২৪ অক্টোবর ২০২৫

এ কে সরকার শাওনের কবিতা : বাংলার শীত

অঘ্রানের শেষে ম্লান বেশে
শীত আসে আড়ম্বরে।
হিমেল হাওয়ায় কাঁপুনি ধরায়
শিশিরের মুক্তা ঝরে।

টপ টপ শিশিরের ছোঁয়ায়
কর্মবীর খোলে দোর;
কনকনে শীত আবছা অসিত
গ্রাম বাংলার ভোর।

সাত সকালে খেজুরের রস
নাস্তায় মু্ড়ি চিড়া-দই;
ঝোলা গুড়ে চালের পিঠা
তার তুলনা কই?

সোনালি সূর্যের ঝলমলে আলো
কদাচিৎ দেখা মেলে।
শৈত্যপ্রবাহে ত্রাহি ত্রাহি বাহে
তবু কৃষিবীর এগিয়ে চলে।

কুয়াশার ধবল চাদরে ঢাকা
স্তব্ধ প্রকৃতি বিরস।
কম্বল কাঁথায় মুড়ে ঘুমায়
জগলুর মত অলস।

ঝরা পাতার শোক গাথা
মর্মরে ব্যাথায় অধীর;
গাছ গাছালি বেখেয়ালি
নীরব মৌন স্থির।

ছিন্নমূল মানুষ ঠান্ডায় বেহুশ
শীতে কাঁপে বস্তি ;
সাত সকালে রাত্রিকালে
আগুন পোহায়ে স্বস্তি।

ক্ষেত খামার সব্জির সমাহার
রাশি রাশি সতেজ ডালি।
শিম,গাজর, টমেটোর পুষ্টিতে
শীত ঋতু সমৃদ্ধশালী।

বাগানের কোলে রঙিন ফুলে
শোভিত বাড়ী ঘর।
গোলাপ গাঁদা ফুলের ধাঁধা
তৃপ্ত দু’চোখ অন্তর।

আলু, গম, মটর ক্ষেতে
বিস্তৃর্ণ সবুজ প্রান্তর।
নয়ন জুড়ায় চিত্ত হারায়
কৃষকের নাচে অন্তর।

মৌমাছি ভ্রমর গুঞ্জে দিনভর
হলুদ সর্সে ক্ষেতে।
বনেজঙ্গলে পিয়া পিয়া বলে
পাপিয়া-মহুয়া তফাতে।

শীতের জল বরফ শীতল
নাইতে কাঁপে বীর।
হঠাৎ করে টুপ দিয়ে দুই ডুব
গর্বে উন্নত শির!

দুপুরের আহার রাজসিক বাহার
মাছ-মাংসের সমাহার।
নানান পদের শাক সবজি
সাথে টক, ভর্তা আচার।

শীতের বিকাল আড্ডার কাল
খেলার মোক্ষম সময়।
আত্নীয়-স্বজন বন্ধুভাজন
সাক্ষাতে তৃপ্ত হৃদয়।

সাঝের পরে উনুনের ধারে
মায়ের হাতের যাদু;
ভাপা, চিতই, পুলি, পাক্কন
অমৃতের চেয়ে সুস্বাদু!

রংবেরঙের বাহারী ঢংয়ের
শীতের পোষাকে শৈলী।
পার্বণ অনুষ্ঠান চলে অফুরান
মন প্রান উঠে উথলী!

শীতের শান পালাগান
নাটক পাড়ায় পড়ায়।
দুরের সুর মিষ্টি মধুর
বধূয়ার মন হারায়।

শীতের শতরূপ রূপে অপরূপ
শীতই ঋতুর রানী।
শস্যে রসে পার্বণে উল্লাসে
নিত্য আনন্দধ্বনি।

কবিতাঃ বাংলার শীত
কাব্যগ্রন্থঃ প্রান্তিক প্রান্তরে

 

 

আরও পড়ুন