কক্সবাজার প্রতিনিধি »
র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, মাদক সমস্যা একদিনে তৈরি হয়নি, তাই এটি চাইলেই নির্মূল অসম্ভব। কক্সবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের চেয়ে অনেক ভালো। সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ নিজ অবস্থান থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করলে মাদকের ডিমান্ড ও সরবরাহ কমানো সম্ভব। এ লক্ষ্য নিয়ে মাদক নির্মূলে র্যাব নিরলস নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত করতে অভিযানের পাশাপাশি বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে ‘নবজাগরণ : অপরাধকে না বলুন’ শীর্ষক কর্মশালায় র্যাব ডিজি এসব কথা বলেন।
র্যাব ডিজি আরো বলেন, জলদস্যু, মাদককারবারি, সন্ত্রাসী ও জঙ্গি দমনে র্যাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। দেশ এখন জঙ্গিমুক্তও বলা যায়। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। সবধরণের অপরাধ নির্মূলে সংঘঠিত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাচ্ছেন র্যাব সদস্যরা।
তিনি আরও বলেন, শুধু অপরাধ দমন নয়, নানা কর্মমুখী কর্মপরিকল্পনায় অপরাধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাও চলে। জঙ্গিদের অনেককে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো হয়েছে। সীমান্তবর্তী কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত করতে অভিযানের পাশাপাশি বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
র্যাব সূত্র মতে, অপরাধমুক্ত সমাজ গড়তে ‘নবদিগন্তের পথে’ প্রকল্পের পর পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)’র নতুন উদ্যোগ হলো ‘নবজাগরণ’ প্রকল্প। এটি মূলত সমাজের পিছিয়ে পড়া, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া-বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার কাজ করবে। এর ফলে অপরাধ করার ঝুঁকিতে থাকা লোকজন সুন্দর জীবন গঠতে সহায়ক হবে। অপরাধ প্রতিরোধ বিষয়ক সাম্প্রতিক স্ট্র্যাটেজির আওতায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার স্লোগান হলো- ‘নবজাগরণ-অপরাধকে না বলুন’।
র্যাব সূত্র আরো জানায়, অপরাধে জড়ানোর ঝুঁকিতে থাকা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি, শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়া ব্যক্তি, বেকার ও স্বল্প উপার্জনকারী এবং অপরাধপ্রবন লোকদের চিহ্নিত করে স্বাবলম্বী করার প্রয়াস নিয়ে ‘নবজাগরণ-অপরাধকে না বলুন’ শীর্ষক ৩ সপ্তাহব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য হলো- পর্যটন নির্ভর পেশা, হোটেল-রেস্টুরেন্টে সার্ভিস বয়, ট্যুরিস্ট গাইড, ফটোগ্রাফার, সার্ফিং ও ড্রাইভিং। এছাড়া নারীদের সেলাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হবে।
প্রাথমিকভাবে ৩৫ জন নারী-পুরুষকে এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে বলে আশা করছে র্যাব।
এর আগে ‘নবদিগন্তের পথে’ র্যাব যেসব কাজ করেছে, সেগুলো ছিল পোস্ট ইন্টারভেনশন। যাদের পোস্ট ইন্টারভেনশন কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়, তারা আগে থেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিল। আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে, কিছুটা ক্ষমা করে পুনর্বাসনের মাধ্যমে তাদের সমাজের মূল ধারায় আনা হয়। এবার আর্লি ইন্টারভেনশনে যাদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তারা এখনো অপরাধে জড়ায়নি। তবে জড়ানোর ঝুঁকিতে আছে।
পোস্ট ইন্টারভেনশন কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে ৪২১ জন অপরাধীকে আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে ‘নবদিগন্তের পথে’ কর্মসূচির মাধ্যমে ১৬ জন জঙ্গি এবং সুন্দরবন ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪০৫ জন জলদস্যুকে স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ পায়।
নবজাগরণের আওতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করাই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। যাদের পাইলট প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়েছে, তাদের সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে। এর মাধ্যমে পুরো পরিবার স্বাবলম্বী হবে বলে বিশ্বাস আয়োজকদের।













