২ নভেম্বর ২০২৫

কালো টাকা সাদা করা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বাংলাধারা প্রতিবেদন  »

কোভিডকালীন সময়ে আজ দ্বিতীয়বারের মত সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট এটি। আজ ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জন্য ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা হতে পারে।

এবারও বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ রাখা হয়েছে। জরিমানা ছাড়াই শুধু ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের প্রস্তাব থাকতে পারে এবারের বাজেটে।

যে কোন ব্যক্তি ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজের আয়কর রিটার্নে দেখাতে পারবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে প্রথম ছয় মাসে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয়ের প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা কর দিয়ে বৈধ করেছেন সাত হাজার ৪৪৫ জন করদাতা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জরিমানা দিয়ে বৈধ করার মোট টাকার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এটি অর্জিত হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে। তবে কালো টাকা সাদা করার বিপক্ষে অর্থনীতিবিদরা। যারা বৈধভাবে কর দিয়ে ব্যবসা করেন তাদের জন্য এটা এক ধরণের অন্যায়।

‘ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ (টিআইবি) মনেকরে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া এই প্রক্রিয়া সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান দুর্বল করে তোলে। এই উপলব্ধি মাথায় রেখে টিআইবি আহ্বান জানিয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না রাখার।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই সুযোগ বহাল রাখার ঘোষণা দিয়ে সরকার বৈধভাবে করা ‘অপ্রদর্শিত আয়’ এবং দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত ‘কালো টাকার’ মধ্যকার পার্থক্য বিলুপ্ত করে দিয়েছে। এর ফলে দেশে দুর্নীতিবাজদের জন্য সৃষ্টি হবে একটি উদার পরিস্থিতি। কারণ, দুর্নীতি ও চাঁদবাজির মাধ্যমে অর্জিত অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। টিআইবি আশা করছে, সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসবে নয়তো তা হবে একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ন্যায়নীতি প্রশ্নের মুখে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, যদি ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যায়, তবে একজন সৎ করদাতা কেনো ৩৫-৩০ শতাংশ হারে কর দিতে যাবে? সরকার হয়তো ভাবছে কালো টাকা সাদা করার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারের কিছু রাজস্ব আয় হবে। কিন্তু এর ফলে বিপুল সংখ্যক করদাতাকে খেলাপি হতে উৎসাহিত করবে। নতুন ধরনের করফাঁকির সংস্কৃতির জন্ম নেবে। তাই এখনই চরম সময় কালো টাকা সাদা করার এ প্রক্রিয়া বন্ধ করার।

বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ প্রদর্শনের সুযোগ রাখা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যতদিন অর্থনীতিতে অপ্রদর্শিত অর্থ থাকবে, ততদিন এ সুযোগ অব্যাহত রাখবে সরকার। দেশের কিছুক্ষেত্রে পদ্ধতিগত কারণে অনেক সময় টাকা অপ্রদর্শিত থাকে। এসব অর্থ যদি প্রদর্শন করার সুযোগ দেওয়া না হয়, অর্থনীতির মূলধারায় না আনা হয়, তাহলে অর্থনীতি ঠিকভাবে কাজ করবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বুঝতে হবে কী কী কারণে অর্থ অপ্রদর্শিত হয়। জমি রেজিস্ট্রেশন ও স্ট্যাম্প ফি অনেক বেশি। আবার মৌজা মূল্য অনেক কম। মৌজা মূল্য যদি বাজার দরের সমান হত, তাহলে কোনো অপ্রদর্শিত টাকা হত না। এই যে পদ্ধতির কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের কাছে অপ্রদর্শিত টাকা থাকে। সেজন্য তারা বিপদে পড়ে। এজন্য সরকার ক্রমান্বয়ে আয়কর হার, জমির নিবন্ধন ফি, স্ট্যাম্প ডিউটি কমিয়ে দিচ্ছে। যাতে সবাই প্রকৃত মূল্য প্রকাশ করতে পারে।’

তবে ভিন্ন কথা বলছেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এর সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মো. এমদাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে শেয়ারবাজার আরও চাঙ্গা হবে। দেশের অর্থনীতির জন্য এটা ইতিবাচক। উন্নত দেশ গুলোতে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বড় প্রজেক্টগুলোতে অর্থায়ন করা হয়। আমাদের দেশেও সরকার যদি কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ প্রজেক্টে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতো তাহলে অর্থ বাজার থেকে ( মানি মার্কেট) ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হত না।

প্রসঙ্গত, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ৩০ জুন, ১৯৭২( ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর) সালে ঘোষিত বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা।

বাংলাধারা/এফএস/এআর

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ