২ নভেম্বর ২০২৫

করোনাকালে একজন মানবিক যোদ্ধা জ্যোতির্ময় ধর

বাংলাধারা প্রতিবেদন  »

করোনার প্রকোপে দেশ যখন বিপর্যস্ত তখন চট্টগ্রামে সাধারণ থেকে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তারুণ্যের প্রতীক প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর । চট্টগ্রামের এক আলোকিত পরিবারের সন্তান প্রকৌশলীর জ্যোতির্ময় ধর নিতান্তই মনের তাগিদে করোনাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় নিজের অর্থে রাতদিন ছুটে চলেছেন সাধারণ মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে। কখনও দেখা গেছে চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে ছুটছে রোগীদের দোরগোড়ায়, কখনও করোনা আক্রান্তদের জন্য অক্সিজেন সরবরাহে এবং আবার কখনও করোনায় মৃতদের সৎকারের ব্যবস্থার জন্য।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক রণজিৎ কুমার ধর ও চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রীতা দত্তের একমাত্র সন্তান প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর। প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর জার্মান ইনস্টিটউট অব অলটারনেটিভ অ্যানার্জিতে রিসার্চ অফিসার ও জার্মান ইনস্টিটউট অব অলটারনেটিভ এনার্জির বাংলাদেশ প্রতিনিধি।

তড়িৎ প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর দীর্ঘ ১৯ বছর পর গত বছরই দেশে ফিরেছিলেন। জার্মান ইন্সিটিউট অফ অলটারনেটিভ এনার্জির বাংলাদেশ প্রতিনিধি হয়ে পাওয়ার সেক্টরে বিনিয়োগের লক্ষ্যে । দেশে ফেরার অল্প কিছু দিনের মধ্যেই মুখোমুখি হন করোনায় সংকটাপন্ন এক নগরীর । চিরচেনা সেই প্রাণের চট্টলা যেন অন্যরূপে আবির্ভূত হতে চলছে। ‘লকডাউন’- নামক বিধি-নিষেধে ঘরে বসে থাকার পাত্র নয় জ্যোতির্ময়।

করোনা মহামারি থামিয়ে দিয়েছে বিশ্বের অনেক উন্নত, সমৃদ্ধশালী ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্রকেও। থমকে যাওয়া পৃথিবীতে প্রাণের নগরী চট্টলার অসহায় পরিবারগুলোর কথা ভাবতেই অদম্য জ্যোতির প্রাণ কেঁদে উঠে। নিজের সর্বস্ব দিয়ে যুক্ত হয়ে পড়েন মানবিক কর্মযজ্ঞে। মানবতার চরম এ দুর্দিনে এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন জ্যোতির্ময় ধর । বৈশ্বিক বিপর্যয় আর মানবিক বিপর্যয় একাকার হয়ে তৈরি হওয়া যুগপৎ মানবিক সঙ্কটে জ্যোতির্ময় ধরের মহতী এই কার্য্যক্রম সত্যি প্রশংসামুখর ।

বিগত ২৭ শে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তিনি চট্টগ্রাম শহরের প্রায় পাঁচ হাজারের মতো অসহায় নিম্ন মধ্যবিত্ত- মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশাপাশি ভাসমান মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এই পর্যন্ত নিজের অর্থসহ তার আরো দুইজন বন্ধুর সহযোগিতায় প্রায় ২১ লাখ টাকার উপহার সামগ্রী, রান্না করা খাবার, করোনা মোকাবেলার সামগ্রীসহ করোনা আক্রান্ত মানুষের মাঝে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করেছেন তিনি।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর ফুটপাতে ভাসমান মানুষের পাশাপাশি নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত সহ নানান শ্রেণী-পেশার মানুষের পাশে ছুটে গেছেন উপহার সামগ্রীর ব্যাগ নিয়ে অথবা রান্না করা খাবার নিয়ে । যখনই তার কাছে যেখান থেকে ফোন এসেছে নিজের গাড়ি নিয়ে সেখানেই উপহারসামগ্রী ব্যাগ নিয়ে ছুটে গেছেন।

কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জ্যোতির্ময় বলেন, ‘মানুষের বিপদে-আপদে পাশে থাকতে আমার ভালো লাগে। প্রবাসেও আমি একাজের সাথে যুক্ত ছিলাম।’

করোনায় আক্রান্ত চট্টগ্রামের ৫০ জন গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য পুষ্টিকর ফলমূল সমৃদ্ধ উপহার নিয়ে তাদের খোঁজখবর রেখেছেন এই প্রকৌশলী। এছাড়া, নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন করোনা-আক্রান্ত সাংবাদিকদের ।

ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম সংবাদপত্র কম্পিউটার অপারেটর এসোসিয়েশন এর মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পরা ৫০ জন সংবাদপত্র কম্পিউটার অপারেটর এর পরিবারকে ১০ দিনের শুকনা খাদ্য ও মানবিক সাহায্য প্রদান করেন। করোনা পরিস্থিতিতে কাজ হারানো ১০০ জন সাংবাদিকের পরিবারকে তিনি খাদ্য মানবিক সাহায্য ও উপহার প্রদান করেন ।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে কর্মরত সকল ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী, পিয়ন, নৈশ প্রহরিদের জন্য ঈদ উপহার নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান তিনি।

লকডাউন পরিস্থিতিতে যুব রেডক্রিসেন্ট চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন । সেই সাথে বিশিষ্ট সাংবাদিক তুষার আব্দুল্লাহ কর্তৃক পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “করোনায় তারুন্য” চট্টগ্রামের ত্রাণ কর্মী হিসেবে মাঠে আছেন ।

জ্যোতির্ময় ধর শুধু চট্টগ্রামেই নয় , ঢাকার সেচ্ছাসেবী নাফিসা আনজুম খানের মাধ্যমেও অনেক পরিবারের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ।

করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন ও সৎকার কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবীদের জন্যও তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন সহায়তার হাত এবং করোনা পরিস্থিতিতে অর্থ কষ্টে থাকা কয়েকটি অনাথ আশ্রম ও এতিমখানায় ও তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন মানব কল্যাণে সাহায্যের হাত ।

গত ঈদে প্রকৌশলী জ্যোতির্ময় ধর ও ঢাকার স্বেচ্ছাসেবী নাফিসা আনজুম খান এর যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রামে করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া ২০০ জন নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের হাতে তাঁরা তুলে দেন ব্যাতিক্রমধর্মী উপহার ।

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে নগরীর চন্দনপুরা, চকবাজার এলাকায় অসহায় ও কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায় দুই শতাধিক সনাতন পরিবারকে পূজার উপহার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন।

বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত উদ্য্যোগ অসহায় রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করে যাচ্ছেন।

এছাড়া আসন্ন শীতকালীন করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঢাকার সেচ্ছা সেবী নাফিসা আঞ্জুম খানের সাথে যৌথ উদ্যোগে অসহায়দের জন্য শীতের কাপড় সংগ্রহ প্রকল্পে চট্টগ্রামের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এই যোদ্ধার প্রিয় ব্যাক্তিত্ব শহীদ জননী জাহানারা ইমাম

বাংলাধারা/এফএস/এআই

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ