৩ নভেম্বর ২০২৫

শিশু দিবসে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ব্যতিক্রমি আয়োজন

ক্যানুলা হাতে রং পেন্সিলে জাতীয় পতাকা আঁকলো অসুস্থ শিশুরা

শিশুরা

মহেশখালীর শিশু সিফাত (৭) শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ নিয়ে চারদিন আগে (১৪ মার্চ) কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। নিয়মমতো চিকিৎসায় ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেও বিছানা থেকে তেমন উঠতে চাইত না সিফাত। কিন্তু তার অবস্থান করা ওয়ার্ডটি রংবেরংয়ের বেলুনে সাজছে দেখে উঠে বসে সে। একসময় ফ্লোরে মাদুরা পেতে দেয়া হয় রং পেন্সিল ও খাতা। ডাক দেয়া হয় শিশুদের, আঁকাআকি করতে চাইলে তোমরা যে কেউ নামতে পারো। মুহূর্তে রোগ ভুলে সব শিশুর সাথে মুখের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ক্যানুলা হাতে মাদুরায় এসে বসে সিফাতও। মনের আনন্দে এঁকে যায় দেশের জাতীয় পতাকা। অন্য শিশুরা যে যার মতো মনের মাধুরি প্রকাশ করে খাতার পাতায়।

রবিবার (৭ মার্চ) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪ তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভূতপূর্ব আয়োজনে ক্যানোলা হাতের শিশুদের এমন অংশগ্রহণ সবাইকে অভিভূত করেছে।

একহাতে ক্যানোলা অন্য হাতে রং পেন্সিলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তিকৃত নানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের আনমনে ছবি আঁকা দেখে রীতিমত উচ্ছ্বসিত শিশু রোগীদের স্বজনরা। জাতীয় শিশু দিবসে শিশু ওয়ার্ড জুড়ে এমন ব্যতিক্রমি আয়োজন সাড়া ফেলেছে পুরো হাসপাতালে।

দেখা গেছে, বাহারি বেলুনে বেশ সজ্জিত সম্মুখ গেইট হতে পুরো ওয়ার্ড। চিকিৎসা কার্যক্রম চলার পাশাপাশি জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে হাতে ক্যানুলা নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য স্যালাইন খুলে, অক্সিজেন মাস্ক সরিয়ে রেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছবি আঁকে একঝাঁক শিশুরোগী। রোগের তাড়না ভুলে রং পেন্সিলে খাতার ক্যানভাসে তুলে ধরে তাদের ভাললাগা, ভালবাসা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মতো অন্য আয়োজনের সাথে ছবি আঁকার পাশাপাশি খেলনা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। খেলনা পেয়ে রোগী শিশুরা বেশ উৎফুল্ল। খুশি অভিভাবকরাও।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আশিকুর রহমান জানান, সুস্থ্তার জন্য মন প্রফুল্ল রাখা আবশ্যক। ওয়ার্ডে বরাদ্ধ চল্লিশ শয্যার বিপরীতে ভর্তি (রবিবার) ছিল ৯৪ জন শিশু রোগী। ওষধের পাশাপাশি শিশুদের দ্রুত সুস্থ করে তোলা, মানসিক বিকাশ এবং বিশেষ করে শিশু দিবসে হাসপাতালে ভর্তি শিশুরা যেন উদযাপন থেকে বাদ না পড়ে সেই লক্ষ্যেই এ ভিন্নধর্মী আয়োজন। শিশুদের হাসিমুখ আমাদের প্রেরণা যোগায়। অভিভাবকদের সন্তুষ্টি সরকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বাড়ায়।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডা. মংটিং ঞো জানান, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল দেশের সেরা সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান হিসাবে আমরা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যারা রোগি হিসাবে হাসপাতালে আসে তাদের আমরা পরিবারের একজন হিসেবে সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। আজকের আয়োজন ছিল উপভোগ করার মতো। একজন শিশু হাতে ক্যানোলা থাকলেও বিছানা থেকে নেমে ছবি আঁকার জন্য চলে এসেছে। তাদের খেলার জন্য সামগ্রী দিয়ে আনন্দ আরো বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি এ ধারাবাহিকতা চলমান থাকবে।

এসময় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. মোহাম্মদুুল হক, ডা. জি আর এম জিহাদুর ইসলাম, কনসালটেন্ট মেডিসিন বিভাগ ডা. ইয়াসির আরাফাত, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আশীষ দে, ডা. শীদুল আলম, আবাসিক ফিজিসিয়ান ডা. মো. সাইফুল্লাহসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা ও রোগীদের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও

সর্বশেষ