২৮ অক্টোবর ২০২৫

করোনার বৈশাখে নারীর খোপায় ওঠে নি ফুল, লোকসানে ব্যবসায়ীরা

তারেক মাহমুদ » 

প্রতি বৈশাখেই নারীরা মাথায় ফুল দিয়ে নিজেকে সাজিয়ে তোলেন। পয়লা বৈশাখে নারীর সাজ যেন ফুলের মাঝেই পূর্ণতা পায়। শাড়ির পরে, মাথায় ফুলের ব্যান্ড দিয়ে তরুণীরা ঘুরে বেড়ান এখানে-ওখানে। কেউ কেউ খোপায় আটকে রাখেন গোলাপ কিংবা গাঁদা। তবে এবার এসবের কিছুই হচ্ছে না। প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সবাইকে ঘরেই পয়লা বৈশাখ উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে ফুলের দোকানগুলোও।

মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) নগরীর মোমিন রোড ও চেরাগী পাহাড় এলাকায় গড়ে ওঠা ছোট-বড় ৬২টি ফুলের দোকানের অধিকাংশই এখন বন্ধ। কিছু দোকান খোলা রয়েছে। তবে করোনাকালে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় জমেনি বৈশাখের ফুল বিকিকিনি।

ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে যান চলাচল একপ্রকার বন্ধ থাকায় এবং সামাজিক অনুষ্ঠান, বিয়ে ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবছর ফুল বিকিকিনিতে ভাটা পড়েছে। আগে থেকে বুকিং করা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও বিয়ের জন্য ফুল সরবরাহের কার্যাদেশও বাতিল হয়ে গেছে।

ফুল বিক্রেতা সুশীল বাংলাধারাকে জানালেন, এই ফুলের দোকান করেই তারা বাবা-ছেলে সংসার চালান। কিন্তু ২৫ মার্চ থেকে দোকান বন্ধ। পয়লা বৈশাখের আগের দিন দোকান খোলা যাবে কিনা তা দেখতেই তিনি এসেছেন। এসে দেখেন, দোকানে থাকা গাঁদা আর রজনীগন্ধা শুকিয়ে গেছে। তাই ফেলে দিয়েছেন ডাস্টবিনে।

পাশেই ছিলেন রোজ পুষ্প বিতানের মালিক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, প্রতি বৈশাখে অন্তত ৫০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু এবার দোকান বন্ধ। এক টাকারও ফুল বিক্রি হবে না। তাই নতুন করে ফুলও আনেননি। এ জন্য পয়লা বৈশাখের আগের দিন বাজারের পরিস্থিতি দেখতে এসেছেন। দোকান খোলার মতো অবস্থা থাকলে ফুলের অর্ডার দিতেন। কিন্তু সে অবস্থা নেই।

কাশেম বলেন, দোকানে সব সময় তার আটজন কর্মচারী কাজ করেন। তারা মালা গাঁথেন, ফুলের ব্যান্ড তৈরি করেন। ফুল বিক্রি করেন। ২৫ মার্চ থেকে দোকান বন্ধ। কর্মচারীরা বেকার। সংসার চলছে না। তাদের কথা কী বলব! আমাদের নিজেরই তো সংসার চলছে না। খুব বিপদে পড়েছি।

তার কথায় সাঁয় মেলালেন সুশীল প্রসাদ গুপ্ত। বললেন, ফুলের ব্যবসায় জড়িয়ে এতো খারাপ সময় কখনও আসেনি। কত মানুষ কত ত্রাণ পাচ্ছে, আমরা কিছু পাইনি। আমাদের কেউ খোঁজ নেয়নি।

পুষ্পমেলা দোকানের কর্মচারী সুকচাঁদ আলী বাংলাধারাকে বলেন, দোকান খুললে ৩০০ টাকা পেতাম। কিন্তু দোকান খোলা সম্ভব হচ্ছে না। দফায় দফায় দোকান বন্ধ রাখার সময় বাড়ছে। কিন্তু আমাদের দিকে কেউ তাকাচ্ছে না। দিন কিভাবে যাচ্ছে, আমরাই জানি। এভাবে চলতে থাকলে গলায় দড়ি দিতে হবে!

চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম বাংলাধারাকে বলেন, করোনার প্রভাবে আমরা ফুল ব্যবসায়ীরা দিশেহারা। প্রতিনিয়ত লোকসানের শিকার হচ্ছি। বিকিকিনি না থাকলেও দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, বিক্রয় কর্মীদের বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৪-৫ লাখ টাকার বিয়ের অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এই লোকসান আরও বাড়বে।

এদিকে শুধু ব্যবসায়ীরা নন, লোকসান গুনছেন ফুল চাষিরাও। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ফুলের বাজার গড়ে ওঠেছে। দেশের ছয় হাজার হেক্টর জমিতে এখন ফুল চাষ হচ্ছে।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন