২৪ অক্টোবর ২০২৫

কারাগারে মারা গেছেন মুহিবুল্লাহ হত্যার আসামি মৌলভী জাকারিয়া

জেলা প্রতিনিধি, কক্সবাজার »

কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মৌলভী জাকারিয়া (৫৩) চট্টগ্রাম কারাগারে মৃত্যু বরণ করেছেন।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত ১০ টার দিকে চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদের বরাত দিয়ে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেলার মোস্তফা কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মৌলভী জাকারিয়া উখিয়ার কুতুপাংয়ের ক্যাম্প-১ ইস্টের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন তিনি। জাকারিয়া ক্যাম্পে বিচরণ করা কথিত সন্ত্রাসী সংগঠন আরসার ওলামা কাউন্সিল প্রধান হিসেবে পরিচিত।

কক্সবাজার কারাগারের জেলার মোস্তফা কামাল জানান, জাকারিয়া মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার ১৪ নম্বর আসামী। তাকে কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

চট্টগ্রাম কারাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদের বরাতে মোস্তফা কামাল আরো বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে কারাগারে প্রাথমিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাকারিয়ার মৃত্যু হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। তাকে কয়েকদিন আগে কক্সবাজার হতে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়।

গত ১১ সেপ্টেম্বর মুহিবুল্লাহ হত্যা মামলার আসামীদের বিচার শুরু হয়েছে। এরআগে ১৩ জুন ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দাখিল করে পুলিশ।

মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বড় ভুমিকা ছিল তার। ঘটনার পর ১৫ আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে ৬ জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

সাড়ে আট মাস তদন্তের পর চলতি বছরের ১৩ জুন ওইদিন দুপুরে ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট আদালতের ডকেট শাখায় জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও উখিয়া থানার ওসি তদন্ত গাজী সালাউদ্দিন।

২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটার দিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় লাম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একদল দুর্বৃত্ত মুহিবুল্লাহকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

এরপর তার ভাই হাবিবুল্লাহ মামলা করেন। তাতে অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনকে আসামি করা হয়। তিনি হামলাকারী কয়েকজনকে চেনার কথা সাংবাদিকদের জানালেও মামলায় আসামির তালিকায় কারও নাম দেয়া হয়নি সেই সময়।

মিয়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গার অধিকাংশই রয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয় ক্যাম্পে। প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে সম্প্রতি নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার চার বছর আগে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চুক্তি করলেও এখনও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি।

রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে পরিচিত মুহিবুল্লাহ ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করে আলোচনায় এসেছিলেন। জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্বও করেছিলেন তিনি।

মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআর, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই মতেই তদন্ত ও বিচার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে মুহিবুল্লাহর পরিবারের সদস্যদের পশ্চিম বিশ্বের একটি দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন