২৪ অক্টোবর ২০২৫

কক্সবাজারে গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধুর আত্মহত্যা

ঝুলন্ত লাশ

দেশের বাড়িতে অবস্থান করা স্ত্রীর সাথে মুঠোফোনে পারিবারিক নানা বিষয়ে কথা বলছিলেন মালয়েশিয়া প্রবাসী নজরুল ইসলাম। মালয়েশিয়ায় তখন মাগরিবের নামাজের সময় হওয়ায়  স্ত্রী জমিলা আক্তার নামাজ শেষ করে আবার কল দিতে বলে ফোন রেখেদেন। কিন্তু ২৫ মিনিট পর আবার কল দিয়ে নজরুল জানতে পারেন, তাকে মুঠোফোনে কথা বলার অপেক্ষায় রেখে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী জমিলা আক্তার (১৬)।

মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে কক্সবাজারের ঈদগাঁওর জালালাবাদ ইউনিয়নের পালাকাটায় এ ঘটনা ঘটে।

ফাঁসিতে ঝুলে মারা যাওয়া জমিলা আক্তার ঈদগাঁওর জাগির পাড়া এলাকার শামশুল আলম শমশু সওদাগরের মেয়ে। বিগত ৫ মাস আগে জালালাবাদের পালাকাটা গ্রামের শামশুল আলমের ছেলে মালয়েশিয়া প্রবাসী নজরুল ইসলামের সাথে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়েছিল জমিলার।

ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির হোসেন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে থানার এসআই সফিক, মো. জুয়েল ও মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশদল ঘটনাস্থলে পৌঁছে রুমের ভেতর থেকে বন্ধ থাকা দরজা ভেঙ্গে ঝুলন্ত জমিলার মরদেহ উদ্ধার করে। লাশের প্রাথমিক সুরতহাল শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। পরে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে বুধবার আছরের নামাজের পর সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন গা-ঢাকা দেয়ায় এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন জমিলার পরিবার।

জমিলার ভাই মনির আহমদের অভিযোগ, বিয়ের পর স্বামী দেশে অবস্থানকালীন কয়েকমাস সুখে বাস করেছে তার বোন জমিলা। কিন্তু বিয়ের তিনমাস পর স্বামী বিদেশ চলে গেলে শাশুড়ি ছারা খাতুন এবং ননদরা মিলে  জমিলাকে মানসিক নির্যাতন করত। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার বিকেলে খুন করে রুমের ফ্যানের সাথে জমিলাকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

জমিলার বাবার বাড়ির প্রতিবেশী ঈদগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরী বলেন, ঘটনাটি পরিকল্পিত মনে হচ্ছে। যে রুমে লাশ ঝুলে ছিল, সে রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকলেও মনির যেহেতু চালের নিচ দিয়ে ঢুকতে পেরেছে তাই-এ মৃত্যু রহস্যময়।

খুনের অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, সবকিছু খুঁটিয়ে দেখা হয়েছে। দরজা ছাড়া অন্য কোন ভাবে রুমে প্রবেশ কিংবা বের হবার সুযোগ নেই। তাই এটা আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। এরপরও ঘটনার পর থেকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন গা-ঢাকা দেয়ায় তাদের নিপীড়নে নববধূ মারা গেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন মেয়ের পরিবার। এ কারণে, ঘটনার সত্যতা জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রিপোর্ট পেলে জানা যাবে এটা আত্মহত্যা নাকি খুন।

এদিকে, মঙ্গলবার রাতে এক আত্মীয়ের মুঠোফোনের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে প্রবাসী নজরুলের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, বয়স লুকিয়ে ১৫ বছরের মেয়েকে পূর্ণ বয়স্ক দেখিয়ে বিয়ে দেয়া হয়েছে। বিয়ের পর হতেই আমি ও পরিবারের সবার সাথে গোয়ার্তামি করছিল জমিলা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সকাল-সন্ধ্যা কোরআন তেলাওয়াত ও বাবা-মায়ের অনুগত হয়ে চলার বিষয় নিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য চলছিল। প্রবাসে আসার সময় এবং প্রবাসে পৌঁছার পর থেকে কথা হলে সেসব বিষয়ে প্রথমে কথা হয়। বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী মিলে পাঁচজনের সংসারে নামাজ-কালামটা যেন নিয়মিত হয় তার তাগাদা দিতে আমি মাকেও (জমিলার শাশুড়িকে) বলতাম।

নজরুল আরো বলেন, মঙ্গলবার বিকেল চারটা (বাংলাদেশ সময়) থেকে ৪টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত জমিলার সাথে কথা হয়েছে। যার মাঝে নিয়মিত নামাজ ও সকাল-সন্ধ্যায় কোরআন তেলাওয়াতকালে আমার ছোট ভাইটাকে নূরানী কায়দা নিয়ে বসানোর কথায় হয়েছে বেশি। কথার ফাঁকে মালয়েশিয়ায় মাগরিবের আজান হলে ফরজ নামাজটি পড়ে আবার কল দিতে বলে জমিলা কেটে দেয়। আমিও ২০-২৫ মিনিট পর আবার কল করি। কিন্তু ফোন আর রিসিভ হচ্ছিল না।

তিনি আরও বলেন, এবার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জমিলাকে ফোনটা দিতে বললে মা  তাকে ডেকে কোন সাড়া না পেয়ে মা বিছানা থেকে ওঠে রুমের দরজা বন্ধ পান। ডাকাডাকি করে সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালা দিয়ে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে আর্তনাদ করে উঠেন তিনি।

নজরুল বলেন, পরে জেনেছি- পুলিশ আমাদের বাড়ির সবাইকে ধরে নিয়ে যাবে, টর্চার করবে; এসব বলে কারা যেন মা ও পরিবারের সবাইকে পালিয়ে যেতে বলেন। মূর্খ মানুষগুলো অহেতুক পালিয়ে গেলো। আর আমি মনকে বুঝাতে পারছি না, আমাকে নামাজে পাঠিয়ে আমার স্ত্রী এভাবে ফাঁসিতে ঝুলে অহেতুক আমাদের বেকায়দায় ফেললো- আমি যা বলেছি- তার সত্যতা যাচাইয়ে, শৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর কথোপকথন শুনে দেখতে পারেন।

আরও পড়ুন