র।
অভির বন্ধু রিয়াজ হৃদয় বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় ৩টি মোটরসাইকেল যোগে মিরসরাই-নারায়নহাট সড়ক দিয়ে ফটিকছড়িতে চা বাগানে ঘুরতে যান অভিসহ পাঁচ বন্ধু। সন্ধ্যায় ভুজপুর নন্দী স্কুলের সামনে দ্রুতগামী একটি মোটরসাইকেলের সাথে সংঘর্ষে অভির মাথা ও পায়ে প্রচণ্ড আঘাত লাগে। মাথায় হেলমেট পরে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিল আজিম। এসময় সে আহত হয়। আজিমের পেছনে অভি উঠেছিল হেলমেটবিহীন। দুর্ঘটনায় সে ছিটকে পড়ে গুরুত্বর আহত হন। আহতবস্থায় উদ্ধার করে অভিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) নিয়ে গেলে রাত ১০টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। অভি সীতাকুণ্ড বিজয়স্বরণী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী।
মা বাবার একমাত্র আদরের সন্তান ছিল অভি। বাবা নজরুল ইসলাম চাকরি করেন সরকারি খাদ্যগুদামে। আদরের একমাত্র সন্তানের অপূর্ণতা রাখেননি কিছুই। ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ করছেন আবার কখনও বা মুর্ছা যাচ্ছেন মা। বাবা বাকরুদ্ধ আদরের ধনকে হারিয়ে। ক্রিকেটপ্রেমী ও ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ছিল অভি। ভ্রমণের নেশায় ঘুরে বেড়াতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। মৃত্যুর দুদিন বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল কুমিল্লা ম্যাজিক প্যারাডাইস ওয়াটার পার্কে। পাড়া মহল্লায় নিজ উপজেলায় পাশ্ববর্তী উপজেলা বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন সবকটিতে।
অভির স্কুলের সহপাঠী চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী তামিম সুরভী জানান, ‘আমি ইন্টার্নিতে ফটিকছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবস্থান করছি। কিছুদিন পর অভি আমার রেসিপি খাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম আসার কথা ছিল। নিয়তি পরিহাসে আসি যেখানে ইন্টার্নি করতে আসলাম সেখানেই সে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে নিয়ে আসা হয় ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বন্ধুকে নিজের হাতে ক্যানুলা করলাম। ভাবিনি এভাবে হারাবো বন্ধুকে।’
সদা হাস্যজ্জ্বল অভি গতকাল বুধবার সকালে বন্ধুদের সাথে টঙ দোকানে বসে পরিকল্পনা করলেন বিকালে ঘুরতে যাবে রামগড় সেলফি রোড। দুপুরে বাড়িতে মা ও একমাত্র বোনের শেষবারের মতো ভাত খেয়ে ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন বাড়ি থেকে। কে জানতো এটাই ছিল শেষ যাত্রা। অভি বাড়ি থেকে বের হয়েছে অনন্ত কালের অসীম যাত্রায়। বাড়ি ফেরা হলো তবে সেটি ছিল অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজিয়ে।
মিরসরাই পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আল ফায়হাত সংগ্রাম দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় কয়েক বন্ধুসহ বেড়াতে গিয়ে আমার খালাতো ভাই অভি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় নিজ বাড়ির প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।’













