৪ নভেম্বর ২০২৫

কক্সবাজারে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা শতক ছাড়িয়েছে

কক্সবাজার প্রতিনিধি »  

পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে ধীরে গ্রাস করছে বিশ্ব আতংক করোনা। গত ৪০ দিনেই শতকের ঘর অতিক্রম করেছে করোনা পজেটিভ রোগীর সংখ্যা। সোমবার একদিনে মিলিছে ১৩ পজিটিভ। রোববার মিলেছিল ১০ জন। কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠার ৪১ দিনে সোমবার (১১ মে) বিকেল পর্যন্ত নমুনা টেস্ট হয়েছে ২ হাজার ৮১৫ জনের। এর মাঝে ‘১১১’ জনের পজিটিভ রিপোর্ট মিলেছে। ইতোমধ্যে নির্ধারিত চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ১৬ জন বাড়ি ফিলেছেন।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ক্লিনিক্যাল ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাহান নাজির এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ডা. শাহজাহান নাজিরের মতে, কক্সবাজারে সনাক্ত হওয়া করোনা রোগীর ২৩ জন কক্সবাজার সদর উপজেলার, রামু উপজেলার ৪ জন, চকরিয়া উপজেলায় ৩১ জন (প্রথম ঢাকায় সনাক্ত হওয়া রোগীসহ), মহেশখালীতে ১২ জন, উখিয়ায় ৯ জন, টেকনাফে ৮ জন, পেকুয়ায় ১৪ জন এবং সর্বশেষ কুতুবদিয়ায় ১ জন। অপর ১০ জনের ৯ জন বান্দরবান জেলার এবং আরেকজন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার।

ল্যাবের রিপোর্ট মতে, সোমবারসহ গত এক সপ্তায় দ্রুত গতিতে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত ৫ মে থেকে ১১ মে এ সাতদিনে ৬৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। আর ল্যাব প্রতিষ্ঠার প্রথম ৩৪ দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৬ জনে। ৫ মে একদিনেই মিলেছে ১১ জন। ৬ মে তা কমে হয় ২ জনে। কিন্তু আতংক বাড়িয়ে ৭ মে তা একে বারে ১৯-এর ঘরে গিয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য ৮ মে ৪ আর ৯ মে মিলেছে ৬ জনের পজেটিভ। কিন্তু ১০ মে আবারো মিলে ১০ জন। এরই ধারা ঠিক রেখে ১১ মে (সোমবার) ১৮৭ জনের পরীক্ষাং একদিনেই ১৩ জনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। ফলে আতংক ভর করছে সর্বত্র।

কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. অনুপম বড়ুয়া জানান, রোববার কক্সবাজারের ৮টি উপজেলা, ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে ১৮৭ জন সন্দেহজনক রোগীর করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সোমবার সকাল থেকে শুরু করা পরীক্ষায় এদের মাঝে ১৩ জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। অপর ১৭৪ জন নেগেটিভ রয়েছে।

পজেটিভ পাওয়াদের মাঝে কক্সবাজার সদরের ২ জন, পেকুয়ায় ২ জন, চকরিয়ায় ৫ জন, কুতুবদিয়ার ১ জন, উখিয়ায় ১ জনসহ জেলায় নতুন শনাক্ত ১১ জন। অপর ২ জন বান্দরবান জেলার। এ হিসেবে কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত ঢাকার প্রথম সনাক্ত নারীসহ ১০২ জন। আর কক্সবাজার মেডিকেল ল্যাবে পরীক্ষা হিসেবে বান্দরবানের ৯ ও লোহাগাড়ার একজনসহ ১১১ জনে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, করোনা আক্রান্তদের তথ্য মতে কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছরা, তারাবনিয়ার ছরা, বৈদ্যঘোনা ও টেকপাড়ায় করোনার অস্থিত্ব মিলছে বেশি। প্রথম রোগী সনাক্ত হবার পর তার সংস্পর্শে আসা অন্যদের সঠিক ভাবে স্ক্যানিং না করায় এসব এলাকায় করোনার উপস্থিতি বেড়েছে বলে মনে করছেন মেডিকেল সংশ্লিষ্টরা।

আবার শুরু থেকে কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করায় গত ৪০ দিন করোনায় কোন উপস্থিতি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় পাওয়া যায়নি। বাইরে থেকে যারাই দ্বীপে ঢুকেছে তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতের পর পরিবার বা এলাকায় মিশতে দেয়ায় এতদিন করোনা ছোবল বসাতে পারেনি। কিন্তু ৪১ দিনের মাথায় অবশেষে কুতুবদিয়ার একজন রোগী সনাক্ত হওয়ায় সেদিকেও এখন উদ্বেগ বাড়ছে। কিন্তু কুতুবদিয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গীরের মতে কুতুবদিয়া উপজেলার বাসিন্দা হলেও তিনি কক্সবাজার অবস্থান করেন। তাই ব্যক্তি কুতুবদিয়ার হলেও রোগী কুতুবদিয়ার নয় বলে দাবি তার।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার বলেন, প্রশাসন ও শৃংখলাবাহিনী প্রাণান্ত চেষ্টাতেও সাধারণ মানুষের মাঝে আত্ম সচেতনতা না জাগার ফল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়া। এরপরও বলবো, এতে আতংকিত হবার কিছু নেই। কারণ, আমাদের মৃত্যুর হার নেই বললে চলে। সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ হওয়ায় ইতোমধ্যে ১৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকিরাও সুস্থ হওয়ার পথে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এটি আশা জাগানিয়া। তবুও সবার মাঝে সচেতনতাই কেবল করোনার প্রাদূর্ভাব কমাতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারে করোনার লক্ষণ নিয়ে রামুর কাউয়ারখোপের একজন বয়োবৃদ্ধা মারা গেছেন। সনাক্ত হবার ৬ ঘন্টার মাথায় তিনি হাসপাতালে মারা যান। এরপর যারা সনাক্ত হচ্ছেন তারা রামুসহ জেলার অন্যান্য আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন