৮ ডিসেম্বর ২০২৫

কপ২৬ সম্মেলন: বৈশ্বিক তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে শেষ সুযোগ

বাংলাধারা ডেস্ক»

স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে রোববার (৩১ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৬), যা আগামী ১২ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। সম্মেলনে বাংলাদেশ সহ দুই’শ দেশের নেতৃবৃন্দ যুক্ত হয়েছেন। সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার নানা দিক নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

সম্মেলনে দেশগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হবে, কীভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনতে চান।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এই সম্মেলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। প্যারিস চুক্তির পরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলন দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে

‘কপ’ মানে ‘কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ’। এটি জাতিসংঘের একটি উদ্যোগ। ১৯৯৫ সালে কপের প্রথম সম্মেলন হয়। গ্লাসগোতে হচ্ছে কপের ২৬তম সম্মেলন। তাই একে বলা হচ্ছে ‘কপ-২৬’।

বর্তমান বিশ্বে দীর্ঘদিন ধরে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে ব্যাপক পরিমাণ ক্ষতিকারক গ্যাস পরিবেশে ছড়িয়েছে। যার প্রভাবে পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। পরিণতিতে আবহাওয়া দিনের পর দিন চরম ভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। বাড়ছে নানান প্রাকৃতিক দূর্যোগ। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বনাঞ্চলে আগুন, বন্যা এবং সাইক্লোনের প্রকোপ বাড়ছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব হচ্ছে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবং এই পরিবর্তনের গতি ঠেকাতে প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ।

২০১৫ সালে প্যারিস সম্মেলনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নামিয়ে আনার ব্যাপারে একমত হয়েছিলেন বিশ্ব নেতারা।

এটিই প্যারিস চুক্তি নামে পরিচিত। এই চুক্তিতে অঙ্গীকার করা হয় ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে।

কপ-২৬ এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকবে ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী অলোক শর্মা। আয়োজক দেশ হিসেবে ব্রিটেন চাইবে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমাতে। এ ছাড়া পরিবেশ রক্ষায় দেশগুলোর কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার আশা করবে আয়োজক ব্রিটেন।

গ্লাসগোতে হাজির হওয়া ব্যাক্তিদের মধ্যে আছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, মীমাংসাকারী এবং সাংবাদিক। আছেন হাজার হাজার অ্যাকটিভিস্ট এবং বহু ব্যবসায়ীও। এদিকে, রেবেলিয়ান এক্সটিংশনের মত কট্টর পরিবেশবাদী গোষ্ঠী এখনই জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করার দাবি করছে।

সম্মেলনে ইলেকট্রিক কার বা ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবহার দ্রুত বাড়ানো, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ থেকে দ্রুত সরে আসা। গাছ কাটার মাত্রা কমানো, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আরো মানুষকে রক্ষা করা এবং তার জন্য উপকূলীয় বাঁধ এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা জোরালো করা-এ বিষয়গুলোর উপর জোর দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।ETTY IMAGES

রাজনৈতিক অঙ্গীকারের দাবিতে গ্লাসগোতে সম্মেলনস্থলের বাইরে ইতিমধ্যেই ছোটখাটো বিক্ষোভ শুরু করেছেন পরিবেশ আন্দোলনকারীরা

সম্মেলনের শেষে, একটি সর্বসম্মত ঘোষণা আসতে পারে বলে আশা করতে হচ্ছে যাতে সুনির্দিষ্ট সব অঙ্গীকার থাকবে। সব দেশকে সেই ঘোষণায় সই করতে হবে।

২০০৯ সালে ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির আশপাশে নেই তারা। যার কারণে সম্মেলনে প্রচুর তর্কবিতর্ক হতে পারে।

তোপের মুখে থাকতে পারে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর কয়েকটি, বিশেষ করে চীন। কারণ জলবায়ু সংকট সৃষ্টির জন্য ৮০ শতাংশ দায়ী চীন। উন্নত দেশগুলোর কারণে জলবায়ু সংকটে পড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর দাবি করা ক্ষতিপূরণ আদায়ের স্পষ্ট নির্দেশনা আশা করতে পারে দেশগুলো।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বেশির ভাগ দেশেরই লক্ষ্য যখন কার্বন নিঃসরণ, তখন এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর নেওয়া পরিকল্পনাগুলোই বলে দেবে তারা সঠিক পথে আছে কিনা। ১২ দিনব্যাপী এ সম্মেলন থেকে নতুন নতুন ঘোষণা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অগ্রগতি বিষয়েও আসতে পারে অন্য কোনো নির্দেশনা। জলবায়ু পরামর্শক ও কর্মীদের নানা প্রস্তাবনা অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর জন্য নীতিমালায় সংশ্লিষ্ট করার পরামর্শ কিংবা নির্দেশনাও থাকতে পারে।

যেমন, জীবাশ্ম জ্বালানি পরিহারে বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং জ্বালানিবিহীন যানের (সাইকেল) ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার থেকে সরে আসা, সবুজায়ন তথা বনায়ন বৃদ্ধির তাগিদ, উপকূলীয় মানুষ, সম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ।

বাংলাধারা/এফএস/এফএস

আরও পড়ুন