কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে বৃহস্পতিবার একদিনে ১৭ করোনা পজিটিভ সনাক্ত হয়েছে। এটি ল্যাবের কার্যক্রম শুরুর এক মাসের মাথা এটিই সবচেয়ে বেশি সনাক্ত হওয়ার রেকর্ড। এদিন ১২৩ সন্দেহজনক রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
মাসের শেষ দিনে করোনা সনাক্ত ১৭ জনের মাঝে রোগী কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৫ জন, পেকুয়ায় দুইজন, চকরিয়ায় ৪ জন ও উখিয়ায় দুইজন রয়েছেন। এছাড়াও পার্বত্য বান্দরবানে নাইক্ষ্যংছড়ির তিনজন ও বান্দরবান সদরের রয়েছে একজন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. মো. শাহজাহান নাজির এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এপ্রিল মাসের প্রথমদিন থেকেই কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়। ২ এপ্রিল থেকে ল্যাবের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরুর টানা ২৯ দিনে (২৯ এপ্রিল পর্যন্ত) এক হাজার ১২৬ জন সন্দেহজনক রোগীর নমুনা টেষ্ট করে ২৬ জন রোগীর করোনা ‘পজিটিভ’ পাওয়া যায়। আর মাসের শেষ দিনে এসে (৩০ এপ্রিল) একদিনেই ১৭ করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়ে এক লাফে ৪৩ এর ঘরে দাঁড়িয়েছে রোগীর সংখ্যা।
এদিকে, দিন দিন জেলায় করোনা টেষ্টের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আতংক কাজ করছে। কারণ, এতদিন জেলার বাইরে থেকে আসা মানুষের মাঝে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল। এখন সেই ধারাবাহিকতা পাল্টে গেছে। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা পরিবারের সদস্যদের মাঝেই এখন সংক্রমণ মিলছে।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে গত এক মাসে এক হাজার ২৪৯ জন সন্দেহজনক রোগীর করোনা টেষ্ট করা হয়েছে। যাদের মধ্যে নেগেটিভ এসেছে এক হাজার ২০৬ জন। সে হিসেবে কক্সবাজার ল্যাবে সনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪৩। আর প্রথম আক্রান্তসহ এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪-এ।
কক্সবাজারের প্রথম করোনা রোগীর টেষ্ট হয়েছিল ঢাকার আইইডিসিআর ল্যাবে। ওই রোগীসহ ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলায় ৩৮ জন এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে ৫ জন ও বান্দরবান সদরে একজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে কক্সবাজারে চকরিয়ার খুটাখালী এলাকার প্রথম রোগী ও নাইক্ষ্যংছড়ির প্রথম রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. অনুপম বড়ুয়া বলেন, অন্য দিনের মতো ৩০ এপ্রিলের সকল রিপোর্ট ঢাকার আইইডিসিআর-এ পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকেই অফিসিয়ালি তথ্য প্রচার করা হবে।
সুত্র মতে, এখন পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে অধিকাংশই জেলার বাইরে থেকে এসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের অধিকাংশই এসেছেন ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে। এদের মধ্যে দুইজন মাছ ও অন্যজন আম ব্যবসায়ী, দুইজন তাবলীগফেরত এবং একজন গার্মেন্ট কর্মী এবং একজন রিক্সা চালকও রয়েছেন। তবে টেকনাফের এক নারী চিকিৎসক উপজেলা হাসপাতালে রোগীর সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হন। এখন করোনা আক্রান্ত রোগীদের মাধ্যমে সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবটিকে ঢাকাস্থ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্টান (আইইডিসিআর) করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নির্ধারণ করে গত পহেলা এপ্রিল থেকে ল্যাবটি চালু হয়। এতে প্রথম ৬ দিনে ২৪ জন, ৭ এপ্রিল ২৫, ৮ এপ্রিল ২৪ জন, ৯ এপ্রিল ২৭ জন, ১০ এপ্রিল ৩৭ জন, ১১ এপ্রিল ৯ জন, ১২ এপ্রিল ৩২ জন, ১৩ এপ্রিল ২৪ জন, ১৪ এপ্রিল ৩১ জন, ১৫ এপ্রিল ১৭ জন, ১৬ এপ্রিল ৪১ জন, ১৭ এপ্রিল ৩৯ জন, ১৮ এপ্রিল ১৩ জন, ১৯ এপ্রিল ৬৩ জন, ২০ এপ্রিল ৫১ জন, ২১ এপ্রিল ৪০ জন, ২২ এপ্রিল ৬৪ জন, ২৩ এপ্রিল ৫৩ জন, ২৪ জন ১০১ জন, ২৫ এপ্রিল ১৮ জন, ২৬ এপ্রিল ১০০ জন, ২৭ এপ্রিল ১২২ জন, ২৮ এপ্রিল ৭৬, ২৯ এপ্রিল ৯৫ জন ও ৩০ এপ্রিল ১২৩ জন সন্দেহভাজন রোগীর পরীক্ষা করা হয়েছে এই ল্যাবে। সব মিলিয়ে পরীক্ষা হওয়া রোগী সংখ্যা গত একমাসে এক হাজার ২৪৯ জন। এদের মধ্যে ৪৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্থিত্ব পাওয়া গেছে।
বাংলাধারা/এফএস/টিএম












