শাফায়াত শাহেদ »
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে বর্তমান আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্যোগ এ নভেল করোনাভাইরাস। যার অপর নাম কোভিড-১৯। সারাবিশ্বে মৃত্যুর মিছিল নিয়ে সে এখন আমাদের সোনার বাংলাদেশে। করোনাভাইরাসের দুর্যোগ থেকে জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে বাংলাদেশ সরকার বিগত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা দেন। যা পরবর্তীতে একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বলবৎ রাখা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে সমগ্র অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পরিবহন মাধ্যমসমূহ। রাস্তা-ঘাটে চলাফেরার ওপর জারি করা হয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। উদ্দেশ্য একটাই, জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
কিন্তু এ সুরক্ষা-সংগ্রামে সৃষ্টি হয়েছে আরেকটি দুশ্চিন্তা। খাদ্যাভাব। দেশব্যাপী লকডাউন অবস্থার ফলে আর্থিক অভাবের মাঝে পড়ে গেছেন কর্মহীন নিম্ন থেকে মধ্যম আয়ের পরিবারগুলি। যেখানে সিংহভাগ পরিবারের উপার্জন অক্ষম ব্যক্তি একজনই হয়ে থাকেন সেখানে এ অকস্মাৎ লকডাউন শতকরা ৮০ ভাগ জনগণের জন্য বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই। আর এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন আমাদের সমাজের নিম্ন আয়ের শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। সাথে দেশের সেই বৃহৎ জনগোষ্ঠী; যারা রাস্তাতেই নিজেদের জীবিকার সন্ধান ও জীবন-যাপন করে থাকেন।
এদিকে সমাজের উচ্চবিত্ত তথা ‘কর্পোরেট ফ্যামিলি’ অনেকটা সামাজিক আইসোলেশান বজায় রেখে চলেন বাকিদের থেকে। তাদের অধিকাংশই মুখ বুজে থেকে নিজেদের সুরক্ষা নিয়েই দুশ্চিন্তিত আছেন ঘরের কোনে। তাঁরা যদি তাদের স্বীয় অবস্থান থেকে সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি এই সকল বিপর্যস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতেন, তবে আশা করি পরিবারগুলো দৈনন্দিন খাদ্যাভাব থেকে রক্ষা পেতেন।
আশার কথা হলো, এ দেশে মানবতা আজও জীবিত রয়েছে তরুণ সমাজের হাত ধরে। তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াসের মাধ্যমেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খাদ্যবস্তু বিতরণ চলছে। কিছু আমাদের গোচরে আসে, কিছু রয়ে যায় অগোচরেই। আমাদের উচিত তাদের মানবতা রক্ষাকারী কর্মকাণ্ড সমাজে তুলে ধরা। তবেই হয়তো আরোও আর্থিক সাহায্য আসবে এদের মাধ্যমে এবং পৌঁছাবে তাদের কাছে যাদের সত্যিই দরকার।
ঠিক এমনই একটি সংগঠন হলো ‘সিটিজি বয়েজ ক্লাব’। যা চট্টগ্রাম জেলার সদরঘাট থানাধীন পশ্চিম মাদারবাড়ীস্থ সামাজিক সংগঠন। তারা নিজস্ব ও পরিচিত লোকজনদের থেকে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করে ডবলমুরিং ও সদরঘাট থানার অধীন বিভিন্ন এলাকায় বিপর্যস্ত পরিবারদের তালিকাভুক্ত করে ও সড়কের চলমান শ্রমিকদেরকে চাল-ডাল-আলু-পেঁয়াজের প্যাকেট দিয়ে তাদের এক বেলার অন্ন সংস্থানের মানবিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় গণ-স্বাস্থ্যসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য রঙ দিয়ে রাস্তায়-দোকানে মার্কিং করা, স্যানিটাইজার বিতরণ করা ও বিভিন্নভাবে করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে গণসচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে তারা।
‘সিটিজি বয়েজ ক্লাব’র সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রাজুর সাথে আলাপ করে জানা যায়, তাঁরা বিগত ২৪ মার্চ থেকে লকডাউন পরিস্থিতিতে কি করণীয় তার একটা বিশদ পরিকল্পনা তৈরি করেন। ব্যক্তিগত ও বিভিন্নভাবে ফান্ড সংগ্রহ করে তারা এখন পর্যন্ত মোগলটুলী, মাদারবাড়ী, দেওয়ানহাট, কদমতলী, বাদামতলীসহ বিভিন্ন স্থানে ৩ পর্যায়ে সাহায্য বিতরণ করে এসেছেন। এই কর্মকাণ্ডে দিনমজুর, অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রিকশাচালক ও দরিদ্র পরিবারসমূহ ত্রাণ পেয়ে এসেছেন।
এ লকডাউন পরিস্থিতিতে সংগঠনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান, আমরা আমাদের তরফ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি এই শ্রেণির মানুষদের খাবারের চাহিদা মেটাতে। চেষ্টা করছি এলাকাভিত্তিক খেটেখাওয়া পরিবারদের তালিকা তৈরি করে তাদের দৈনিক দুই বেলার হিসেবে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ বিতরণ করতে। কিন্তু আমাদের ক্ষমতা অতি সীমিত। তাই সমাজের সর্বস্তরের জনগণের কাছে আমাদের আন্তরিক আবেদন আপনারা সবাই আপনাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আপনার নিকটবর্তী দরিদ্র ও নিম্ন শ্রেনীর মানুষদের দৈনিক খাবারের চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করুন। আর যদি আপনারা আমাদের ‘সিটিজি বয়েজ ক্লাব’র মাধ্যমে যে কোনোভাবে এই মহৎ কাজে অংশ নিতে চান, তবে ক্লাবের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
সামাজিক সচেতনতা কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল আলম বলেন, আমরা নিজেদের স্বল্প অর্থায়নে এলাকার বাসাবাড়িতে ও নালা-নর্দমায় জীবাণুনাশক স্প্রে করছি। দোকানপাটগুলোর সামনে সরকারী নির্দেশ মোতাবেক দূরত্ব রেখে গ্রাহক দাঁড়ানোর জন্য সাদা রঙ দিয়ে মার্কিং করেছি। গণসচেতনতা প্রচারের পাশাপাশি স্যানিটাইজার বিতরণ করছি এলাকার বিভিন্ন স্থানে। যদি আমরা সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের থেকে আর্থিক অনুদান পেতাম তবে আমরা আরোও বৃহৎ আকারে ত্রাণ বিতরণ ও সামাজিক সচেতনতার কাজ করতে পারতাম।
এই জাতীয় দুর্যোগে মানবতার ডাকে যদি আপনিও অংশ নিতে চান সিটিজি বয়েজ ক্লাবের এই মহৎ উদ্যোগে, তবে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন : ফেসবুক পেইজ- CTG BOYS CLUB. পেইজ লিংক- facebook.com/groups/289915248017320/ অথবা আপনার অতিগুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সাহায্য খানা পাঠাতে পারেন এই বিকাশ নাম্বারে।
সাহায্য পাঠানোর বিকাশ নাম্বার : ০১৬৭৪-৩৬৭৯১৫
ফয়সাল আহমেদ রাজু
সাধারণ সম্পাদক, সিটিজি বয়েজ ক্লাব, চট্টগ্রাম।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ













