৩১ অক্টোবর ২০২৫

কক্সবাজারে সাংবাদিককে হত্যার হুমকির অভিযোগ

কক্সবাজার প্রতিনিধি  »

কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক সমুদ্রকণ্ঠ’র চীফ রিপোর্টার ও চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত একুশে পত্রিকার কক্সবাজার প্রতিনিধি জসিম উদ্দিনকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন টেকনাফের রঙ্গিখালীর বহুল আলোচিত গিয়াস বাহিনীর প্রধান গিয়াস উদ্দিন।

মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে জসিমের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে ০১৯৬৬৯২৩৬৭৬ নাম্বার থেকে কল করে ‘হত্যার পরবর্তী টার্গেট এবং দেখে নেয়ার’ মর্মে হুমকি দেয় বলে জানিয়েছেন জসিম উদ্দিন।

এরপর থেকে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত জসিম কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন (জিডি নং-২৯৪/২০২১)।

জিডিতে জসিম উল্লেখ করেন, আমি একজন সংবাদকর্মী। অনুসন্ধানি সংবাদ আমার নেশা। অপরাধের বিরুদ্ধে আমার কলম সর্বদা চলমান। সম্প্রতি টেকনাফের রঙ্গিখালীর গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ গিয়াস বাহিনীর নানা অপরাধ, অপকর্ম নিয়ে সংবাদ করি। স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় ধারাবাহিক অনুসন্ধানি, বস্তুনিষ্ট প্রতিবেদনের কারণে আমার উপর ক্ষুব্ধ হন সন্ত্রাসী গিয়াস। বিভিন্ন সময় নানা মাধ্যমে হুমকি পাঠায়।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে আমার নামীয় মুঠোফোন নাম্বারে ০১৯৬৬৯২৩৬৭৬ নাম্বার থেকে কল করে আমাকে ‘হত্যা করবে’ মর্মে হুমকি প্রদান করে হত্যাসহ বহু মামলার পলাতক আসামি সন্ত্রাসী গিয়াস। হুমকির অডিও রেকর্ড আমার কাছে সংরক্ষিত।

সাংবাদিক জসিম উদ্দিন আরো বলেন, আমি জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকায় রয়েছি। আমি প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উল্লেখ্য, গিয়াসের বিরুদ্ধে একই পরিবারের ৫ জনকে হত্যা, মাদক, অস্ত্রসহ নানা অভিযোগে দেড় ডজনের বেশী মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে প্রতিপক্ষের ঘর পুড়িয়ে দেয়ার। তিনি ‘থানার দালাল’ হিসেবে এলাকায় চিহ্নিত। তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাসের সময়কালে গিয়াসের ‘রামরাজত্ব’ চলতো। ওসি প্রদীপদের রাজত্ব নিঃশেষ হলেও বহাল তবিয়তেই রয়েছেন গিয়াসরা। নতুন আসা পুলিশ সদস্যদের সাথেও একই ভাবে সখ্যতা গড়ে কর্মকান্ড চালাচ্ছেন তারা। মামলা ও অভিযোগের পাহাড়ের পরও ‘রহস্যজনকভাবে’ ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন ‘টেকনাফের ত্রাস’ গিয়াস উদ্দিন।

শৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন শাখায় খোঁজ করে গিয়াসের নামে চলমান বেশ কিছু মামলার হদিস মিলেছে। মামলাগুলো হলো- জি,আর ৫৭৯/১৩ থা,মা,নং১৭ তারিখ ২৪/১০/১৩ ইং ধারা ১৪৩/১৪৭/৩০২/১০৯/১১৪/৩৪ দঃবি, জি,আর ৮০০/২০ থা,মা,নং ৬০ তারিখ ২১/৯/২০ ইং ধারা ৩০২/৩৪, মামলা-১৬৭/১৫ তারিখ ২৪/৫/১৫ ইং ধারা ১৪৭/৩২৪/৩২৫/৩০২/৩৪ দঃবি,মামলা নং ১৩৩/২০ তারিখ ৬/৫/২০ ইং ধারা ৩৮৫/৩০২/৩৪ দঃবি, নং-৫৫০/১৯ থা,মা,নং ১০৩ তারিখ ২৬/৬/১৯ইং ধারা ২০১৮ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ৩৬(১)এর১০ (খ), জি,আর ৭২/২০ থা,মা,নং ৭২ তারিখ ২১/১/২০ইং ধারা ২০১৮ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ৩৬(১)এর ১০(ক)/৪১।

জি,আর ২৬৬/১৭ থা,মা,নং১১৪ তারিখ ৩০/৩/১৭ইং ধারা ১৯৯০ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশো /৪)এর ১৯(১)টেবিল ৯(খ), জি,আর ৭০২/১৯ থা,মা,নং ২৩ তারিখ ৭/৮/১৯ইং ধারা ২০১৮ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ৩৬(১)এর ১০(ক), জি,আর ৫২৫/১৯ থা,মা,নং ৭৮ তারিখ ২১/৬/১৯ইং ধারা ২০১৮ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ৩৬(১)এর ১০(খ; জি,আর ৭১১/১৭ থা,মা,নং৭৭ তারিখ ৩০/৮/১৭ইং ধারা ১৯৯০ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (সং/৪ এর ১৯(১)এর টেবিল ৯(ঘ)/২৫; ৪৪৩/১৪ থা,মা,নং৬০ তারিখ ২৬/৮/১৪ইং ধারা ১৯৯০ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ৩৩/৪ এর১৯ (১)এর টেবিল ৯ (খ); জি,আর ৮১/১৫ থা,মা,নং ২ তারিখ ৩১/৩/১৫ইং ধারা ১৯৯০ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এর ১৯(১)এর টেবিল ৯(খ);

জি,আর ১০০/৬ থা,মা,নং১২ তারিখ ১৯/৫/৬ ইং ধারা ১৪৩/৩৪১/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৩৪ দঃবি; ৩৩৫/৮ থা,মা,নং ২৮ তারিখ ৩/১১/৮ ইং ধারা ১৪৩/৪৪৮/৪২৭/৩৮০ দঃবি; মামলা নং ১০০/২০ তারিখ ৩১/৬/২০ ইং ধারা ৩৯৫/৩৯৭ দঃবি; মামলা নং ১০৪/২০ তারিখ ২৩/৬/২০ ধারা ১৪৩/৩২৩/৩৯৪/৩৪/৪২৭/৫০৬ দঃবি; মামলা নং১১০/২০ তারিখ ২৩/৬/২০ ইং ধারা ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৪৪৮/৪২৭/৩৫৪/৩৮০/৩৭৯/৫০৬/৩৪ দঃবি; ৭১২/১৭ থা,মা,নং৭৮ তারিখ ৩০/৮/১৭ ইং ধারা ১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইন ১৯/এ এবং ১৯/(এফ); জি,আর ৫৪৭/১৯ থা,মা,নং ১০০ তারিখ ২৫/৬/১৯ ধারা ১৮৭৮ সনের অস্ত্র আইন ১৯/এ এবং ১৯(এফ)।

এসব মামলা ছাড়াও তার বাহিনীর হাতে নির্মম হত্যার শিকার একাধিক জনের ছবিসহ গিয়াস ও অন্য অস্ত্রধারীদের ছবি ও নাম উল্লেখ করে এলাকায় পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী কর্তৃক প্রচারের কথা উল্লেখ করে, সেই পোস্টারে লেখা হয়েছে-খুনিরা সবাই প্রকাশ্যে, আর কত লাশ হলে টনক নড়বে প্রশাসনের?

হ্নীলা রঙ্গীখালীর গিয়াস বাহিনী এক পরিবারের ৬জনসহ ১৩জনকে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। পরে উল্টো মামলা-হামলা করে হত্যা মামলার বাদিও স্বাক্ষীদের দু’শতাধিক পরিবারের ৭০০ গ্রামবাসীকে এলাকা ছাড়া করেছে। এভাবেই চলমান রয়েছে গিয়াস বাহিনীর তান্ডব।

হুমকি ও পোস্টারে উল্লেখ করা অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত গিয়াস উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু হুমকিতে ব্যবহার করা নাম্বারটি বন্ধ পাওয়ায় তাকে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। তারও কোন উত্তর না আসায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে টেকনাফ থানাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, সাংবাদিক জসিমকে হত্যার হুমকির বিষয় জিডি করা হয়েছে। সে সূত্র ধরেই এ বিষয়ে কাজ করছে পুলিশ। তার বা তার বাহিনীর সাথে পুলিশের সখ্যতার বিষয়টি সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, অপরাধী সবসময় অপরাধী হিসেবে গণ্য।

সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক জসিমকে হত্যার হুমকির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কক্সবাজার রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দ। চিহ্নিত অপরাধী গিয়াস বাহিনীর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি রাসেল চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সায়ীদ আলমগীর। অন্যতায় কর্মরত সংবাদকর্মীদের নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন