৭ নভেম্বর ২০২৫

কক্সবাজারে জেলা জজকে আইনজীবীদের বয়কট, দুর্ভোগে বিচারপ্রার্থীরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্ব্যবহার, কুরুচিপূর্ণ আচরণের অভিযোগ এনে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবী সমিতির সদস্যরা।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) রাতে জেলা আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্তে রবিবার সকাল থেকে শুরু হয় বর্জন কর্মসূচি। এর ফলে রবিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল থেকে জেলা জজ আদালতে বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নেয়নি কোন আইনজীবী। এতে এ আদালতে পূর্ব নির্ধারিত তারিখে থাকা মামলাগুলোর বাদি-বিবাদিরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। কিন্তু অন্য আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক ভাবে চলেছে।

এদিকে, জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আহ্বানে তার সাথে দেখা করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা। এসময় আদালত বর্জনের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়। সব শুনে নিজের আচরণ ও ভুল বোঝাবুঝির কারণে দুঃখ প্রকাশ করে জেলা ও দায়রা জজ বর্জন কর্মসূচি তুলে নিতে আহ্বান জানান বলে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপদি মো. ইকবালুর রশীদ আমিন সোহেল।

উত্তরে তিনি বলেছেন, কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির বিশেষ সাধারণ সভায় হওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হলে আরেকটি সাধারণ সভা ছাড়া সম্ভব নয়। ফলে প্রত্যাহার হয়নি বর্জন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্বাস উদ্দিন বলেন, বিচারকদের সাথে আইনজীবী নেতাদের একটি বৈঠক হয়েছে সেটা জানি। কিন্তু বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে আমার জানা নেই।

তিনি আরও বলেন, বিচারক আদালতে এসে দাপ্তরিক কাজ করেছেন- এজলাসেও বসেছিলেন। তবে, সেখানে বিচারিক কাজ চলেছে কি না আমি এখনো জানি না।

আদালতের পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুসারে আদালতে এসেছিলেন মহেশখালীর ধলঘাটার শাহেদুল ইসলাম মনির। কিন্তু জেলা জজের আদালতের কার্যক্রমে আইনজীবী না থাকায় তিনি চরম ভোগান্তিতে পড়ে যান উল্লেখ করে বলেন, ধলঘাটা থেকে কক্সবাজার সদরে আসতে মাতারবাড়ি হয়ে চকরিয়া, ঈদগাঁও, রামুসহ কয়েকটি উপজেলা পার হয়েই আসতে হয়েছে। কিন্তু আমার মামলাটি আবার কত মাস পর তারিখ পড়ে তার কোন ইয়াত্তা নেই। এটি পারিবারিক ভাবে খুবই ভোগান্তিতে ফেলেছে।

শুধু তিনি নন, তার মতো- কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও টেকনাফ থেকে আসা অনেক বিচারপ্রার্থীরা বেকায়দায় পড়েন। হঠাৎ করে আদালত বর্জনের ঘটনায় বিচারপ্রার্থীরা এ দুর্ভোগে পড়েন বলে জানান তারা।

সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, প্রায় তিন বছর পূর্বে বান্দরবান জেলা জজ থেকে বদলী হয়ে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন মোহাম্মদ ইসমাঈল। দায়িত্ব গ্রহণের পর কিছুদিন সততার সাথে দায়িত্ব পালন করলেও ধীরে ধীরে নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারি মনোভাবে আদালত পরিচালনা শুরু করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জেলা আইনজীবীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেন তিনি। এছাড়া আইনজীবীদের সাথে নানা সময় দুর্ব্যবহার করেছেন মোহাম্মদ ইসমাইল ।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাওহীদুল আনোয়ার বলেন, চলতি বছরের ১৪ জুলাই জেলা লিগ্যাল এইডের বৈঠকে জেলার সমস্ত আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছিলেন বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। সেদিন আমরা এর প্রতিবাদ করে তার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে বললেও তিনি তা কর্ণপাত করেননি। তাঁর এমন আচরণের বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে, আইন মন্ত্রণলালয়, প্রধান বিচারপতিসহ সংশ্লিষ্ঠদের জানিয়েছি। এমন দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি তাঁর নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই বাধ্য হয়েই আমরা তাঁর আদালত বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

জেলা আইনজীবী সমিতি সূত্র বলেন, সুপ্রীম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী সাড়ে ৯টা থেকে আদালত চালু হয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বিচারক ইসমাইল এসব মানেন না। তিনি তার নিজের ইচ্ছায় আদালতে বসেন, আদালত চালান।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানি মিচ মামলার পরবর্তী তারিখ আদালতে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তিনি তা করেন না। তিনি ওইসব মামলা খাস কামরায় শুনানি করেন, জামিনও দেন। এছাড়া আদালতে দেওয়া আদেশে স্বাক্ষর না করে তা খাস কামরায় রেখে দিয়ে বিচার প্রার্থীদের হয়রানি করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরো নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে জেলার সমস্ত আইনজীবীদের সিদ্ধান্ত মতে তার আদালত বর্জনের কর্মসূচি দেয়া হয়। তাঁকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এ কর্মসূচী চলবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ