২৮ অক্টোবর ২০২৫

কক্সবাজার পৌর সড়ক-উপসড়ক যেন মিনি জলাশয়, অন্তহীন দূর্ভোগ

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »

কক্সবাজার পৌর শহরের প্রধান সড়কসহ অর্ধশত উপসড়ক খানাখন্দগুলো পানিতে ভরে মিনি জলাশয়ে রূপ নিয়েছে। ছোটবড় গর্তে ভরা সড়কে চলতে গিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীসহ দূর্ঘটনায় পড়ছে ইজিবাইক (টমটম), রিক্সা, সিএনজি অটোরিক্সা ও মিনি যানবহন।

গত এক সপ্তায় অন্তত অর্ধসহস্রাধীক বিভিন্ন ধরণের যানবাহন এসব জলাশয়ে যাত্রীসহ উল্টে গিয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে। খানাখন্দকের কারণে প্রায় প্রতিটি সড়কে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঢেউয়ের তালে চলতে গিয়ে মোটর, বডিসহ নানা অংশ দ্রুত নষ্ট হওয়ায় অনেক যানবাহন বন্ধ করে দিয়েছে চলাচল। আবার চলাচল অব্যহত রাখা যানবাহনগুলো আদায় করছে নিয়মের দ্বিগুণ ভাড়া। এতে নিরুপায় নাগরিক জীবন দুবির্ষহ হয়ে উঠেছে।

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার হয়ে আসায় সড়কগুলোর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি ভূক্তভোগীদের। রাতের আধারে করা সংস্কারে বিটুমিন, মানহীন ইট-কংক্রিট দিয়ে কোন মতে দায়সারায় সংস্কারের সপ্তাহ পার না হতেই পূর্বের অবস্থায় ফিরছে সড়কের গর্তগুলো। ফলে দূর্ভোগ যেন নিত্যসঙ্গী হয়ে রয়েছে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার লোকজন ও অধিবাসীদের।

সরেজমিন দেখা গেছে, বাসটার্মিনাল হয়ে পৌস ভবনের থানা রাস্তার মাথা পর্যন্ত এলাকায় অধিকাংশ স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় অসংখ্য গর্ত। এর মাঝে আলির জাঁহাল মসজিদ এলাকায় কাউন্সিলর সাহাব উদ্দিনের বাড়ির সামনে, রুমালিয়ারছরা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন স্থান হতে তারাবনিয়ারছরা পর্যন্ত, কালুর দোকান বাজার এলাকা, বার্মিজ মার্কেট এলাকায় জলাশয়ের মতো বেশ কয়েকটি বড় গর্ত রয়েছে। ক্ষেত্র বিশেষে ১০ থেকে ২০ গজ পর্যন্ত দৈর্ঘ নিয়ে এসব গর্ত বিস্তৃত।

এছাড়াও উপ-সড়কের মাঝে পিটিস্কুল দক্ষিণ রুপমালিয়ারছরা, উত্তর তারাবনিয়ারছরা, খুরুশকুল রাস্তার মাথা সড়ক, কালুরদোকান-পাহাড়তলী সড়ক, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, সরকারি বালিকা ও বালক উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, চাউলবাজার সড়ক, বড়বাজার মসজিদ সড়ক, আইবিপি রোড়, বিকে পাল সড়ক, খানাকামসজিদ রোড়, পানবাজার সড়কসহ আরো কয়েক ডজন উপ-সড়কের অবস্থা চরম নাজুক।

নাজুক পরিস্থিতি হয়ে আছে ভিআইপি সড়ক হিসেবে পরিচিত সার্কিট হাউস সড়কটি। এখানেও হিলডাউন সার্কিট হাউসের একটু পশ্চিমে বিশাল অংশ জলাশয়ে পরিণত হয়ে আছে। সড়কে সৃষ্ট গর্তে বৃষ্টির পানি জমে পরিণত হয় মিনি পুকুরে। এসব গর্ত দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে যান চলাচল করতে গিয়ে নিয়মিত গাড়ি উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দূর্ঘটনা রোধে ধীর গতি নিতে গিয়ে সকাল থেকে গভীর রাতে লেগে থাকে যানজট। এতে নষ্ট হচ্ছে কর্মমূখী মানুষ ও শিক্ষার্থীদের কর্মঘন্টা।

ইজিবাইক (টমটম) চালক নুরুল আমিন, আবু তাহের, রফিকুল ইসলামসহ ভূক্তভোগী আরো অনেকে বলেন, গত ৭-৮দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে গর্তগুলো জলাশয়ের মতোই ঠেকেছে। এসব জলাশয় অতিক্রম করতে গিয়ে নষ্ট হয়েছে শতাধিক টমটমের মোটর। একেকটি মোটরের দাম ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। গর্তের পর গর্ত থাকায় ঢেউয়ের তালে চলতে গিয়ে টমটমের জয়েন্ট খুলে গেছে। নষ্ট হয়েছে অনেক যন্ত্রাংশ। ফলে দু’ট্রিপ চালিয়ে মেকানিকের দারস্ত হতে হয়েছে টমটম চালক বা মালিকদের। এতে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়া ১০ টাকার ভাড়ায় ২০ টাকা করে নিতে হচ্ছে। এতে বচসা বাধছে সকাল-বিকাল-রাতে। পৌরসভায় নিয়মতি টোল দিয়েও সড়কগুলোর এ অবস্থা সত্যি বেদনাদায়ক।

কক্সবাজার সিটি কলেজ সাহিত্যিকাপল্লীর বাসিন্দা রক্ষিত মার্কেটের ব্যবসায়ী এখলাছুর রহমান বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজার প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। কিন্তু শহরের প্রধান সড়কসহ অর্ধশত উপসড়ক খানাখন্দকে ভরে গিয়ে তৃতীয় শ্রেণীর পৌরসভার চেয়েও ধুকছে। বাসা থেকে বেরিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্টানে আসতে আলির জাঁহাল হয়ে পুরো সড়কের গর্তগুলো অতিক্রম করে হয়। বাসা থেকে ১৫ মিনিটে বাচ্চাদের স্কুলে (কক্সবাজার কেজি) পৌছার কথা হলেও মোটর সাইকেল নিয়েও এখন সময় যাচ্ছে ঘন্টার উপর। সরকারের সময়ে সরকারি দলের লোক পৌর চেয়ারম্যান, এরপরও এ দূর্ভোগ মানুষকে আওয়ামীলীগের প্রতি বিরূপ করে তুলছে।

জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান সড়কটি সড়ক ও জনপদের (সওজ) ছিল। কিন্তু প্রসস্ত ও উন্নয়নের আওতায় আনতে বিগত কয়েক বছর ধরে চিঠি চালাচালির পর ২০১৮ সাল হতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সড়কটি। কিন্তু কউকের দেয়া প্রসস্থ করণে প্রকল্প চূড়ান্ত না হওয়ায় সড়কে হাত দিতে পারেনি সংস্থাটি। ইত্যবসরে সওজ বিভাগও আর রক্ষণাবেক্ষণ করেনি সড়কটির। ফলে কয়েক বছর সড়কটি অভিভাবকহীন হয়ে স্থায়ী সংস্কারে পড়েনি। তার উপর যানবাহনের অতিচলাচল সড়কটি দিনে দিনে ক্ষয় হয়ে নাজুক অবস্থায় পড়েছে।

এছাড়াও উপ-সড়কগুলো পৌর জনপ্রতিনিধি সিন্ডিকেটের করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সংস্কার করায় অল্পদিনেই আবারো ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। চলতি বর্ষায় এ ভঙ্গুরতার মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌছে।

পৌরসভার ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের কালুরদোকান এলাকার বাসিন্দা আজিজ মওলা চৌধুরী বলেন, প্রধান সড়কের দূর্ভোগ এড়াতে উপ-সড়কে চলতে গিয়ে ভোগান্তি আরো বাড়ে। সড়কের ঝক্কি ঝামেলার কারণে বাচ্চাগুলো অনিহা প্রকাশ করে বিদ্যালয়ে যেতে। অবস্থা দেখলে মনে হয় পৌরসভাটি অভিভাবকহীন হয়ে চলছে।

কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা হলেও প্রধান ও উপ-সড়কগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রসস্থ। কিন্তু এখানে যানবাহন চলাচল ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি। ফলে নিয়মমতো সংস্কার করা হলেও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত টিকছে না। শহরের ভেতর খানাখন্দকে ভরে যাওয়া বেশকিছু উপ-সড়ক সংস্থারে ইতোমধ্যে প্রায় ৮৭ কোটি টাকার টেন্ডার সম্পন্ন করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত থামলেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওয়ার্ক অর্ডার সরবরাহ করা হবে।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কউক) চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, পরিকল্পিত নগরায়ণের লক্ষ্যে সড়কটি কউক নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। গত দুই মাসে সড়কটির বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্নভাবে একাধিকবার সংস্কার করা হয়। যান চলাচলের বাড়তি চাপ ও টানা বৃষ্টিতে আবারো পুরো সড়কজুড়ে মারাত্মক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান সড়ক প্রসস্থ করণে একনেকে অনুমোদন হওয়া প্রকল্পের কার্যাদেশ অতি শীগগিরই পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। কার্যাদেশ আসার আগেই যথা সম্ভব মেরামত করে সড়কটি যান ও জন চলাচল উপযোগী করা হবে।

বাংলাধারা/এফএস/এমআর

আরও পড়ুন