৮ ডিসেম্বর ২০২৫

কক্সবাজারে আটকা পর্যটক নিয়ে চট্টগ্রামের পথে পুলিশের বাস

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার»

গণপরিবহন ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের কারণে কক্সবাজারে আটকা পড়া পর্যটকদের পুলিশি ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম পৌছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। শনিবার (৬ নভেম্বর) বেলা তিনটার দিকে ঘোষণার পর পর্যটক ভর্তি পুলিশের প্রথম বাসটি সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে কক্সবাজার পুলিশ লাইনস ত্যাগ করে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রফিকুল ইসলাম।  

এসপি বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারে বিভিন্ন জেলা হতে আগত যেসকল পর্যটকগণ বাস ধর্মঘটের কারণে নিজ গন্তব্যে ফিরে যেতে পারছেন না, তাদের বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সহায়তায় নিজস্ব পরিবহনে চট্টগ্রাম পৌছানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফিরে যেতে আগ্রহীদের জেলা পুলিশ লাইনসে যেতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়ে জেলা পুলিশের পেইজে দেয়া হয়। তারা দেখে যারা পুলিশ লাইনস গেছেন তাদের গাড়িতে তুলে প্রথম বাসটি সন্ধ্যা ৭টায় যাত্রা শুরু করে। 

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে হঠাৎ গণপরিবহন ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ হওয়ায় কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে শুক্র ও শনিবার ফিরে যাবার সিডিউল থাকা প্রায় অর্ধলাখ পর্যটক আটকা পড়েন। শনিবার (৬ নভেম্বর) যাদের বিশেষ কাজ রয়েছে, তাদের অনেকে অতিরিক্ত ভাড়ায় উড়োজাহাজে করে কক্সবাজার ত্যাগ করেন। কিন্তু যাদের সেই সামর্থ্য নেই তারা ছোট যানবাহনে কক্সবাজার ছাড়ার চেষ্টা চালান শুক্র ও শনিবার। অন্যসময়ের চেয়ে ভাড়া দু’তিনগুণ হওয়ায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজার ত্যাগ করতে পারেননি আটকা পড়ারা। শনিবার বিমানের টিকেটের মূল্যও অন্যদিনের চেয়ে বেশ চড়া। তবে, হোটেলে অবস্থান করা পর্যটকদের রুম ভাড়ায় বিশেষ ছাড় দিচ্ছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।  আগের মতো সপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে বৃহস্পতি-শুক্র ও শনিবার হাতে রেখে কক্সবাজার এসেছেন লাখো পর্যটক। এদের মধ্যে অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান বাৎসরিক অনুষ্ঠানের আগের নির্ধারিত সময়ানুসারে কক্সবাজার আসেন বৃহস্পতিবার। আবার শুক্রবার ভোরেও পৌঁছান অনেকে। যারা শুক্রবার ফিরে যাওয়ার সিডিউলে ছিলেন তারা এসেছিলেন আরও কয়েকদিন আগে। এ ধরনের পর্যটক অর্ধলাখ হবে বলে জানিয়েছে হোটেল সংশ্লিষ্টরা।

বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তারা নির্ধারিত সময়ে কক্সবাজার ছেড়ে যেতে পারেননি। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মুরাদ ইসলাম পর্যটক আটকা পড়ার বিষয়টি প্রশাসন জানেন না বললেও দূর্ভোগে পড়া পর্যটকদের জেলা পুলিশ বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়। 

জানা গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় শুক্রবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য গণপরিবহন, পণ্যবাহী ট্রাক ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় পরিবহন সংগঠনের নেতারা। হঠাৎ যান চলাচল বন্ধের ঘোষণায় সাধারণ মানুষকে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। যার প্রভাব পড়েছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষুদ্র যানবাহন জেলা কেন্দ্রিক সড়ক বা চট্টগ্রামের পথে চলাচল করছে। তবে, সেসব যানবাহন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দিগুন টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

কক্সবাজার তাজ করপোরেশন অ্যান্ড ট্রাভেলস সেন্টারের মালিক জানে আলম বলেন, কক্সবাজার থেকে বিমানের ফিরতি টিকেটের দাম হঠাৎ বেড়েছে। অন্য সময়ে তিন হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় যেতে পারলেও শুক্রবার-শনিবার সর্ব নিম্ন ৭ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। যার কারণে অনেক পর্যটক টিকিট করতে এসেও সাধ্যের ভিতর না হওয়ায় টিকিট না নিয়ে ফিরে গেছেন। 

ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, হঠাৎ দূরপাল্লার বাস বন্ধ হওয়াতে পর্যটকরা চরম বেকাদায় পড়েছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও। এরপরও আটকাপড়া পর্যটকদের মাঝে যারা হোটেলে অবস্থান করছেন তাদের রুম ভাড়ায় বিশেষ ছাড় দিয়ে রাখা হচ্ছে। 
কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, গণপরিবহন বন্ধের বিষয়টি জাতীয় ইস্যু। এ ব্যাপারে সরকারের দ্রুত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। 

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন