৪ নভেম্বর ২০২৫

করোনার ছোবল মিঠানালায় ; আতঙ্ক ছড়ালো পুরো মিরসরাইয়ে

শাহ আব্দুল্লাহ আল রাহাত »

করোনাভাইরাসের আতঙ্ক ছড়ালো চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠানালায়। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সকালে এ নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়ায় গ্রামে। গ্রামের মানুষজন ঘুম থেকে উঠেই দেখে প্রশাসনের লোকজন এলাকায় টহল বাড়িয়েছে। কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করার কাজ চলছে। তার আগেই ভোররাতে সেহরির সময় এলাকার মসজিদের মাইকে সর্তক করে করোনারোগী সনাক্তের ঘোষনা করা হয়েছে।

সোমবার (২৭ এপ্রিল) রাতে ফৌজদারহাটে অবস্থিত বিআইটিআইডি জানিয়ে দিলো মিরসরাইয়ে আরো একজনের দেহে করোনা পজিটিভ। সেই সাথে গণমাধ্যমকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি। তবে এবার করোনা হানা দেয় রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবকের দেহে। যিনি উপজেলা মিঠানালা ইউনিয়নের ১ ওর্য়াডে অবস্থিত মোল্লা বাড়ির বাসিন্দা।

পেশায় প্রাইভেটকার চালক। রফিকুলের করোনা উপসর্গের লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে গত ১০ দিন আগে থেকে। সর্বশেষ ২১ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহের পর গতকাল রাতে তার দেহে কোভিড ১৯ আক্রান্তের খবর প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।

করোনা সংক্রমিত হওয়ার আগে নিয়মিত মধ্যম মিঠানালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ফুটবেল খেলতেন রফিকুল। সর্বশেষ খেলেছিলেন ১৮ এপ্রিল। এই নিয়ে অনেকটা থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো ১০ নং মিঠানালা ইউনিয়নে। দফায় দফায় ছুটে আসছেন পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে লক ডাউন ঘোষণা করা হয় ঐ ইউনিয়নের ১নং ওর্য়াডের লেদু মেস্ত্রী বাড়ি, মুহুরী বাড়ি এবং তার সহকারীর বাড়ি মিরসরাই সদর ইউনিয়নের আশরাফ উকিল বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।

এই নিয়ে উৎকন্ঠার ও কমতি নেই এলাকাবাসীর মাঝে। কেননা একসাথে ফুটবল ম্যাচ খেলা এবং লকডাউন হওয়া মোল্লা বাড়ির মানুষজনের সাথে চলাফেরা ছিলো ইউনিয়ন পরিষদে থেকে শুরু করে পুরো এলাকাজুড়ে। এমতাবস্থায় ভয়াবহ পরিস্থিতির আশাংকা করছেন অনেকেই।

আক্রান্ত রফিকুলের পরিবারের সদস্য প্রায় ১০ জন। যার মধ্যে তিন জন বিবাহিত এবং তাদের সন্তানসন্তুতি রয়েছে। এদের মধ্যে আরো তিন জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা যায়।

মিঠানালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়েরুল আলম খায়ের জানান, আক্রান্ত রফিকুল ইসলামের পরিবারের পাশে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। করোনা আক্রান্ত হয়েছে বলে কাউকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার কোনো সুযোগ নেই। প্রয়োজনে যা যা সহযোগিতা করার আমরা করবো এবং পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে তিনি সবাইকে বেশী বেশী দোয়া করতে এবং সরকার নির্দেশিত নীতিমালা মেনে চলার আহ্বান জানান।

এই দিকে ইউনিয়নের ১ নং ওর্য়াডের ইউপি সদস্য মিজানুুল ইসলাম বলেন, যারা যারা ফুটবল খেলেছিলো আমরা প্রত্যেকের নাম ঠিকানা নিয়ে তালিকা তৈরী করে হোম কোয়ারান্টাইনে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

সবদিক মিলিয়ে করোনা সংক্রমিত হওয়া ঐ ব্যাক্তির সংস্পর্শে আসা সবার যদি করোনা পজেটিভ হয়ে যায় তাহলে পরিস্থিতি অনেকটা হাতের নাগালের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। ছড়িয়ে পড়তে পারে পুরো ইউনিয়নে এমনকি পুরো উপজেলা ব্যাপী। তাই তো সবাই এখন তাকিয়ে আল্লাহর অসীম কৃপার দিকে।

মিঠানালা ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা ছাত্রলীগের স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদুল করিম বলেন, রোগ শোক কেউ ইচ্ছে করে নিয়ে আসে না তাই সবাই কি বিষয়টি মাতামাতি কিংবা কুনজরে না দেখে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান।

মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, সংক্রমিত ব্যক্তির খবর পেয়ে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে এবং কয়েকটি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছি। এছাড়া আরো কঠোরভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে।

একদিকে সংক্রমিত হওয়ার খবর অন্যদিকে আতংক। উভয় পরিস্থিতিতে শুধু সচেতন নয় বরং মানবিক হওয়াটাই জরুরি। নয়তো মানসিক চাপে ভেঙ্গে পড়ার আশংকা ও থেকে যায়। জীবিকার তাগিদে প্রাইভেটকার চালিয়ে আয় করতেন রফিকুল। কে জানতো!তার শরীরে ও আশ্রয় নিবে এ মৃত্যুকুপ। এই নিয়ে অতটা চিন্তিত নন তিনি। সকলেই চায় মানসিক ভাবে দৃঢ় থাকুক রফিকুল, সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক আপন ধারায়। তবে সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় অন্য কারো শরীরে করোনা ঘর বেঁধেছে কিনা! সে জন্য সকলের কাছে সকলেরই আহ্বান, বেশী বেশী দোয়া করুন, সচেতন থাকুন।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন