জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার »
ছাত্রলীগ নেতাদের পেটানোর রেশ কাটতে না কাটতে কক্সবাজার সদর আওয়ামী লীগ নেতা বদিউল আলম আমীর দলবল নিয়ে এবার প্রতিবেশী মধ্যবয়স্ক দম্পতিকে পিটিয়ে জখম ও হত্যা প্রচেষ্টা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আহত দম্পতিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
শনিবার (২০ আগস্ট) দিবাগত রাত ১টার দিকে কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কালুফকির পাড়া এলাকায় আহতদের বসতবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা বদিউল আলম আমীর, তার চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর আমীরসহ ৫ জনকে প্রত্যক্ষ ও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামী করে কক্সবাজার সদর থানায় মামলা করেছেন আহত ব্যক্তি।
হামলার শিকার আহতরা হলেন- কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কালুফকির পাড়া এলাকার নুরু হোছনের ছেলে কামাল হোছন (৫৫) ও তার স্ত্রী হাসিনা বেগম (৪৫)। তারা মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অভিযুক্তরা হলেন- কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের কালুফকির পাড়া এলাকার মৃত আমির হামজার ছেলে সদর আওয়ামী লীগ নেতা বদিউল আলম আমির (৪৫), তার চাচা ছৈয়দ করিমের ছেলে জাহাঙ্গীর আমির (৪০), ইসহাকের ছেলে সাইফুল ইসলাম কালু (২০), মৃত দুদু মিয়ার ছেলে কফিল উদ্দিন (২২) ও সাহাব মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলাম (২৬)। তাদের সাথে অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজন হামলায় অংশ নেন।
কক্সবাজার সদর থানায় জমা দেওয়া এজাহারে কামাল হোছন দাবি করেন, অভিযুক্তরা অবৈধ অস্ত্রধারী ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। এদের মাঝে আওয়ামী লীগ নেতা বদিউল আলম আমীরের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, হত্যা প্রচেষ্টাসহ একাধিক ফৌজদারী মামলা চলমান। তারা উচ্ছৃংখল হওয়ায় এলাকার লোকজন ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রতিবেশী হিসেবে স্থানীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার পরিবারের সাথে তাদের আগে থেকে বিরোধ চলে আসছিল। এলাকায় কার ছেলে কার সাথে চলবে বা চলবে না তা তারা ঠিক করে দিত। আমার ছেলে যেন আমার ভাতিজার সাথে না চলে সেটা এসে বলে যায় কয়েকদিন আগে। তাদের কথা না শোনার জেরে তারা পরিবারসহ প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে তারা দলবদ্ধ হয়ে কিরিচ, বন্দুক, লোহার রড, হাতুড়ি ও লাঠি-সোঠা নিয়ে তার বাসায় প্রবেশ করে। এ সময় বিক্ষিপ্তভাবে ভাংচুর চালায় তারা। তাণ্ডবের প্রতিবাদ করায় তারা অভিযোগকারীর ওপর আক্রমণ করে। লোহার রডের আঘাতে পিটের মাঝখানে ও বাম পাশে রক্তাক্তসহ মেরুদণ্ডে হাড়ভাঙা জখম হয়। এসময় তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে স্ত্রী হাসিনা বেগমকেও চুলের মুঠি ধরে টানা হেঁচড়া ও চরমভাবে শ্লীতহানির পর লোহার রড দিয়ে পিটেয়ে জখম করে। পরে বদিউল আলম আমীরের নির্দেশে তার চাচাত ভাই জাহাঙ্গীর আমির তাকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। এসময় তাদের শোর চিৎকারে আশেপাশে লোকজন এগিয়ে এলে গলাটি ছেড়ে দেয়। পরে জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। আর হামলাকারীরা বীরদর্পে ঘটনাস্থল হতে সটকে পড়ে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, হামলাকারীরা বাড়ির আলমারিতে থাকা নগদ অর্ধলাখ টাকা, ৩ ভরি স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান পণ্য লুট করে। পুলিশের উপস্থিতিতে আমরা হাসপাতালে চলে এলেও পরে তারা প্রকাশ্যে হুমিক দিয়েছে, ঘটনার বিষয়ে থানায় মামলা করলে প্রাণে মারবে। ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে এলাকা ছাড়া করবে। তারা পূর্ব পরিকল্পনা মতে আক্রোশ বশতঃ এ হামলা ঘটিয়েছে বলে আমাদের বিশ্বাস। এ ঘটনায় আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে আইনী সহায়তা চান আহত কামাল হোছন।
ঘটনায় অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা বদিউল আলম আমীর বলেন, এলাকায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমস্যা চলছে। কামাল হোছনরা সুবিধার লোক নয়। আমি কাউকে হামলা করায়নি। তারা নাটক সাজিয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছে৷ এটা জানার পর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দিয়ে তা পরিষদে নেওয়া হয়েছে। দ্রুত বসে তা সমাধান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি ক্ষমতার মূলে নেই বলে একটু বেকায়দায় আছি, তাই আমার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ তোলার সাহস পাচ্ছে লোকজন।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস বলেন, দু’পক্ষেরই অভিযোগ এসেছে। উভয়পক্ষ স্থানীয়ভাবে বসে সমাধান করতে চাইলে ভালো। অন্যতায় তদন্ত পূর্বক আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ভাতিজাকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা না করায় উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি কাজী তামজিদ পাশা ও জেলা ছাত্রলীগ নেতা তানজিদ ওয়াহিদ লোটাসকে ৩১ জুলাই বিকেলে হামলা করেন বদিউল আলম আমীর। এ নিয়ে মামলা হয়েছে।













