২৮ অক্টোবর ২০২৫

করোনা সংকটে কক্সবাজারে সেবা দেবে ১৩ ইন্টার্ন চিকিৎসক

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। সব পেশার মানুষের মাঝে জেঁকে বসছে করোনা। আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও।

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে কক্সবাজারে পর্যটন উদ্যোক্তাসহ মারা গেছেন ৫ জন। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে স্থাপিত পিসিআর ল্যাবে শনিবার পরীক্ষা করা ৩৪৮ জনে ১০৮ জনের করোনা ‘পজেটিভ’ ফল মিলেছে।

দিন দিন রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। রোগীর সেবা ও মৃতদেহের সৎকারে স্বজনরা কাছেও ভিড়ছে না। জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই এবং মৃতের সংখ্যা ২০ জন পার হওয়ায় কক্সবাজার পৌরসভাসহ জেলার কয়েকটি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার ভোর থেকেই কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে লকডাউন কার্যক্রম।

করোনা অপ্রতিরোধ্য হয়ে দেখা দেয়ায় সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা সংক্রমণের ভয়ে পর্যাপ্ত সেবা দিচ্ছেন না বা রোগীদের এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ আসছে বার বার। কক্সবাজারেও একই অভিযোগ হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে। এমন সব বাজে খবরে আশা জাগিয়েছেন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ৭ম ব্যাচের তরুণ ১৩ ইন্টার্ণ চিকিৎসক।

করোনার এই দুর্যোগ কালীন এ পরিস্থিতিতে রোগীদের সেবার ব্রত নিয়ে শনিবার (৬ জুন) কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যোগদান করলেন ইন্টার্ণ চিকিৎসক হুমায়রা আমরিন, ইফতারোজ জাহান, শান্তা বিশ্বাস, মোঃ ইমরানুল ইসলাম, তারেক নেওয়াজ উল্লাস, তাসিন তাহা,ইকবাল মাহমুদ বেলাল, সায়েদ মুহাম্মাদ সালেম, জুবাইদা নাসরিন, সুদীপ্ত ঘোষ, টি.এম. মুজাহীদুল ইসলাম, রায়হান আহমেদ ও সাকিব রেজা।

ইন্টার্ন চিকিৎসক সাকিব রেজা বলেন, ডাক্তারিটা পড়েছি রোগীদের সেবা করবো বলে। এখনই আমাদের সেবার হাত প্রসারিত করার অবারিত সুযোগ। ইন্টার্ন হিসাবে কাজ করতে গিয়ে যদি একজন রোগীও উপকৃত হয় এটিই হবে আমাদের চিকিৎসাবিদ্যা পড়ার সার্থকতা। মৃত্যু যেভাবে লেখা আছে সেভাবে হবেই- তা আটকানোর ক্ষমতা কারো নেই। রোগে আক্রান্ত হবো বলে হাতগুটিয়ে বাড়িতে বসে থাকা কাপুরুষের লক্ষণ হবে। তাই আমরা ১৩ বন্ধু নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করতে এসেছি।

হুমায়রা আমরিন বলেন, কাজ করতে এসেই শুরুতে সিনিয়রদের অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ পেয়েছি। সংকটকালীন সময়ে নিজেদের নিরাপদ রেখে কিভাবে কাজ করা যাবে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও হাসপাতালের চিকিৎসক স্যারগণ। পাশাপাশি করোনাকালীন দায়িত্বপালনে নিরাপত্তা সামগ্রীও প্রথমদিনেই সরবরাহ দিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক স্যার। এটি সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। দায়িত্বপালনে আমরা সবার দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি।

সদ্য ঘোষিত বিশেষ বিসিএস-এ উত্তীর্ণ হয়ে করোনাকালীন সেবায় আত্ননিয়োগ করা কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. রিপন চৌধুরী বলেন, সারা দেশ যখন লকডাউনে, সবাই যখন আক্রান্ত হওয়ার অজানা আতঙ্কে আতঙ্কিত, ঠিক তখন কক্সবাজার বাসীর প্রয়োজনে ১৩ ইন্টার্ণ চিকিৎসক স্বপ্রনোদিত হয়ে সেবায় এগিয়ে আসা আমাদের জন্য আনন্দের। আমার বিশ্বাস নতুন প্রাণ শক্তিকে উজ্জীবিত হয়ে এঁরা-ই পারবে কক্সবাজারের মানুষের মুখে হাসি ফোঁটাতে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মহিউদ্দিন বলেন, কোন চিকিৎসকই পারত পক্ষে রোগীকে ফেরত দেন না। পেশাটার মূলই হচ্ছে সেবা। আমরা সেবা দিতে পারলেই আনন্দ উপভোগ করি। কঠিন এ সময়ে সদর হাসপাতালে যোগ দেয়া ১৩ ইন্টার্ণ চিকিৎসকেও সে বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। হাসপাতালে কাজ করা ৫৯ চিকিৎসকের নির্ভরযোগ্য সহযোগী হবে এরা এমনটি আশা করছি।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন