৪ নভেম্বর ২০২৫

করোনা দূর্যোগে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর আজ

তারেক মাহমুদ »

মুসলিম উম্মাহর জাতীয় সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব হচ্ছে ঈদ। ব্যক্তি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, সংস্কৃতি ঈদের এ আনন্দে একাকার হয়ে যায়। টানা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আজ সোমবার সারাদেশে উদযাপিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ইসলাম ধর্মাম্বলীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসবের জন্য প্রস্তুত পুরো দেশ। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কর্মস্থল ছেড়ে গ্রামে স্বজনদের কাছে ইতোমধ্যেই ফিরে গেছেন অনেকেই। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার ভিন্ন আবহে ঈদ উদযাপন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবার ঈদগাহর পরিবর্তে শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে ঈদের জামাত।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এবারের ভিন্ন আবহের এই ঈদে ১৩ দফা শর্ত জুড়ে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এসব শর্তে বলা হয়েছে—নামাজের সময় মসজিদে গালিচা বিছানো যাবে না; নামাজের আগে পুরো মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে; জায়নামাজ নিয়ে আসতে হবে মুসল্লিদের; সবাইকে মাস্ক পরতে হবে; মসজিদে প্রবেশের আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে; মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না; নামাজের কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

তাছাড়া কোলাকুলি করা থেকেও সকলকে বিরত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদে সোমবার (২৫ মে) সকাল ৮ টায় ঈদ উল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় এই মসজিদে ঈদের মোট ৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তাছাড়া, নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল পৌনে ৮টায়। এতে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা আনোয়ার হোসেন।

এদিকে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাসের এই মহামারিতে গণজমায়েত এড়িয়ে ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার আহ্বান জানান তারা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রোববার (২৪ মে) এক বাণীতে এই আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

রমজানের মাসব্যাপী সিয়াম সাধনায় মানুষের মন হয়ে ওঠে উদার, সহমর্মিতাপূর্ণ ও আল্লাহর প্রেমের প্রেমিক। রমজান মাসে যারা প্রবৃত্তির প্ররোচনাকে দমন করে বিবেকের শক্তিকে জাগ্রত করতে পেরেছেন, ঈদের দিন মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেন। এজন্য  রোজাদারদের জন্য ঈদের দিন এটি একটি বিরাট প্রাপ্তির দিন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদকে মুসলমানদের জাতীয় উৎসব হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেক জাতির নিজস্ব উৎসব রয়েছে। আর এটি হচ্ছে  (ঈদ-উল-ফিতর) আমাদের উৎসব’। মানব মনের সজীবতা ও কোমলতা অটুট থাকার মাধ্যমই হচ্ছে এই ঈদ। তাইতো রমজানের রোজা শেষে খুশির উৎসব ঈদ-উল-ফিতর।

বছরে অন্তত ঈদের দিনে মানুষ সব ক্ষুদ্রতা, সংকীর্ণতা, তুচ্ছতা, হিংসা ও বিদ্বেষ ভুলে পরস্পরকে ভালবাসে। সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সামাজিক ঐক্য, সংহতি ও ভালবাসার নিবিড় বন্ধন সৃষ্টি হয়। আনন্দ উৎসবে প্রবাহিত হয় মানুষ হৃদয়, মন ও দেহে।

সমাজের বিত্তবান লোক তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভাব গ্রস্ত মানুষকে ফিতরা আদায় করবে। গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের মাঝে ঈদের আনন্দের সুযোগ করে দেবে, এটাই ইসলামের বিধান। তবেই সমাজে পরিপূর্ণ ঈদের আমেজ ফিরে আসবে; সমাজ হয়ে উঠবে আনন্দ মুখর। থাকবে না কোনো মলিন চেহারা । বইবে শান্তির সুবাতাস।

পরিশেষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের দিনে সুখ, সমৃদ্ধি, শান্তির কামনা করবেন এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন