মাকসুদ আহম্মদ, বিশেষ প্রতিবেদক »
কন্টেনার মোভার ও ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহন ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে প্রতিনিয়ত। ফায়দা লুটছে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক। অন্যদিকে ট্রাফিক বিভাগও কিছু বলছে না মাসোয়ারার কারণে। ওভারলোড পণ্যের গাড়ি উল্টে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুটপাথ, ডিভাইডার, রাস্তা, কালভার্ট, ব্রীজ ও রেলিং। দুর্ঘটনার পর পুলিশ গাড়ি নিয়ে চলে যায় থানায় কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনার কোন জরিমানা আদায় করা হয়না। ফলে অভিভাবকহীন ওইসকল স্থাপনা মেরামত করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকার।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নগরীর সিআরবিমুখী উপরের সড়ক থেকে গাড়িটি নিয়ন্ত্রন হারিয়ে প্রায় ৩০ ফুট নিচের সড়কে পড়ে যায়। বিকট শব্দে একটি অর্ধশতবর্ষী সেগুনগাছও ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। প্রায় ১৩টন আলুভর্তি ট্রাকটি উল্টে পড়লেও কেউ আহত বা নিহত হয়নি। দ্রুত স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে পৌছে ট্রাকের চালক ও হেলপারকে উদ্ধার করে। কিন্তু পুলিশের ভয়ে তারা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পলায়ন করে।
কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টহল দল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটায় ঘটনাস্থলে পৌছে আগ্রাবাদস্থ ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্স সার্ভিসকে খবর দেয়। দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে গাছ কেটে পথচারীদের চলাচল নিশ্চিত করে অবশিষ্ট উদ্ধার অভিযানে পুলিশকে দায়িত্ব দিয়ে চলে যায়। শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে পুলিশ ট্রাকের কেবিনে থাকা চালান থেকে পণ্যের মালিককে ফোন করেন কোতয়ালী থানার এসআই মোহাম্মদ লিয়াকত। পণ্যের বিকল্প গাড়ি নিয়ে ২০০ বস্তাভর্তি প্রায় ১৩টন আলু ট্রাক থেকে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে। এর আগেই পুলিশ ঝুকিপূর্ণ রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে উভয় দিক থেকে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রেকার বা ব্রেকডাউন দিয়ে টেনে ট্রাকটিকে কোতয়ালী থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে টাইগারপাসমুখী গাড়ীগুলো নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে সিআরবিমুখী উপরের সড়ক দিয়ে চলাচল শুরু করেছে। অতিবৃষ্টি ও অতিরিক্ত পণ্য বোঝাইয়ের কারনে সিআরবির উপরের সড়ক থেকে খাতুনগঞ্জগামী একটি ট্রাক প্রায় ৩০ফুট নিচের সড়কে পড়ে যায়। এ সময় অর্ধশতবর্ষী একটি সেগুন গাছ ট্রাকের ধাক্কায় গোড়াসমেত উপড়ে পড়ে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। রাত সোয়া তিনটার দিকে এমন ঘটনায় ও বিকট শব্দের কারণে রাস্তার পার্শ্ববর্তী রেলওয়ে আবাসিক এলাকার লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া ট্রাকের কেবিনের দরজা দিয়ে কোনমতে ট্রাক (ঢাকামেট্রো-ট-২০-৪৫৫৬) চালক সেলিম ও আনোয়ারকে উদ্ধার করে। কিন্তু কোতয়ালী থানার টহল টিমের উপস্থিতি টের পেয়ে চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার মুন্সিগঞ্জ থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের দিকে আলুভর্তি ট্রাক নিয়ে রওয়ানা দেয়। এসময় ট্রাকটিতে ২০০ বস্তা আলু ছিল। প্রতিটি বস্তায় সাড়ে ৬৪ কেজি আলু ছিল। টাইগারপাস মোড় পার হওয়ার পর ট্রাকটি সিআরবিমুখী সড়কে অনেকটা উপরের দিকে উঠছিল এমন সময় অতি বৃষ্টির কারনে ট্রাকের সামনের গ্লাসটি ঘোলা হয়ে যায়। হেলপার গামছা দিয়ে গ্লাসের সামনের অংশটুকু মোছার সময় স্টিয়ারিং হাল্কা ডানদিকে ঘোরাতেই ডানের চাকাটি রাস্তার রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে।

এতেই বিপত্তি ঘটে। মনোরম সিআরবি সড়কের রেলিংভেঙ্গে প্রথমে ট্রাকের চাকা রাস্তার বাহিরে পড়ে যায়। ওভার লোডের কারনে ট্রাকের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে না পেরে অর্ধশতবর্ষী সেগুন গাছে ধাক্কা মারে চালক। এতে বিকট শব্দে গাছটিসহ ট্রাক প্রায় ৩০ ফুট নিচের সড়কে পড়ে যায়। এসময় ৪জন একটি প্রাইভেট কার আরোহি ঘটনাস্থল অতিক্রম করছিল। গাড়ির একটু ক্ষতি হলেও চালক বা যাত্রীদের কোন ক্ষতি না হওয়ায় প্রাইভেট কারটি চলে যায় নিজ গন্তব্যের দিকে। এদিকে, গাড়ী ও মালামাল উদ্ধার করতে পণ্যের মালিকের মাধ্যমে চালক ও হেলপারকে ঘটনাস্থলে আসতে বাধ্য করে পুলিশ।
এ বিষয়ে গাড়ীর চালক বাংলাধারা প্রতিবেদককে বলেন, গাড়ীর গতি তেমন ছিলনা। কারণ গাড়ী উপরের দিকে উঠছিল। গ্লাস ঘোলা হয়ে যাওয়ার কারনে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। ফলে বাম্পার রাস্তার রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রনে আনার আগেই চেসিসের সামনের ডানদিকের চাকাটি পিছলে পড়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। মুন্সিগঞ্জ থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় রওয়ানা দিয়েছি।

এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত কোতোয়ালী থানা পুলিশের এসআই মোহাম্মদ লিয়াকত প্রতিবেদককে বলেন, রাত তিনটার পর এই ঘটনা। ঘটনার পরই পালিয়ে গেছে চালক ও হেলপার। কোন আহত বা নিহতের ঘটনা ঘটেনি। চালক ও হেলপারকে পণ্যের মালিকের মাধ্যমে ফোন করে আনা হয়েছে। দমকল কর্মিরাও এসেছিল। প্রায় ১৩ টন আলু নিয়ে ট্রাকটি উল্টে পড়েছে। মালিককে আলু বুঝিয়ে দেওয়ার পর ট্রাকটি রেকার দিয়ে কোতয়ালী থানায় নেওয়া হয়েছে।













