রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী সরকার যদি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আয় করে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার অনুবৃক্তি ক্রমে বাড়ানো যায়। তবে সরকার যদি ব্যায় করে তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের কাজের মান ভালো হলে সর্বোচ্চ দুইবার একই প্রতিষ্ঠানকে টেন্ডার দেয়া যাবে। এরপরে আবার নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করতে হবে। তবে নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কাই যেন করেন না বাংলাদেশ রেলওয়ের পুর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল হাসান।
ঢাকাগামী নৈশ ট্রেনের উচ্চ শ্রেণির যাত্রীদের ব্যবহৃত বেডিং ও ট্রাফিক রানিং রুমগুলোতে ব্যবহৃত বেডিং সামগ্রী ধোলাই ও ইস্ত্রিকরণ এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনে ডাস্টবিনে পলিথিন সরবরাহের টেন্ডার পান ওয়াহদিকা সার্ভিসেস, ক্লীন সার্ভিসেস এবং ভাই ভাই লন্ড্রি এই তিনটি প্রতিষ্ঠান। খবর নিয়ে জানা যায় এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. ওয়ালিউর রহমান।
ঠিকাদার ওয়ালিউর রহমানের ‘ভাই ভাই লন্ড্রি’ ২০১৬ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ও ওয়াহদিকা সার্ভিসেস ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি অনুবৃক্তি ক্রমে থেকে টেন্ডার দুটি পেয়ে আসছে। দুই বছরের সময় সীমা শেষ হওয়ার পরও নতুন করে টেন্ডার আহ্বান না করে তা আবার আগের ঠিকাদার ওয়ালিউর রহমানের প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই লন্ডি ও ওয়াহদিকা সার্ভিসেস’র কাছেই নাম মাত্র মূল্যেই বছরের পর বছর নবায়ন করে আসছে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল হাসান। এতে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনছে রেলওয়ের পুর্বাঞ্চল।
ঠিকাদার ওয়ালিউর রহমান সিসিএম বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ক্ষমতায় এতটাই ক্ষমতাধর যে তার ভয়ে অন্য ঠিকাদাররা সিসিএম বিভাগে কোন কাজে আসতেই ভয় পান।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একজন ঠিকাদার বলেন, ‘ছোট কোন টেন্ডারও যদি সাধারণ ঠিকাদার পেয়ে থাকি সেখানেও ওয়ালিউরকে কমিশন দিতে হয়। কমিশন না দিলে টেন্ডার পেপারে সই করেন না কর্মকর্তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিসিএম বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কারণেই ওয়ালিউর আজ শত কোটি টাকার মালিক। নামে বেনামে ঢাকা, চট্টগ্রামে আছে প্লট-ফ্ল্যাটও।’
ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্টেশনের ডাস্টবিনে পলিথিন সরবরাহ, সার্ভিসিং ও সংরক্ষণে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের সঙ্গে ওয়াহদিকা সার্ভিসেস’র ২০১৮ সালে দুই বছরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নগরীর বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শনে দেখা যায়, পলিথিন সরবরাহ দূরের কথা কোনও কোনও স্টেশনে ডাস্টবিনেরই দেখা মিলেনি।
তবে ডাস্টবিনের পলিথিন সরবরাহ ও সংরক্ষণের জন্য ওয়াহদিকা সার্ভিসেস’কে প্রতিমাসে ১৭ লাখ টাকা পরিশোধ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি ডাস্টবিনের জন্য পরিশোধ করতে হয় ১ হাজার ৯৮৫ টাকা। কিছু কিছু স্টেশনে ডাস্টবিনের দেখা মিললেও মিলেনি পলিথিনের দেখা।
এ কাজের জন্য দুই বছর পর পর নতুন টেন্ডার আহ্বান করার নিয়ম থাকলেও গত ৬ বছর ধরে ওয়াহদিকা সার্ভিসেস কোনও টেন্ডার ছাড়াই বারবার নবায়নের মাধ্যমে হাতিয়ে রেলওয়ের নিচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের পিপিআর ২০০৮ লঙ্ঘন করে অলিউর রহমানের প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই লন্ড্রি ও ওয়াহদিকা সার্ভিসেসকে বার বার নবায়ন করার সুযোগ দিচ্ছেন পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল হাসান।
শুধু কাভার ওয়াস ও পলিথিন সরবরাহই নয় সিসিএম বিভাগের প্রায় সব কাজই ওয়ালিউরের দখলে। অন্তঃনগর ট্রেন, চট্টলা এক্সপ্রেস ও জামালপুর এক্সপ্রেসের ক্যাটারিং সার্ভিস ও তার দখলে। এছাড়াও ট্রেনের ভেতর যে অগ্নিনিবার্পক মেশিন থাকে সেগুলো এলটিএম টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়েছেন তার দখলে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার ওয়ালিউর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কিছু বলতে রাজি হননি। তবে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, ‘এই বিষয়গুলো আপনাদের কাছ থেকেই শুনছি। খোঁজ নিচ্ছি, প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’