সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার »
সপ্তাহিক ছুটি মিলে এবার ঈদুল আযহাতেও টানা ছুটি পেয়েছেন চাকরিজীবীরা। ৪-৫দিনের টানা ছুটি বাড়িয়েছে চাকরিজীবীদের পরিবারে কোরবানি ঈদের আনন্দ। রোববার কোরবানির ঈদ। তাই বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই ছুটি শুরু হচ্ছে। শুক্র-শনি সপ্তাহিক ছুটি। সেই হিসেবে রবি-সোম-মঙ্গলবার ঈদের ছুটি মিলিয়ে টানা ৪ দিনের ছুটিকে কাজে লাগাতে পরিজন নিয়ে আনন্দ ভ্রমণের পরিকল্পনাও করছেন অনেকে। এতে ঈদুল আযহায় কক্সবাজারে ঝিমিয়ে পড়া পর্যটন জমতে পারে বলে মনে করছেন পর্যটনসেবিরা।
অনেক ভ্রমণ পিপাসু নিরাপদ অবকাশ যাপনে আগাম বুকিং দিলেও অধিকাংশ হোটেল-মোটেল-কটেজের কক্ষ খালি। কিন্তু ওয়াকিং গেস্ট হয়ে পর্যটকরা ভীড় বাড়ালে পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রোদ-বৃষ্টির লোকচুরির এ ঈদ পর্যটন মৌসুমের আগাম যাত্রার আবহ আনতে পারে বলে অভিমত তাদের।

কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ইট-পাথরের খাঁচায় যান্ত্রিক জীবন কাটানো মানুষগুলো সুযোগ পেলেই ভ্রমণের চক আঁকেন। কোরবানির ঈদেও টানা ছুটির সুযোগে অনেকে আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। যারা কোরবানি দিচ্ছেন আর যাদের সামাজিকতা পালন করতে হবে তারা কোরবানের দিন কোথাও বের হবেন না। কিন্তু পরেরদিন থেকে সৈতকপারে লোকসমাগম বাড়তে পারে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করা যায় এ ছুটিতেই পর্যটনের পুরোনো আবহ দেখা যাবে।
কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর এসোসিয়েশন (টুয়াক)’র সদস্য ও দিগন্ত ট্যুরিজমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইয়ার মুহাম্মদ’র মতে, বর্ষাকাল চললেও বৃষ্টি ভদ্রই বলা চলে। আকাশে মেঘ-রুদ্দুর লুকোচুরি খেলা থাকলে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের চিত্র আরো মোহনীয় হয়ে উঠে। এ কারণে কোরবানির ঈদে পর্যটকে টৈ টম্বুর হতে পারে বালিয়াড়ি।

দেখা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদে অতিথি বরণে হোটেল-মোটেল গুলো সাজানো হচ্ছে। সবকিছুতেই যেন বাড়তি মনোযোগ। অনেকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করছেন ব্যবহার্য পণ্য।
পর্যটক যাই আসুক সব পর্যটন স্পট গুলোতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি নিয়েছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ। নিরাপত্তা জোরদারে স্পটে স্পটে লাগানো হচ্ছে সর্তকতা মূলক সংকেত ও সাইনবোর্ড।
হোটেল মালিকদের মতে, সৈকত শহরে হোটেল মোটেল রয়েছে চার শতাধিক। এসব হোটেলে দৈনিক প্রায় এক লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু কিছু হোটেলে আগাম কিছু বুকিং দিলেও অনেক হোটেল ওয়াকিং গেস্টের আশায় অপেক্ষা করছেন।
আবহাওয়া যাই থাক পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হবার সম্ভাবনা দেখছেন হোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার।
হোটেল সী-নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী জানান, অতীতে প্রতি ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে কক্সবাজারে। এখন বৃষ্টিতেও লোকসমাগম রয়েছে। এবারের ঈদেও পর্যটক বাড়তে পারে।

হোটেল-মোটেল অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ ইফতেখার বলেন, পর্যটক আমাদের লক্ষী। আন্তরিক সেবায় কক্সবাজারের প্রতি সবাইকে আকৃষ্ট করার তাগাদা আমাদের। এবারও ব্যতিক্রম নয়।
হোটেল অস্টারইকোর পরিচালক মুহাম্মদ রিয়াদ বলেন, কক্সবাজার দিয়ে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে সেভাবে পর্যটনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন নেই।
জেলা সদরের বাইরেও হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার সব পর্যটন স্পট গুলোকে সাজানো হচ্ছে।
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের তত্বাবধায়ক (ইনচার্জ) মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, পার্কের আধুনিকানের কাজ চলছে। এরপরও অতীত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে পর্যটক বরণে প্রস্তুত আছে সাফারি পার্ক। যেকোন দিবস, ঈদ-পার্বণে এখানে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার সমাগম ঘটে লক্ষ্যনীয়।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পর্যটক আগমণ বাড়বে- সেটা মাথায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে কয়েকটি ভাগে সাজানো হয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। টেকনাফ ও ইনানীসহ সব পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্বপালন করবে। প্রয়োজনে সহযোগিতা নেয়া হবে জেলা পুলিশের।
তিনি পর্যটকদের উদ্দেশ্যে বলেন, কক্সবাজারে বাস থেকে নামার পর নিজেদের ইচ্ছামতো অটোতে উঠবেন, অবশ্যই গন্তব্যস্থল উল্লেখ করে ভাড়া ঠিক করে উঠা মঙ্গল। অটোর সুনির্দিষ্ট ভাড়া নির্ধারণ করার উদ্যোগ নিয়েছে টুরিস্ট পুলিশ।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে দুর-দুরান্ত ছাড়াও স্থানীয় নানা বয়সের পর্যটকের পদচারণা পড়বে বালিয়াড়িতে। ভ্রমণপিপাসুদের বিচরণ নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটদের একাধিক টিম টহলে থাকবে। টহল দিবে পুলিশ-র্যাবসহ সাদা পোশাকের শৃংখলা বাহিনীও। ভ্রমণ পিয়াসীদের নির্মল আনন্দ নিশ্চিত করা-ই আমাদের মূল লক্ষ্য।
				












