২৫ অক্টোবর ২০২৫

চিকিৎসক সংকটে কক্সবাজারে বিমান উঠা-নামায় অনুমতি মিলছে না!

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগাদা দিয়ে সারা দেশে স্বাভাবিক হয়েছে লকডাউন পরিস্থিতি। প্রায় এক মাস পূর্বে চালু হয়েছে দুরপাল্লা ও জেলা পর্যায়ে সীমিত পরিসরে যান চলাচল। সাধারণ ছুটি শেষ হবার পর থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, সৈয়দপুর (নীলফামারী) এবং যশোর রুটের ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তবে, ফ্লাইট চালানোর অনুমতি পায়নি পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজার বিমানবন্দর। সকল অনুসঙ্গ থাকার পরও শুধু চিকিৎসক উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারায় চালু করা যাচ্ছে না কক্সবাজারে বিমান উঠা-নামা। অথচ পর্যটন ও রোহিঙ্গা উপস্থিতির কারণে দেশের আভ্যন্তরীন অন্য আকাশপথের চেয়ে কক্সবাজার আকাশপথ লাভজনক। এতে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছে ব্যবসায়ী ও এয়ারলাইন্সগুলো।

এ পথে বিমান চলাচলের অনুমতি না মেলার বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেন, ফ্লাইট চলাচলে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন (আইকা) যেসব পূর্বশর্ত দিয়েছে সেগুলো পূরণ করতে না পারায় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে বিমান উঠা নামায় এখনো অনুমতি দেয়া হয়নি। আইকাওয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ফ্লাইট চলাচল করতে হলে বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসক থাকতে হবে। প্লেনে কেউ অসুস্থ বোধ করলে বিমানবন্দরে নেমে যেন প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারে। যেসব বিমানবন্দর চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে সেখানেই ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়েছে। যা কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এখনো করতে পারেনি।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, করোনা রোধে যখন বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী কমার্শিয়াল ফ্লাইট বন্ধ ছিল তখনো দুটি বিশেষ ফ্লাইট নেমেছে। নিয়মিত চলছে কার্গো ফ্লাইট। এ সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসক এসেছিল বিমানবন্দরে। কিন্তু কক্সবাজারের সিভিল সার্জন রোস্টারের মাধ্যমে পাঁচজন চিকিৎসককে বিমানবন্দরে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমরা তাদের বিমানবন্দরের আইডি কার্ডও দিয়েছিলাম। কাগজে-কলমে বিমানবন্দরে এখনো পাঁচজন চিকিৎসক রয়েছেন। তবে বর্তমানে চিকিৎসক উপস্থিতির সংখ্যা শূন্য।

কক্সবাজরের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে চলমান বিভিন্ন কোভিড হাসপাতালে প্রচুরসংখ্যক ডাক্তার জোগান দিতে হচ্ছে। তাই সংকটের কারণে বর্তমানে বিমানবন্দরে চিকিৎসক দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে, বিমান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে চিকিৎসক ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি আমরা।

এদিকে, করোনা সংক্রমণ জ্যামিতি হারে বাড়ায় কক্সবাজারে রেড জোন ঘোষনা ৩০ জুন পর্যন্ত চলমান ছিল। ১ জুলাই থেকে সীমিত আকারে খুলেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডান্ট্রিজ বলছে, করোনা সংকটে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কক্সবাজার। এ ধাক্কায় দেউলিয়াত্বের শঙ্কায় রয়েছে হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন ব্যবসা। পহেলা বৈশাখ, ঈদুল ফিতরে জমজমাট ব্যবসার আশা থাকলেও বাণিজ্য ছিল শূন্যের কোঠায়। আসন্ন ঈদুল আজহায়ও ব্যবসা হবে কিনা তা আশা করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

ট্যুরস এসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সাবেক সভাপতি ও ট্রাভেল ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, কক্সবাজারে প্রতি বছর দেশি-বিদেশি মিলিয়ে অর্ধকোটি পর্যটক আসেন। তাদের যাতায়াতে প্রতিদিন দূরপাল্লার অনেক বাস ও ১০-১২টি ফ্লাইট যাতায়াত করে। পর্যটক সেবায় রয়েছে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও কটেজ এবং কয়েকশ রেস্টুরেন্ট। গত মার্চ মাস থেকে সবই বন্ধ রয়েছে। এতে হাজার কোটি টাকা লোকশান গুনছি আমরা।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ওশান প্যারাডাইস হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের চেয়ারম্যান লায়ন এম এন করিম বলেন, করোনা পর্যটন শিল্পকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে দিয়েছে। তারকা হোটেল গুলোর অতিথিরা প্রায় বিমানেই আসা-যাওয়া করে। পর্যটনশিল্পটা বাঁচাতে হলে বিমান চলাচল স্বাভাবিক করা দরকার।

কক্সবাজার হোটেল কর্মকর্তা এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হোয়াইট অর্কিড হোটেলের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, অনেকেই বাসে কক্সবাজারে আসতে ভয় পান। বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলে অনেকেই কক্সবাজারে আসবেন। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ইন্টার্ন চিকিৎসক দিয়ে হলেও বিমানবন্দর সচল করার আহ্বান জানাই।

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, শুধু চিকিৎসকের জন্য বিমান চলাচল বন্ধ তা জানা ছিল না। কিভাবে তা ম্যানেজ করা যায় তা খতিয়ে দেয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বেবিচক। পরে ১ জুন ঢাকা থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর এবং ১১ জুন থেকে যশোর রুটে ফ্লাইট চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন