বিশেষ প্রতিবেদক »
সরকার কঠোর লকডাউনে করোনা প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নিলেও মাস্ক নিয়ে উদাসীনতা মানুষের। মাস্ক ব্যবহারে নানা কৌতুহলী মন্তব্য শোনা যাচ্ছে রাস্তায়। মসজিদসহ নানা ধর্মীয় উপাসনালয়েও তেমন কোন কঠোরতা নেই। গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছে। নিরাপদ দূরত্বের বালাই নেই আর নেই করোনাভীতিও। ফলে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা আর প্রেগোডায়ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনীহা স্রষ্টা প্রেমিকদের। তবে প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে এমনটিই হচ্ছে এমন মন্তব্য সচেতন নাগরিকদের।
গত জুন মাসেও নগরীর বিভিন্ন স্থানে ফ্রি মাস্ক বিতরণের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে পুলিশ। তবে ফ্রি মাস্ক অনেকটা মিলাদের তবারকের মতো চারদিক থেকে হাত উঁচিয়ে অনেকে নেয়ার চেষ্টা করেছেন নগরীর বিভিন্ন স্পটে। ফ্রি পেয়ে কেউ বলেছেন, ‘আমাকে দুটো দিন, আবার কেউ বলছেন আমার পরিবারের সদস্য বেশী। দুয়েকটা বেশী দিন।’ এরমধ্যে একজন অভিযানে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেই বসলেন, ‘আপনাদের মাস্কগুলো সুন্দর আর ভালো মানের। কিন্তু ফ্রি গুলোর অবস্থা এতো করুণ কেন? আপনাদেরটাই সুন্দর লাগছে তাই আপনাদেরটাই নেব।’
এমনও দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন তাদের মাস্ক খুলে পকেটে ও কোমরে গুঁজিয়ে নতুনটা নেয়ার জন্য উদগ্রীব ছিল। তবে সেখানে প্রশ্নের জবাবে উত্তর মিলেছে আগেরটা পুরাতন। তাই এতে করোনা ভাইরাসও আটকায় না। এমনও দেখা গেছে ফ্রি মাস্ক দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে নতুনটাই কোমরে গুঁজিয়েছে আরেকটি নেয়ার জন্য। প্রশ্নের জবাবে পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও দরকার। তাছাড়া কয়েকটা পাওয়া গেলে ম্যাচিং করে বাসার ভেতরে পরা যাবে।

সোমবার নগরীর বিভিন্ন রাস্তার ধারে থাকা ছোটখাট দোকান বা অনেক টং দোকানের সামনেও দেখা গেছে, কেউ কেউ ব্যক্তি মাস্ক কানে ঝুলিয়ে ধূমপান করছেন। প্রশ্নের জবাবে উত্তর আসছে- ‘মাস্ক পরলে কথা বলতে ও শুনতে অসুবিধা হয়। ফলে মাস্ক সঙ্গেও থাকলেও, লাগানো হয়না।’
নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় কুতুবদিয়া থেকে আসা শাহ মোয়াজ্জেমকে মাস্ক না পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক ময়লা হয়ে গেছে। ধুইতে দিছি। ফিরে গিয়ে পরে নেব। অপরিস্কার মাস্কতো বোঝেন স্বাস্থ্য সম্মত নয় আবার এ ধরনের মাস্ক ভাইরাসও প্রতিরোধ করতে পারবে না!’

আবার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের পক্ষ থেকেও মাস্ক বিতরণের উদ্যোগ নিলেও ঘটনাস্থলে নানা প্রশ্নের যেমন উদ্ভব হয়েছে, তেমনি উদ্ভট কথারও যোগান মিলেছে ওই কর্মসূচিতে। মাস্ক নেই প্রশ্নে এমনও বলা হয়েছে, মাস্কের খুচরা দোকানে দাম বেশি। আবার নগরীর দারুল ফজল মার্কেটের পাইকারী দোকানগুলোও বন্ধ। ফলে কমদামেও পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে সচেতন নাগরিকরা বলছেন, মাস্ক ব্যবহারকারীদের অজুহাতের অন্ত নেই। সম্প্রতি বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে গিয়ে নানা অবান্তর প্রশ্ন আর হাস্যরসের সম্মুখীন হয়েছে বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন। এক হাজার ফ্রি মাস্ক বিতরণ করতে গিয়ে দেখা গেছে তিন হাজার মাস্ক বিতরণ করলেও সঙ্কট থেকে যায়। কিন্তু ফ্রি মাস্ক নিতে আসা বেশিরভাগই নিজেদের ব্যবহৃত মাস্ক পকেটে গুঁজে ফ্রি মাস্ক নেয়ার চেষ্টা করেছে।

গত বছর হাটহাজারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন তার ফেইসবুক পেইজে ফ্রি মাস্ক বিতরণ নিয়ে লিখেছিলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ও করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। যারা মাস্ক পরতে চান না তাদের সচেতন করতে ফ্রি মাস্ক বিতরণের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এ কর্মসূচিতে সরকারী পরিকল্পনা অনুযায়ী যারা মাস্কবিহীন থাকেন, তাদের মাস্ক দেয়ার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার না করা হলে জরিমানার বিষয়টিও সতর্ক করা। ফ্রি মাস্ক বিতরণে পুলিশের ফোর্সও ছিল। আগত একজনের প্রশ্ন-ফ্রি মাস্ক বিতরণ করতে পুলিশের প্রয়োজন কেন। এক্ষেত্রে উত্তর উঠে আসে নিজের মাস্কটা যেন হাতছাড়া না হয় সে জন্যই পুলিশের প্রয়োজন। ’
বাংলাধারা/এফএস/এআই













