২৯ অক্টোবর ২০২৫

কাশ্মীরি আপেল কুল চাষে সফল বাঁশখালীর কলেজ শিক্ষার্থী তারেক

রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদ, বাঁশখালী »

মুহাম্মদ তারেক হোছাইন সবেমাত্র শেষ করেছেন ইন্টারমিডিয়েট। লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিবারের বোঝাটাও টানতে হয় তাকে। তাই পড়ালেখা শেষে চাকরির আশায় বসে না থেকে শুরু করেন কৃষি কাজ। বাড়ির পাশের ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন বিদেশি জাতের কাশ্মীরি আপেল কুল, বল সুন্দরী কুল, থাই আপেল কুল চাষ। কুল চাষই যেন বদলে দিয়েছে তারেকের জীবন। তার পুরো বাগানজুড়েই লাল-সবুজের সমারোহ মিশ্রিত বিদেশি জাতের কুল। বাজারে এই কুলের চাহিদা ও বাজারদর ভালো থাকায় লাভের আশায় তারেকের মুখে দেখা দিয়েছে হাসিক ঝিলিক।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের মোকামী পাড়ায় অবস্থিত তারেকের কুল বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতার ফাঁকে লুকিয়ে রয়েছে কাশ্মীরি আপেল কুল, বল সুন্দরী কুল, থাই আপেল কুল। দেখতে অনেকটা মাঝারি সাইজের আপেলের মতো। রঙ আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। খেতে অনেক সুস্বাধু ও মিষ্টি। তাছাড়া পাখি ও বিভিন্ন পোকা-মাকড় থেকে কুলগুলোকে নিরাপদ রাখতে বাগানের চার পাশসহ উপরে জাল দিয়ে ঢেকে রেখেছেন।

কুল চাষি মুহাম্মদ তারেক জানান, ছোট বেলা থেকে কৃষির প্রতি আমার বেশ আগ্রহ ছিল। এক সময় ইউটিউবে বিদেশি কুল চাষ দেখে কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠি। পরে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাশ্মীরি আপেল কুল, বল সুন্দরী কুল, থাই আপেল কুলের ৪০০টি চারা সংগ্রহ করি। এরপর লিজ নেওয়া ২ বিঘা জমিতে ১০ ফুট দূরত্ব রেখে ৪০০ চারা রোপন করি। এখন পর্যন্ত এই বাগানে আমার দেড় লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে।

তারেক বলেন, বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক ও কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সঠিক পরিচর্যায় আমার বাগানের প্রতিটি গাছেই প্রচুর পরিমাণে কুল ধরেছে। ১০ মাস আগে লাগানো গাছগুলোতে এ বছর গাছ প্রতি ২৫-৩০ কেজি করে কুল হতে পারে। দ্বিতীয় বছর থেকে কুলের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে বলে ধারণা করছি। এভাবে টানা ৫-৭ বছর পর্যন্ত ফল বিক্রি করা যাবে। স্থানীয় বাজারে এ কুল পাইকারী ১০০-১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারদের কুল দিতে হিমসিম খাচ্ছি। সব মিলিয়ে এ বছর তিনি ৫-৬ লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।

কুলের চাহিদা থাকায় উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে নতুন করে বাগানের পাশের আরও ৮ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কুল চাষ শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।

শিক্ষিত বেকার যুবকদের উদ্দেশে তারেক বলেন, কুল চাষে শ্রম ও পুঁজি লাগে কম। কিন্তু লাভ হয় বেশি। প্রতিটি কুল গাছ দীর্ঘ ১০-১২ বছর সময় ধরে ফল দেয় এবং প্রতি বিঘা জমিতে ১৮০- ২০০টি চারা লাগানো যায়। এই কুল চাষে প্রতি বিঘায় ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে বছরে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করাও সম্ভব। তাছাড়া এই কুল সুস্বাধু ও মিষ্টি হওয়ায় মিনি আপেল নামে পরিচিত পাওয়া ও বাজারদর বেশি থাকায় বাড়তি লাভ করা যায়।

বাঁশখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু ছালেক বলেন, মুহাম্মদ তারেক একজন কৃষি প্রিয় যুবক। সে নিজ উদ্যোগে ২ বিঘা জমি লিজ নিয়ে কাশ্মীরি আপেল কুল, বল সুন্দরী কুল, থাই আপেল কুল চাষ করেছে যা কৃষিখাতে ভাল সাফল্য এনেছে। তার এই কুল চাষ দেখে অনেক যুবক কৃষি আগ্রহ হচ্ছে। তাছাড়াও বাঁশখালী কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক তারেকের কুল বাগান পরিদর্শন ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশি জাতের এই কুল চাষ রৌদ্রোজ্জ্বল ও উচুঁ জমিতে ভালো হয়। যে বাগানে যত বেশি রোদের আলো লাগবে সেই জমির কুল বেশি মিষ্টি হবে। ৫-৬ হাত দূরত্ব গাছের চারা রোপণ করতে হয়। তুলানামূলক রোগ-বালাইও কম। নতুনভাবে কেউ যদি কাশ্মীরি আপেল কুলসহ বিভিন্ন জাতের কুল বাগান করতে আগ্রহ এবং পরামর্শ চাইলে তাকে অবশ্যই উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন