২৬ অক্টোবর ২০২৫

করোনা ভয় দূরে ঠেলে তাঁরা মানবতার সেবক

ইয়াসির রাফা »

বিশ্বজুড়ে চলছে করোনার তাণ্ডব। দেশে দেশে মৃত্যুর মিছিল। মানুষের অসহায়ত্ব। আতঙ্ক। ভয়। কারওই যেন কিছু করার নেই। প্রেম ভালোবাসা ছিটকে পড়েছে বহু দূরে। মানবিকতা হারিয়ে গেছে সমাজ থেকে। এমনই এক সময় আশার আলো দেখায় কিছু মানুষ। তাদের দেখে মনে হয় এ এক অন্য বাংলাদেশ। এ এক অন্য চট্টগ্রাম। মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এসব মানুষ।

করোনা ভয় দূরে ঠেলে তারা এগিয়ে এসেছেন মানবিক হয়ে। মানবতার বার্তা নিয়ে হাজির হচ্ছেন মানুষের সামনে। করোনা মহামারীর মধ্যে নিজের জীবনের ঝুঁকি জেনেও কাজ করছেন অন্যের কল্যানে। দিন রাত নিজেকে নিয়োজিত রাখছেন মানব সেবায়। রাস্তায় ক্ষুধার্থ মানুষের মুখে তুলে দিচ্ছেন খাবার। দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবা। 

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাহসিকতার সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিজের যা আছে তা নিয়েই করছেন মানবসেবা। বিপদগ্রস্ত মানুষের কল্যাণে ছুটে চলেন সব সময়। দল মত নির্বিশেষে সবার প্রশংসার জোয়ারে ভাসা এই মানুষটি হলেন চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে তথা বর্তমান সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ বলছেন ‘করোনা বীর’, কেউ বলছেন মানবতার ফেরিওয়ালা।

কার্যত লকডাউনের মধ্যেই মানুষের বাসায় চিকিৎসা সামগ্রী ও খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। নিজস্ব অর্থায়নে অনেকটা গোপনে গরীব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। করোনার এই ভয়াল পরিস্থিতিতে দিন নেই- রাত নেই হরদম ছুটছেন তিনি। খোঁজ রাখছেন চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১ ওয়ার্ডে কষ্টে থাকা মানুষের হাড়ির খবরের। যার উনুনে জ্বলছে না আগুন, যার ঘরে নাই দু’মুটো চাল-ডাল, দাঁড়াচ্ছেন তাদের পাশে। বাড়িয়ে দিচ্ছেন সহায়তার হাত।

শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু)’তে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কাজ চালু করতে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত ছিলেন। এছাড়াও করোনাকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রামের ঘরে ঘরে ছুটে বেড়াচ্ছেন। নগরবাসীকে সচেতন ও সহযোগিতা করছেন। যতক্ষণ সময় পান ততক্ষণেই নগরীর হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন করোনা মোকাবেলার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানান, মানবসেবা করতে চাই। আমাদের ধর্মে আছে দান করার। তাই গরীব ও অসহায়দের নিরবেই দান করছি। এ কার্যক্রমগুলো নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে অব্যাহত থাকবে। তিনি তার ফেইসবুক পেইজে এ নিয়ে এক স্ট্যাটাসে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন সংক্রমিতদের প্রতি আমাদের মানবিক হতে, আর সংক্রমণ হলে মনে সাহস রাখতে। তাই আমরা সচেতন থাকবো, শংকিত হবোনা, মনে সাহস রাখবো। হায়াত-মউত সবই আল্লাহর হাতে।’

জানা গেছে, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দৃঢ় মনোবল আর সচেতনতার সাথে এ সংকট মোকাবেলা করতে নিয়মিতই নগরের মাঠে ময়দানে ছুটে বেড়েচ্ছেন। ছুটে যাচ্ছেন অসহায় মানুষে দরজায়। 

চট্টগ্রামে করোনা যুদ্ধের আরেক অগ্রনায়কের নাম ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। যার নাম ইতোমধ্যে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা এক সময় উন্নত বিশ্বে বিশেষ অবস্থায় রোগীদের চিকিৎসায় রাতারাতি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি হতে দেখে অবাক হয়েছি। কিন্তু আমাদের দেশেও এটিকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন একজন মানুষ। তার নাম ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। বাংলাদেশে এই প্রথম মাত্র ২০ দিনেই তৈরি হয়েছে করোনা চিকিৎসায় চট্টগ্রাম ফ্লিড হাসপাতাল (সিএফএইচ)। প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি হয় সিএফএইচ। যার অগ্রনায়ক বিদ্যুৎ বড়ুয়া।

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের সলিমপুরে নাভানা গ্রুপের আফতাব আটোমোবাইল জায়গা দিয়ে সহায়তা করে। প্রতিষ্ঠানটির আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড কারখানার ভেতরে ৬ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দ্বিতল ভবনে ৫০-৬০ শয্যার অস্থায়ী হাসপাতালটি পরিদর্শন করে হাসপাতাল নির্মাণে প্রশংসাসহ দুই হাজার সার্জিকেল মাস্ক দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল। 

অন্যদিকে আরেক প্রচারবিমুখ করোনা যোদ্ধা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। করোনাভাইরাসের বিস্তার রুখে দিতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। অন্য প্রার্থীরা যেখানে সস্তা পাবলিসিটিতে ব্যস্ত, সেখানে রেজাউল কর্মহীন ও দরিদ্রদের ঘরে ঘরে অগোচরে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। মধ্যরাতে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরে ফুটপাতের অসহায় অবস্থায় থাকা মানুষের হাতে রান্না করা সেহেরীর খাবার তুলে দেন তিনি। শুধু তাই নয়, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রেজাউল করিম নিজে গিয়ে অথবা নিজের বাসায় ডেকে অসহায় মানুষের হাতে খাদ্যসামগ্রী উপহার হিসেবে তুলে দিচ্ছেন তিনি।

ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় সাধারণ মানুষ, ভিক্ষুক, শ্রমিক, দিনমজুর, রিকসাচালক, থেকে শুরু করে নিম্মবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা পেয়েছেন রেজাউল করিম চৌধুরীর খাদ্য সহায়তা। সেই সাথে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, মন্দিরের পুরোহিত, প্যাগোডা ও গীর্জায় ও পাঠিয়েছেন খাদ্য সামগ্রী। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীর ভীষন রকমের প্রচারবিমুখ মানুষ তিনি। ১০০টি মুহূর্তের মধ্যে হয়তো ২-৩টি মুহুর্ত ফ্রেমে বন্দি করা হয়, তাও মানুষটির অনিচ্ছায়। কারণ এই ২-৩টি মুহুর্তও যদি ফ্রেম বন্দি না হয়, তাহলে হয়তো এই নগরের মানুষ জানতে বা বুঝতে পারবেনা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার অসহায় মানুষের পাশে থাকার এই নীরব যুদ্ধ, যেমনটি সামনে আসেনি অতীতে কোনদিন। 

এই সংকটময় সময়ে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তরুণ আরেক কান্ডারি মাহবুব রহমান রুহেল। যিনি চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মেঝ ছেলে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে অঘোষিত লকডাউনের এই সময়ে নিজ এলাকা মিরসরাইয়ের মানুষকে খাদ্য সামগ্রীর চিন্তামুক্ত রাখতে ঘরে ঘরে ছুটে চলেছেন মাহবুব রহমান রুহেল।

জানা গেছে, রমজানের শুরুতেই ১২ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা উপহার বিতরণ করেছেন তিনি। করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই দায়িত্ব নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন মাটি ও মানুষ ঘেঁষা আধুনিক চিন্তাধারার এই তরুণ করোনাযোদ্ধা। তাঁর আহবানে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণ এর পাশে দাড়িয়েছে মিরসরাই উপজেলা যুবলীগের নেতৃবৃন্দ। ইতোমধ্যে যুবলীগ নেতাকর্মীরা অসহায় কৃষকের ক্ষেতের ধান কেটে সহযোগিতার করেছে। তার পক্ষ হতে দরিদ্র পরিবারের মাঝে ঈদের উপহার তুলে দেয়া হয়। যার ফলে করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়ে পরিবারগুলোর মুখে হাসি ফুটেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে আরো উপহার সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে বলেও জানা যায়। 

করোনাযুদ্ধে মানবতার প্রতীক হিসাবে ইতোমধ্যে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগরীর ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আবদুস সবুর লিটন। দেশের এই দুর্দিনে রামপুরের জনসাধারণের মনে সাহস জোগাতে নানা উদ্যোগ নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। 

এলাকার মানুষকে সুখী রাখতে যা যা করা দরকার সবটাই করেছেন সাবেক সফল এই কাউন্সিলর। মহামারি করোনা থেকে এলাকার মানুষকে করোনামুক্ত, সুস্থ রাখার জন্য আব্দুস সবুর লিটন তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে আট হাজার মানুষের খাদ্যসামগ্রীর ব্যবস্থা করেছেন। নিজে সেচ্ছাসেবী টিম তৈরী করে মার্স্ক, স্যানিটাইজার বিতরণ ও এলাকায় জীবাণুনাশক ঔষুধ ছিটিয়েছেন প্রতিদিনই। 

২৫নং রামপুর এলাকা সূত্রে জানা যায় , লিটন করোনা ভাইরাসের কারণে ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে উপার্জন বন্ধ হওয়ায় কষ্টে থাকা দিনমজুর, শ্রমিকসহ অসহায় মানুষের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সামগ্রী। প্রতিদিন রাতে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে নিজেই অসহায় মানুষের বাসার দরজার সামনে খাদ্য সামগ্রীর প্যাকেট রেখে আসছেন এই মানবতার সেবক।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন