বোয়ালখালী প্রতিনিধি »
সকাল প্রায় সাড়ে ১০টা। বোয়ালখালীর কালুরঘাট সেতুতে আটকে পরে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে ছয় বছরের এক শিশু। এমপি সেতু পার হবেন তাই সেতুর এক পাশে গাড়ি পারাপার বন্ধ। এরইমধ্যে গরম পানিতে ঝলসে যাওয়া দগ্ধ শিশুর স্বজনের আহাজারীতে সেতু এলাকার আকাশ ভারী হয়ে উঠেছে। শতশত মানুষের ভীড় জমে যায়। উপস্থিত জনতার অনুরোধ ও স্বজনদের আকুতি মিনতিও সেতু কর্তৃপক্ষের মন গলাতে পারেনি। টোল অফিসের সামনে দগ্ধ শিশুর সিএনজি অটোরিক্সাটি আটকে থাকে।
রবিবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে বোয়ালখালীর অভিসপ্ত ঝুঁকিপূর্ণ কালুরঘাট সেতুর টোল অফিসের সামনেই এমন হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের সেতু পারাপারের নিত্য দূর্ভোগ যানযটের কবলে পড়ে পশ্চিম পাড় থেকে লাইন চলে প্রায় ১ ঘন্টা পর্যন্ত। তারপর পূর্ব পাড় থেকে গাড়ী আসা বন্ধ হলে পশ্চিম পাড় থেকে লাইন দিলে গাড়ী সেতুতে ওঠার মুহুর্তে আবারো বন্ধ করে দেয় টোল কর্তৃপক্ষ। ওই সময় গাড়ী পারাপারে যাত্রী সাধারণ জানতে চাইলে এমপি পার হবেন বলে আবারোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেতু।
এ সময় যন্ত্রণা কাতর সিএনজিতে থাকা শিশুটি আর্তচিৎকার ও মা-বাবার আহাজারীতে ক্ষোভের সঞ্চার হয় উপস্থিত জনসাধারণের মধ্যে। পরে স্থানীয় সাংসদ প্রায় ১১.৪৫ মিনিটে বোয়ালখালী থানা পুলিশের প্রোটোকলে সেতু পার হলে পূর্বপাড় থেকে সেতুর লাইন চালু হয়।
জানা গেছে, উপজেলার পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড পূর্ব গোমদন্ডী মীরপাড়ার এনামুল হকের ৬ বছরের শিশু কন্যা তানজিনা হক ঘরে গরম পানির পাতিলে পড়ে সারা শরীর ঝলসে যায়।সকাল ১০ টার দিকে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে আশংকাজনক অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
এনামুল হক মেয়েকে বাঁচাতে সিএনজি অটোরিক্সা নিয়ে চমেক হাসপাতালের দিকে সাথে সাথে ছুটে যান। কিন্তু বাধ সাঁধে কালুরঘাট সেতুতে যানজট ও ভিআইপি পারাপার।
স্থানীয় সাংসদ মোছলেম উদ্দীন আহমদ প্রায় ১১.৪৫ মিনিটে সেতু পার হয়ে ১২টার দিকে উপজেলা সদরে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর আয়োজিত বোরো আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে জনপ্রতিনিধি, স্কীম ম্যানেজার ও কৃষকদের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে টোল অফিসে কর্মরত ম্যানেজার নিজাম উদ্দীন বলেন, সকালের শিফটের দায়িত্বে তিনি ছিলেন না। তাই এ বিষয়ে কিছু জানেন না । তবে বোয়ালখালী থানা পুলিশ পরিচয় দিয়ে এমপি পার হবে বলে সেতু বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন বলে সকালের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার নুর উদ্দীন তাকে জানান।
বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আবদুল করিম বলেন, ঘটনাটি দু:খজনক। টোল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এমপি’র প্রটোকলের দায়িত্বে ছিলেন থানার সেকেন্ড অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আল আমান । তবে থানার সেকেন্ড অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আল আমান এ বিষয়টি অস্বীকার বলেন, এমপি স্যারের সাথে থাকা লোকজনরাই সেতু বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশ কখনো সেতু বন্ধ রাখার নির্দেশ দেননা।
চট্টগ্রাম ৮ আসনের সাংসদ মোছলেম উদ্দীন বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তা খুবই অমানবিক ও দু:খজনক। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
দগ্ধ শিশুর পিতা এনামুল হকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদকে জানান, তার শিশু কন্যাকে নগরীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাংলাধারা/এফএস/এইচএফ













