তারেক মাহমুদ »
বছর ঘুরে আবারও দীর্ঘ এক মাস মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার পর ঈদ-উল-ফিতর আমাদের মাঝে এসেছে। গতকাল সোমবার সারাদেশের দেশের মতো চট্টগ্রামেও ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হয়েছে। তবে এবারের ঈদ যেন খুশির পরিবর্তে এক হতাশার চাদরে মোড়া।
সত্যিকার অর্থে এ বছর তেমনিভাবে কারও মাঝেই সে অর্থে ঈদ আনন্দ প্রতিফলিত হচ্ছে না বললে চলে। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস আজ গোটা পৃথিবীর মানুষের জীবনকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। সামান্য কয়েক ন্যানোমিটারের এক আলোক আণুবীক্ষণিক বস্তুর কাছে গোটা পৃথিবীর মানুষই অসহায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, সমগ্র পৃথিবীর ২১২টি দেশ ও অঞ্চলে আজ এ করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে। প্রতিদিন যেমন বিশ্বের বিভিন্ন হাজারো মানুষ এ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছেন, ঠিক তেমনিভাবে প্রতিনিয়ত ঝরে যাচ্ছে শত শত প্রাণ। গোটা পৃথিবী যেন আজ মৃত্যুপুরী। এমনকি বিশ্ব অর্থনীতি আজ আবারও এক ভয়াবহ দুর্যোগের সামনে দাঁড়িয়ে।
অন্যরকম এক রমজান দেখলো এবার গোটা দুনিয়াবাসী। এবার রমজানে ছিল না সে অর্থে কোন আনুষ্ঠানিকতা। ছিল না কোন তারাবি কিংবা জুম্মার আনন্দ। অনেকটা হতাশার মধ্য দিয়েই এবার রমজানকে বিদায় জানাতে হয়েছে।
এবার কেউই ঈদের আমেজ নিয়ে নতুন জামা কিনে নি। সালামি আদান-প্রদানের দৃশ্যেও ছিল না খুনসুটির আমেজ। মায়ের হাতে সকালে রান্না করা সেমাই কিংবা জর্দা খেয়ে বাবার সঙ্গে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিধিনিষেধ থাকায় নামাজ শেষে কারও সঙ্গে কোলাকুলিও করা হয় নি।

দুপুর বেলা পরিবারের সবার সঙ্গে এক টেবিলে বসে বিরিয়ানি কিংবা পোলাও এর স্বাদ নেয়া হয়েছে, তবে ছিল না কোন অতিথি, আড্ডা,হৈ-হুল্লোড়। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গেও ঘুরতে বের হওয়া হল না এবার। করোনা আতঙ্কে ঈদ উপলক্ষে এবার অতিথি আপ্যায়ন করার সুযোগ বা সাহস পায় নি কেউই। করোনার ভয়াল থাবায় সকল অনুভূতি চৈত্রের দুপুরের মতো শুকিয়ে গিয়েছে।
অন্যান্যবার ঈদের দিনে নগরীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপচে পড়া ভীড় থাকতো। এবার নগরীর প্রতিটা বিনোদনকেন্দ্র ছিল নীরব, নিস্তব্ধ, জনমানবশূন্য। বিনোদনকেন্দ্র গুলোর মূল ফটকে ঝুলছিল তালা।
অন্যান্য বছরে এ সময়টাতে কত গান ছিল, আড্ডা ছিল, হৈ-হুল্লোড় ছিল, ছিল খুনসুটি। এবার আর সেসব কিছুই ছিল না। কোন কিছুতেই রঙ ছিল না, আমেজ ছিল না। অন্যান্য দিনের মতো সাদামাটা একটা ঈদ উদযাপন করেছে দেশের মানুষ।
চারিদিকে যেখানে চোখ যায় শুধুই ঘোর অমাবস্যা ছাড়া আর কোনও কিছুই চোখে পড়ে না।
মহামারি করোনাভাইরাস অনেকের জীবনটাকে সত্যি এক বন্দিদশায় ঠেলে দিয়েছে। একাকী জীবনের ক্ষত যেন আরও গভীর হয়ে উঠেছে। কবে এ বন্দিদশা থেকে মানুষ মুক্তি পাবে সেটা বলতে পারবো না সঠিকভাবে কেউই।
মানুষ এখন অপেক্ষার প্রহর গুণছে। বরাবরের ঈদের মত আগামী ঈদেই মা, বাবা, ছোট ভাই-বোন আর, দাদা-দাদী, নানা-নানীকে জড়িয়ে ধরবে আবার, পাশের বাসার ছোট ভাই লাবিব আর সিয়ামের গাল দুটি টিপে ধরবে আবার।
তবুও মানুষের জীবনে বয়ে আসুক অনাবিল শান্তি আর আনন্দ। মানুষের মধ্যকার সকল ধরণের বিভেদ চিরতরে দূর হয়ে যাক। এবারের ঈদের মূলমন্ত্র হোক মানবতার কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম













