৩১ অক্টোবর ২০২৫

‘ক্রসফায়ারে ভীতি সঞ্চার হয়, অপরাধ দমন হয় না’

কক্সবাজার প্রতিনিধি »

জাতীয় লিগ্যাল এইড সার্ভিস সংস্থার পরিচালক (ডিএনএলএসিএস) সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ক্রসফায়ারে ভীতি সঞ্চার হয়, অপরাধ দমন হয় না। তাই ‘ক্রসফায়ার’ কোন সমাধান নয়। নাগরিক হিসেবে মানুষের আইনের সহায়তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে, এটি সংবিধান স্বীকৃত। যেকোন অপরাধের বিচার আইনী প্রক্রিয়ায় করা উচিত।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অর্গানাইজেশন (এনএলএএসও) এবং কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির (ডিএলএসি) যৌথ আয়োজনে সাংবাদিকদের কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমিনুল ইসলাম আরো বলেছেন, অপরাধ ও দুর্বৃত্তায়ন দমাতে শুধু আদালতের বিচারকার্য উপর নির্ভর না হয়ে স্থানীয় পর্যায়ে সমঝোতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। এতেও সমাধান না হলে নিপীড়িত অসহায় জনতাকে বিনা খরচে আইনী সহায়তা দিতে লিগ্যাল এইড সার্ভিস চালু করা হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ সেবা কমিটি গঠন করে জনতাকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগের সফলতা সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতার উপর নির্ভরশীল।

রোববার (৩ নভেম্বর) দুপুরে সৈকত এলাকার তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের শাহ সূজা সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘কেস রেফারেল পদ্ধতির বাস্তবায়ন’ বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথি আরো বলেন, সমস্যা সমাধানে বাদি-বিবাদীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সদিচ্ছা থাকা দরকার। লিগ্যাল এইড সমাধানের পথ বাতলে দিতে পারে শুধু। এসব বিষয়ে সমাজের সকল স্তরের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। এ জন্য গণমাধ্যমকর্মী ও গণমাধ্যমই মূখ্য ভূমিকা রাখতে পারে। দেশপ্রেম থাকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ করা সবার নৈতিক দায়িত্ব।

কর্মশালার শুরুতে জাতীয় লিগ্যাল এইডের কার্যক্রমের উপর ভিডিও ডকুমেন্টারী প্রদর্শন করেন জাতীয় লিগ্যাল এইড সার্ভিস সংস্থার সহকারি পরিচালক সিনিয়র সহকারী জজ কাজী ইয়াসিন হাবীব।

ডকুমেন্টারীতে জানানো হয়, দুর্বল, অসহায়, নিপীড়িত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ২০০০ সালে সরকার লিগ্যাল এইড সেবা চালু করেছে। ২০১৫ সালের জুন মাস থেকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি চালু করা হয়। যাতে মামলার আগেই সমাধানের চেষ্টা রয়েছে। লিগ্যাল এইডের সেবা প্রাপ্তি ও অনিয়ম-দুর্নীতি হলে ১৬৪৩০ নাম্বারে অভিযোগ করা যাবে। নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে আইনী সেবাকে তৃণমূলে পৌঁছাতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে।

জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মৈত্রী ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন, আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার বিভাগের উপ সচিব এস. মোহাম্মদ আলী, ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অর্গানাইজেশন (এনএলএএসও) প্রকল্পের উপ-পরিচালক (যুগ্ম জেলা জজ) আবিদা সুলতানা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপির প্রকল্প কর্মকর্তা মাসুদ করিম।

কর্মশালায় কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের সেবা কার্যক্রম নিয়ে জানানো হয়, ২০১৭ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত চলমান মামলার সংখ্যা ১০৮০ টি। নিয়োজিত আইনজীবী ২৩৪ জন। মোট ৬৭৭ আবেদন থেকে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩১০টি। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে ৩৪৩ টি। আইনী পরামর্শ নিয়েছে ১০০ জন।

জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি বর্তমানে সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফ এ ৪ উপজেলার ৩১ টি ইউনিয়নে কাজ শুরু করেছে। আগে ইউনিয়ন কমিটি সমূহের কার্যক্রম শূন্যেও কৌটায় হলেও গত জুন মাস থেকে ইউনিয়ন কমিটি সমূহের কার্যক্রম সন্তুষজনক।

আরো জানানো হয়, এতসবের মাঝেও সরকারি আইন সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে ইউনিয়ন পর্যায়ে পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাব রয়েছে। ইউনিয়ন সমূহে এখনো সব কমিটি গঠিত হয়নি, যা হয়েছে তার অনেকগুলো অকার্যকর। কমিটির সদস্যদের ভূমিকা এবং দায়িত্ব¡ সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব রয়েছে।

এছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ে যথাযথভাবে তথ্য সংরক্ষণ না করায় জাতীয় আাইনগত সহায়তা কার্যক্রমের প্রকৃত চিত্র প্রতিফলণ করাতে ব্যর্থ। প্রাতিষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থার বাইরে বিকল্পভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি এবং এর সুফল সম্পর্কে জনগণের স্বচ্ছ ধারণার অভাব বিদ্ধমান। আপোষ নামার আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকায় জেলা লিগ্যাল প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে। কার্যক্রম বাড়ানো হলেও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা-ইউএনডিপি’র কমিউনিটি রিকভারি এন্ড রেজিলেন্স প্রকল্পের অধীনে আয়োজিত কর্মশালায় কক্সবাজার সদর ও রামুর প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক অংশ গ্রহণ করেন।

বাংলাধারা/এফএস/টিএম

আরও পড়ুন