৩০ অক্টোবর ২০২৫

কর্ণফুলীতে ক্যাশিয়ারের দৌরাত্ম্যে জুয়া ও মাদকের ওপেন সিন্ডিকেট; প্রশ্নবিদ্ধ পুলিশী সেবা!

জে. জাহেদ, কর্ণফুলী »

বর্তমান সরকার পুলিশী সেবা জনগণের দৌড় গোড়ায় পৌছে দিতে বেশ আন্তরিক। কিন্তু থানা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হলেও কর্ণফুলীতে পুলিশের কথিত কয়েকজন ক্যাশিয়ার পরিচয় দেয়া লোকের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সিএমপি কর্ণফুলী থানা পুলিশের সেবা আর কার্যক্রম। এদের মধ্যে ক্যাশিয়ার কুদ্দুস ও শাহমীরপুর ফাঁড়ির আলমগীর মুন্সীর নাম সবার মুখে মুখে।

এসব ক্যাশিয়ার ও অন্যান্য সোর্সরা মিলে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজিতে বেশ বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে ক্যাশিয়ার মানেই মাদক ব্যবসায়ীর ও জুয়াড়িদের আশ্রয়স্থল।

স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, ক্যাশিয়ার ও সোর্সরাই নিয়ন্ত্রণ করছে কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের মাদক ব্যবসা, জুয়ার আড্ডা, দখলবাজি, চাঁদাবাজি সহ অপরাধের নানা ক্ষেত্র।

উপজেলার খোয়াজনগর এলাকার যুবলীগ নেতা মো. নবী জানান, পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে ব্রীজঘাট ও চরপাথরঘাটাতে অনেকে কৌশলে ইয়াবা বিক্রি করে। অবাক করা বিষয় হলেও, এটাই সত্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপরের সদস্যদের নাম ভাঙিয়ে তাদের কাঁধে ভর করে এসব থানা ক্যাশিয়ার ও সোর্সরা বেশ দাপটে রয়েছে।

প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, কর্ণফুলী থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও জুয়াড়িদের কাছ থেকে মাসিক মাসোয়ারা আদায় করে থাকেন থানা ক্যাশিয়ার ও মুন্সীরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই চাঁদা আদায় করছে যাদের কাছ থেকে তারা হলেন- প্রভাতী বাজারের (বাংলা) চোলাই মদ বিক্রেতা জুল ফরুক, জুলধা পাইপের গোড়ার চোলাই মদ ব্যবসায়ি নেজাম ও তার ভাই কথিত নাম ডেনডিইয়া, ফকিরনীর হাটের বাংলা মদ ব্যবসায়ি নাছির, দারোগার হাট নদীর পাড়ের নুরু মিয়ার তিনটি জুয়ার আস্তানা, জুলধা ডাঙ্গারচর ৯ নং ঘাটের মো. কামালের জুয়ার আসর, ডাঙ্গারচর এলাকার আরেক ইয়াবা ব্যবসায়ি এরশাদ, বিলাল ও জামাল,  বড়উঠান এলাকার খুচরা মাদক ব্যবসায়ি আইয়ুব, পিংকি, হোসেন ও আজাদ, বড়উঠান ইউনিয়নের অপর প্রান্তের মাদক ব্যবসায়ি এনাম ও জামাল। অনুসন্ধান বলছে এসব অবৈধ আস্তানা থেকে নিয়মিত মাসিক মাসোহারা আদায় করে থাকেন।

অপরদিকে চরলক্ষ্যা, চরপাথরঘাটা ও শিকলবাহা এলাকার বিভিন্ন অবৈধ পিলাই তেল ব্যবসায়ি, মাদক ব্যবসায়ি ও জুয়া মদের আসর যথাক্রমে জুলধার তেল শুক্কুর, সাহাবুদ্দিন ও ফরহান নামে দুব্যক্তি, কর্ণফুলী এলাকার ইলিয়াছ মেম্বার, ইমরান, সাহাব উদ্দীন ও পেয়ারু নামে কয়েকজন ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে থাকা জুয়ার আসর হতে প্রতিমাসে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেন।

এভাবে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা থানা পুলিশের উর্ধ্বতন অফিসার ও ফাঁড়ি ইনচার্জের নাম ভাঙিয়ে এসব ক্যাশিয়ার, সোর্স ও মুন্সীরা তোলার ফলে অপরাধ প্রবণতাসহ মাদক আর জুয়ার আসর বন্ধ হচ্ছে না বলে সচেতন মহলের অভিযোগ।

গত কয়েকদিন আগে কর্ণফুলী থানাধীন বড়উঠান এলাকায় একটি সামাজিক মাদকবিরোধী সমাবেশে পুলিশের বন্দর ডিসির বক্তব্যে মাদকের এই ভয়াবহতার চিত্র উঠে আসে। তিনি বলেন, ‘মাদকের কারণে কর্ণফুলীর দুষিত পরিবেশের চিত্র পাল্টে দিতে চান। যারা মাদক কারবারের সাথে জড়িত তাদের কেউ রেহায় পাবে না।

কিন্তু সেদিন একই অনুষ্ঠানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা শুধু মাদক বিরোধী সভা সমাবেশ করেই যাচ্ছি কিন্তু মাদক নির্মূল হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না তার কারণ খুঁেজ বের করতে হবে।’ তাহলে কি উপজেলা চেয়ারম্যান থানা ক্যাশিয়ার ও সোর্সদের দিকে ইঙ্গিত করে কথাগুলো বলেছিলেন!

অনেক ক্ষেত্রে আবার এসব ক্যাশিয়ার ও সোর্স অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য হলেও তারা নিজেদের বিভিন্ন জায়গায় সিআইডি, ডিবি কিংবা ‘পুলিশ’ সদস্য বলে পরিচয় দেন। আর এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। অনেকে পুলিশের ভয়ে মুখ না খুললেও বাজারে ঘাটে এসব ক্যাশিয়ারদের নাম ধরে সমালোচনা করতে ও দেখা যায়।

অনেক ক্ষেত্রে ওরা থানা ওসির ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। অনেক ‘ক্যাশিয়ার’ আবার বিভিন্ন মামলার আসামিদের পক্ষ নিয়ে পুলিশের নাম-পরিচয় ব্যবহার করে বাদীকে হুমকি দেয়। কর্ণফুলী থানা পুলিশের ওয়ারেন্ট অফিসারের বিরুদ্ধে এমন ও অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি জামাতের বহু নাশকতা মামলার আসামিদের ওয়ারেন্ট কপি গোপন রেখে মাসিক হারে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। তাতে বাদ যাচ্ছে না বিভিন্ন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ওয়ারেন্ট ও।

উপজেলার ইছানগর এলাকার শাহ আলম নামে এক ভুক্তভোগি বলেন, ‘চেকের মামলায় ৫৩৭ (১৯) নং স্মারক মূলে আমার এক বিবাদী পক্ষের ১০ মাসের সাজা হয় । যার ওয়ারেন্ট কপি দীর্ঘদিন ধরে কর্ণফুলী থানায় পড়ে রয়েছে কিন্তু গ্রেফতারী ওয়ারেন্ট তামিল করা হচ্ছে না।’

গত কয়েকদিন আগেও সাদা পোশাকে পেয়ারা কিনতে গিয়ে বড় দূর্ঘটনা ঘটে এবং মইজ্জ্যারটেক পুলিশ বাক্স ভাঙচুর করা হয়।

কুদ্দুস ও আলমগীর নামে দুই ক্যাশিয়ারের দৌরাত্ম্য বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার নবনিযুক্ত ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি সবেমাত্র জয়েন করেছি এ ধরনের কোন তথ্য আপাতত আমার কাছে নেই।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ( ডিসি বন্দর বিভাগ) মো. হামিদুল আলম বলেন, ‘প্রথমে দেখতে হবে ওরা পুলিশের লোক কিনা। যাদের নাম বলা হচ্ছে আমি এক্ষুণি খবর নিচ্ছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে অবশ্যই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন