কক্সবাজার প্রতিনিধি »
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ব্লকের হেড মাঝি (নেতাকে) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। নিহতের বউ সমসিদা (৩৬) বাদী হয়ে উখিয়া থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় (মামলা নং-৫২/২০২২ ইং) ১৫ জনকে এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে। অজ্ঞাত নামা আসামি রয়েছে আরো ১৫/২০ জন।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উখিয়ার ১৮ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা আজিম উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করে। এসময় আরও দুইজনকে কুপিয়ে আহত করা হয় বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের এসপি শিহাব কায়সার খান।
ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার আছরের নামাজের পর নিহত আজিম উদ্দিনকে ক্যাম্পের কবরস্থানে দাফন করা হয়ে।
নিহত মো. আজিমুদ্দিন উখিয়ার বালুখালীর ১৮ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক এল/১৬ হেড মাঝির দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ১৮ নম্বর ক্যাম্প, ব্লক এল/১৬ এর কমল উদ্দিনের ছেলে।
৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান হোসেন বলেন, ২০ নম্বর ক্যাম্প থেকে আসা ১৫-২০ জন রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারী ১৮ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক বি এর সাব ব্লক এম/৯ এর পাহারার দায়িত্ব পালন করা মাঝিদের উপর অতর্কিত হামলা করে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য এই হামলা বলে জানতে পারি। এতে সৈয়দ করিম (৪০) রহিমুল্লাহ (৩৬) নামের আরো ২ জন গুরুতর আহত হন। তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
তবে, রোহিঙ্গাদের একটি সূত্র দাবি করেছে, চলমান সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সবচেয়ে বড় মাথা ব্যাথা নবী হোসেন ও মাস্টার মুন্না গ্রুপের সদস্যরা এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। নিহত ও আহতরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ক্যাম্পের অপরাধ ও সন্ত্রাসীদের বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করছে এমন সন্দেহে সন্ত্রাসীরা নেক্কারজনক হামলা চালিয়ে খুনের ঘটনা ঘটায়। আর ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করা পুলিশের এক সদস্য টাকার বিনিময়ে সন্ত্রাসীদের তথ্য দিয়েছেন কোন কোন রোহিঙ্গা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অপরাধ বিষয়ক তথ্য সরবরাহ দিচ্ছে। এরই সূত্র ধরে ১৮ নম্বর ক্যাম্পের হেড মাঝি আজিম উদ্দিনকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা একটি ভিডিও চিত্রে সাধারণ রোহিঙ্গাদের দাবির সত্যতাও মিলেছে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যাম্পের একটি ঘরে কয়েক ব্যক্তি বিছানা পেতে বসেছেন। বিছানায় রাখা একটি বালিশের উপর শোভা পাচ্ছে একটি নাইন এমএম অত্যাধুনিক পিস্তল, পাশে একটি এন্ড্রয়েড মুঠোফোন সেট। মুঠোফোনটি লাউড দিয়ে রফিক নামে একজনের সাথে কথা বলছিলেন এ প্রান্তের ব্যক্তি।
তিনি বলছিলেন, আমরা আজিম উদ্দিনকে শেষ করে দিয়েছি। আমাদের যে চার সদস্যকে পাচ্ছিলাম না তাদেরও পাওয়া গেছে। মিশন শেষ করে সবাই ১২ নম্বর ক্যাম্পে চলে এসেছি। মাস্টার মুন্না ও নবী হোসেন বলেছেন, এ হত্যার দায় আরসার উপর তুলে দিতে। টাকা যা লাগে দেয়া হবে। পুলিশকে দিয়ে প্রচার করতে হবে ঘটনা আরসা করেছে- নইলে মাস্টার মুন্না ও নবী হোসেন গ্রুপের সদস্যরা বেকায়দায় পড়বে।
অপর প্রান্তের লোক আবার টাকার কথা বলায়, এপ্রান্তের ব্যক্তিকে পাশের একজন ফিসফিস করে বলছিল টাকার জন্য চিন্তা না করতে। তাদের সকল বিষয় আর দুজন হেড মাঝিকেও জানাতে বলা হচ্ছিল।
এ ঘটনার পর থেকেই ক্যাম্পজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে।
৮ এপিবিএন অধিনায়ক (এসপি) শিহাব কায়সার খান বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। তিন সন্দেহ ভাজনকে আটক করেছে পুলিশ। হামলাকারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। পুলিশি টহল অব্যাহত আছে। বর্তমানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করেন তিনি।













