কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারের বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় বিরোধপূর্ণ জমি দখলে নিতে জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ও তার পিতা জেলা আওয়ামী লীগ নেতাকে ব্যবহার করে সমাজপতিকে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ পায়তারার অভিযোগ উঠেছে। মামা-ভাগিনাদের মাঝে ওয়ারিশি জমি ভাগবাটোয়ারা বিষয়ে চলমান একাধিক মামলা নিষ্পত্তির আগেই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতার ক্ষমতার দাপটে জমি দখলের প্রচেষ্টা চলায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বাগানবাড়ি-পুকুর সমেত ভিটায় দখলে থাকা মামাকে উচ্ছেদে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও ভাড়াটিয়া নিয়ে ভাগিনারা ঘটনাস্থলে যাবার পর পুলিশ গিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়ায়।
অন্যদিকে সেই জেলা আওয়ামী লীগ নেতার দাবি, আইনে কভার করায় তারা ওয়ারিশ হতে এ জমি কিনেই দখল বুঝে নিতে গিয়ে উল্টো আক্রান্ত হয়েছেন।
এনিয়ে দু-পক্ষ পৃথক ভাবে কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি ক্যাম্প সিকদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত মনির আহমেদ মুন্সির ছেলে সমাজ সর্দার নাছির উদ্দিন দাবি করেন, তার বাবার এক ছেলে (তিনি) পাঁচ মেয়ে। পিতার জীবদ্দশায় এক বোন মারা যান। আর বাবার পরে মারাযান আরো দুই বোন। পিতার মৃত্যুর পর শরীয়ত মতে চার বোন ও তিনি পৈত্রিক জমি বন্ঠন করে ভোগ দখলে রয়েছেন। কিন্তু বাবার আগে মারা যাওয়া বোন শীরয়ত মতে জমি না পেলেও তার (বোনের) সন্তানরা জমি দাবি করে আদালতে মামলা করেন। একাধিক আদালতে এ নিয়ে পৃথক পাঁচটি মামলা চলমান।

তিনি আরো বলেন, আদালত কি রায় দেয় সেই অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। ইত্যবসরে আমার বোনের ছেলেরা তাদের অংশ দাবি করে ৯০ শতক বিরোধীয় জমি জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানকে বিক্রির জন্য চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি একটি অফেরতযোগ্য আমমোক্তার নামা করেন। সেই মূলে ১৬ জানুয়ারি ওই জমির ২০শতক জমি ছাত্রলীগ নেতা মারুফ তার বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল হক মুকুলের সাথে বায়না চুক্তি করেছে বলে প্রচার করে। জমির মূল্য এক কোটি ৪৯ লাখ টাকা দেখিয়ে ৭০ লাখ টাকা গ্রহণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। একইদিন, আরেকটি বায়নায় আওয়ামী লীগ নেতা মুকুলের বিয়াই আমার প্রতিবেশী ফেরদৌসের নামে সাড়ে ১০শতক জমি বিক্রয় দেখায়। ওই জমিতে আমার বাগানবাড়ি ও পুকুর রয়েছে। বায়নার সূত্র দেখিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে অগণিত লোকজন নিয়ে জমি দখল করতে যান তারা। আমি ৯৯৯-এ কল দিয়ে পুলিশ এনে সংঘর্ষ এড়িয়েছি। এরপর জমির ক্রেতা-বিক্রেতা গ্রুপ তাকে পরিবারসহ হত্যা ও জমি হতে উচ্ছেদের হুমকি দিচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ নিয়ে ভাগিনাদের নামে জিডিও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, নাছিরের সংবাদ সম্মেলনের খবর পেয়ে একইদিন সন্ধ্যায় একই স্থানে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেন ওয়ারিশি অংশ দাবিদার নাছিরের দুই বোনের ছেলে নুরুল আমিন ও তানভীর হোসেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মামা মায়ের পৈত্রিক অংশ দিয়ে দিবে উল্লেখ করে প্রতারণা করে আসছে। বাধ্য হয়ে ২০১৪ সালে আমাদের অংশ আলাদা খতিয়ান করে নিয়মিত খাজনাও দিয়ে আসছি। তবে, দখল নিয়নি। এরই মাঝে টাকার প্রয়োজন হওয়ায় জেলা ছাত্রলীগ নেতা মারুফের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুকুল ও ফেরদৌসকে জমি বিক্রিরপর দখল বুঝে দিই। তারা জায়গায় সীমানা প্রাচীর ও স্থাপনা নির্মাণ করতে গেলে মামার লোকজন হামলা চালিয়েছে। এখন নিজের অপরাধ ঢাকতেই আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তার ছেলের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
নুরুল আমিন দাবি করেন, জমি নিয়ে চলমান বিরোধ থানার ওসি ও জেলা পরিষদ সদস্য মাদুর নেতৃত্বে কয়েক দফা বৈঠকেও সমাধান হয়নি।
অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল হক মুকুল বলেন, শরীয়াহ আইনে নয় রাষ্ট্রীয় আইনে বাবার আগে মারা যাওয়া মেয়ের ওয়ারিশগণ জমি পাবেন- সেটা আইনে কভার করায় আমরা জমিটি কিনেছি। এখন দখল নিতে গেলে তারা বাঁধা দিচ্ছেন।
পৈত্রিক সম্পদের মালিক নাছির উদ্দিন দাবি করেন, ওয়ারিশ হিসেবে আমার বোনের ছেলেরা জমি পেয়ে থাকলে আদালতের মামলা নিষ্পত্তির পর তাদের বুঝিয়ে দেবো। কিন্তু বিচার বিভাগকে অবজ্ঞা করে ভাগিনারা ক্ষমতার দাপটে জমি নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার বিজিবি ক্যাম্প সিকদার পাড়ায় জমি নিয়ে বিরোধ চলার বিষয়টি অবগত রয়েছে পুলিশ। যেহেতু জায়গা-জমির বন্ঠন ফায়সালা আদালতের এখতিয়ার, তাই দু’পক্ষকে আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর আগে যারা-ই আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটাতে চাইবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।













