কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা না গেলে মানবপাচার রোধ দুরূহ উল্লেখ করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেছেন, দেশে জিডিপি বাড়ছে। তবে, আর্থিক সামঞ্জস্য হচ্ছে না। বিত্তবানরা আরও বিত্তের অধিকারি আর দরিদ্ররা হচ্ছে আরও দরিদ্র। ফলে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় বিদেশগামীদের সংখ্যা বাড়ছে। এ সুযোগটা কাজে লাগায় মানবপাচারকারিরা। স্বল্প টাকায় প্রবাসে গিয়ে কাজের সুযোগ সৃষ্টির স্বপ্নে পাচারের শিকার হচ্ছে হতদরিদ্ররা। এটি রোধে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কাজ করলেও সমন্বয় নেই। গ্যাপ কমাতে হবে। পাচারের শিকার হয়ে ফিরে আসাদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে পাচার রোধ সম্ভব।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার শহরের অভিজাত একটি হোটেলে ’মানবপাচারের ভুক্তভোগীদের জন্য সমন্বনিত প্রচেষ্টা: আমাদের করণীয়” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলীর সভাপতিত্বে সভায় কক্সবাজার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক লিটন কান্তি চৌধুরী বলেন, বিদেশের কর্মী নির্বাচিত করতে প্রথমে নিবন্ধন করতে হয়। তার আগে পাসপোর্ট করে- সেখানেই বয়স লুকানো হয়। ম্যানপাওয়ারের ছাড়পত্র নিতে কর্মীকে জনশক্তি কার্যালয়ে হাজির হতে হয় না। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো দায়িত্ব নেয়। এসব কারণে, ভিসায় উল্লেখ করা কাজ না পেয়ে প্রতারিত হলেও কোন সুরাহা পান না প্রবাসী।
কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাকী-এ-কাউছার বলেন, ২০১২ সালে মানবপাচার প্রতিরোধ দমন আইন হলেও তা কার্যকর হয় ২০১৮ সালে। দীর্ঘ এ সময়ে উল্লেখ করার মতো মানবপাচার হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও আইনজীবীদের মাঝে সমন্বয় থাকলেই মানবপাচারে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা সহজ হবে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (গোয়েন্দা) দুর্জয় বিশ্বাস বলেন, দেশের ভেতরেও মানবপাচার হয়। ২০১৩, ২০১৪ সালে অনেকগুলো মানবপাচার মামলার তদন্ত করেছি। ২০২৩ সালে এসেও এসব মামলায় সাক্ষ্য হয়নি। ধীরগতির এ বিচারের ফাঁকে পাচারকারিরা বেঁচে যায়। সমুদ্রতীর বর্তী জেলা হিসেবে জলসীমায় কঠোর নজরদারি করা গেলে মানবপাচার প্রতিরোধ সম্ভব।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পরিচালক (প্রশাসন) নাফিজ ইমতিয়াজ হাসানের সঞ্চালনায় সভায় আরো বক্তব্য বাখেন, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী, ঈদগাঁওর ইসলামাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান নুর ছিদ্দিক, ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আলম, এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এর প্রোটেকশন লিডার নুজুলি বেগম, আইওএম কর্মকর্তা নাজমুন নাহার প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গা ঢলের পর উখিয়া-টেকনাফে পাহাড় গাছ-গাছালি কিছু নেই। রোহিঙ্গাদের হতাশা থেকেই মানবপাচার বন্ধ হচ্ছে না। ক্যাম্পে অনেক দালাল। ওয়ার্ড পর্যায়ে সচেতনতা ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারি দরকার। মানবপাচারে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি সমাজের সচেতন সবার উদ্যোগী হওয়া দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে পরিকল্পনার দুর্বলতায় ভুগছি আমরা। পাচারের ঝুঁকিতে থাকাদের চিহ্নিত করে সুরক্ষা দিতে হবে। আন্তরিক ভাবে শুনতে হবে পাচারের শিকার ভিকটিমদের কথা। প্রয়োজনে কালো গাউন ছেড়ে রোড লেভেলে যেতে হবে। পাচারের শিকার মানুষকে যোগ্যতা অনুযায়ী জীবিকায়ন নিশ্চিত করা জরুরী।
সভায় জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা,বিভিন্ন এনজিওর কর্মকর্তা, সরকারের বিভিন্ন দপ্তেরর কর্মকর্তা ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।













