৪ নভেম্বর ২০২৫

করোনায় পাল্টে গেছে নাগরিক জীবন

তারেক মাহমুদ »

ট্রাফিক জ্যাম, গাড়ির অনবরত হর্ন, কিংবা প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস—সবই বদলে গেছে। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের চিরাচরিত চিত্র গ্রাস করেছে করোনা ভাইরাস। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া পথেঘাটে মানুষ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তাই শিক্ষার্থীদেরও আনাগোনা কম। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যাও কম। গণপরিবহনে যাত্রীও কম। সবকিছু মিলিয়ে পাল্টে গেছে নাগরিক জীবন।

৩১ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান নিশ্চিত করতে বুধবার (১৮ মার্চ) স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) নগরীর রাস্তাঘাট ঘুরে দেখা গেছে, বেশ ফাঁকা। নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, টাইগারপাস, ওয়াসা, জিইসি এলাকায় লোক সমাগম ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নগরীর ব্যস্ততম এলাকাগুলো ছিল প্রায়ই জনশূন্য। দিনের বেলা সেখানে বাসচালকদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে যাত্রীর জন্য। অথচ অন্যান্য দিন যাত্রীদের লাইন লেগে থাকে এই এলাকায়।

যাত্রীর জন্য অপেক্ষমান ১০ নং রুটের বাস চালক আফজালের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে পরিবহনে এবং রাস্তায় যাত্রী কম। তিনি জানান, স্কুল কলেজ বন্ধ, রাস্তায় মানুষ কম, বাসে যাত্রী নাই, তাই আয়ও কম।

নগরীর চকবাজার এলাকা কোচিংপাড়া নামে খ্যাত। এই এলাকায় অনেক কোচিং সেন্টার আছে। সরকারের নির্দেশে এখন তাও বন্ধ। কয়েকটি কোচিং সেন্টারের সামনে ঘুরে দেখা যায়, সেখানে নোটিশ টাঙানো। নোটিশে লেখা—শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু আছে। সেখানে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু অফিস খোলা, ক্লাস বন্ধ।

করোনা আতঙ্কে প্রভাব পড়েছে নগরীর নিম্ন আয়ের মানুষের ওপরে। নগরীতে লোক সমাগম কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাটা পড়েছে তাদের রোজকার আয়ে।

দেওয়ানহাট এলাকায় ফজলু মিয়া নামক এক রিকশাচালক জানান, সকালে স্কুলের সময় থেকে প্যাসেঞ্জারের চাপ থাকলেও এখন নেই। তাই কমেছে আয়। একারণে ভাড়া নিয়ে এখন বেশি দরদাম করছেন না।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন ফারহানুল ইসলাম। অফিস যেতে প্রতিদিন গণপরিবহন ব্যবহার করলেও করোনার আতঙ্কে কয়েকদিন ধরে তিনি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, ‘স্কুল-কলেজ বন্ধ হলেও অফিস বন্ধ নেই। গণপরিবহনে এই সময় যাতায়াত করা রিস্ক। তাই কয়েকদিন ধরে বাইকে অফিসে যাচ্ছি। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকা।’

প্রসঙ্গত, বুধবার দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এদিন নতুন করে চার জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এদের মধ্যে একজন নারী ও তিন জন পুরুষ। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭ জন। আইসোলেশনে আছেন ১৬ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৪২ জন।

এদিকে, চট্টগ্রামে আজ বিদেশ ফেরত আরও ১১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট ১০২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।

সিভিল সার্জন ফজলে রাব্বি বাংলাধারাকে জানান, বুধবার চট্টগ্রামে ১১ জন প্রবাসী এসেছেন। এরা সবাই যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত এবং ইতালিফেরত যাত্রী। যেহেতু তারা করোনাদুর্গত দেশ থেকে ফিরেছেন তাই তাদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন