২৫ অক্টোবর ২০২৫

করোনা সংক্রমণে আছড়াচ্ছে চট্টগ্রাম!

ইয়াসির রাফা »

দেশে প্রথমবার করোনা শনাক্ত হওয়ার তিন মাস পর শনাক্তের সংখ্যার দিক থেকে ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনকে ছাড়িয়ে গেলো বাংলাদেশ। মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর ভর করেই বেদনার এই মাইলফলক। আক্রান্তের দিক থেকে শুধু নয়, মৃতের তালিকায়ও শীর্ষে রয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ।

করোনা ভাইরাসের পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুসারে, চীনে ৮৩ হাজার ৭৫ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তালিকায় সেই চীনের স্থান ১৯ নম্বরে। আর বাংলাদেশে মাত্র তিন মাসেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৪ হাজার ৩৭৯ জনে। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৮।

রোববার (১৪ জুন) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির দেয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৮ জন।

চট্টগ্রামে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। নগরীর ৯০টি বেসরকারি হাসপাতালে ১১০টি আইসিইউ শয্যা থাকলেও মিলছে না সেগুলোতে মানুষের সেবা।

এদিকে এখানকার মানুষের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় উন্মুক্ত থাকায় চট্টগ্রামে করোনার দ্রুত বিস্তার ঘটছে। এ পরিস্থিতি দিনদিন আরো মারাত্মক বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি সামাজিকভাবে সংক্রমণের সংখ্যাও বেড়ে চলছে।

এ বিষয়ে কথা হলে চট্টগ্রাম মহানগর টিআইবি-সনাক’র সভাপতি অ্যাডভোকেট আকতার কবীর চৌধুরী বলেন, ‘কোভিড-নন কোভিড কাউকে সেবা দিচ্ছে না। তাদের যে আইসিইউগুলো আছে সেগুলো লক করে রেখেছে। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য আমরা সাধারণ জনগনের পক্ষ থেকে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।’

আক্রান্তের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়, ভারত, পাকিস্তানের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়াতে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ, ভারত-পাকিস্তান ছাড়াও বাংলাদেশের আগে রয়েছে ইরান, তুরস্ক ও সৌদি আরব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত দেশে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ১৩৯। তবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ বলছে, ইতোমধ্যে রোগ শনাক্ত ছাড়াই করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ৮৬১ জন। ১৩ জুন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে, দেশে মোট ১৭ হাজার ৮২৭ জন সেরে উঠছেন প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে।

অন্যদিকে ভাইরাসের উত্তপত্তিস্থল চীনে সুস্থ হয়েছেন ৭৮ হাজার ৪৬৭ জন। দেশটিতে বর্তমানে মাত্র ৭৪ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী আছেন। নতুন করে সংক্রমণও খুব বেশি নেই।

করোনা ভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি তথা লকডাউনের মধ্যে সংক্রমণ পরিস্থিতি, চিকিৎসা ব্যবস্থা, কর্মহীন মানুষের খাদ্য সংস্থানসহ এবার সব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সামনে এগোতে চায় সরকার। এজন্য চলতি বছরের বাজেটেও স্বাস্থ্যসহ প্রতিটি খাতেই করোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তাই আর গোটা দেশ লকডাউন নয়, অর্থনীতি বাঁচিয়ে অধিক সংক্রমিত ‘রেড জোনগুলোতে’ কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শুক্রবার (১২ জুন) ছুটির দিনে সরকারের পাঁচজন মন্ত্রী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব অনলাইন বৈঠক করেন। বৈঠকে অধিক সংক্রমিত এলাকাগুলোতে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে জোর দেওয়া হয়।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম/এএ

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ