খাগড়াছড়িতে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার ৪ সাংবাদিকের ৩ দিন করে পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খাগড়াছড়ি আমলী আদালত এ রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন।
এর আগে জেলা সদরের ভাঙা ব্রীজ এলাকা থেকে ওই ৪ সাংবাদিককে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার করে খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানা পুলিশ। এ সময় একটি প্রাইভেটকারও জব্দ করা হয়।
পুলিশ জানায়, গত ১০ মার্চ খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানায় মো. আলমগীর হোসেন নামের একজন ইট ভাটা ব্যবসায়ী মামলাটি দায়ের করেন। সূত্র : খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানার মামলা নং- ০২, ধারা : ৩৮৫/৩৮৬/৪১৯/৪২০/৫০৬/৩৪ দন্ড বিধি।
এ বিষয়ে আজ দুপুরে খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানার ওসি. ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) আবদুল বাতেন মৃধা জানান, গ্রেফতারকৃত আসামিরা নিজেদের একাধিক পত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক পরিচয় দিলেও মূলত: তারা কোনো প্রকার পরিচয় পত্র বা অফিসিয়াল এসাইনমেন্ট দেখাতে পারেননি। তারা দীঘিনালার ওই এলাকায় ইট ভাটায় কেন গিয়েছিলেন, তারও কোনো সঠিক সদুত্তর দিতে পারেননি। গুরুত্বের সাথে চাঁদাবাজি মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলছে, আমি নিজেই মামলাটির তদন্ত করছি।
গতকাল বৃহস্পতিবার আসামিদের ৩ দিন করে পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন খাগড়াছড়ি আমলী আদালত। তাদের (কারাগারে আটক আসামিদের) রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত ঘটনা জানা যাবে বলেও জানান খাগড়াছড়ি সদর মডেল থানার ওসি. আবদুল বাতেন মৃধা।
চাঁদাবাজি মামলায়
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন- কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বারের বাসিন্দা মো. মাহবুবুর রহমানের ছেলে তোফায়েল আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান (রিয়াদ), খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার গচ্ছাবিলের বাসিন্দা আব্দুল মতিন মাস্টারের ছেলে মো. মোকতাদের হোসেন ও গুইমারা উপজেলার বাসিন্দা মো. জয়নাল আবেদীনের ছেলে মো. আল-আমীন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ বেলা ১১টার দিকে “গণতদন্ত” স্টিকার লাগানো একটি প্রাইভেটকার নিয়ে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার রাকীব ও সেন্টুর ইট ভাটায় গিয়ে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ওই ৪ জন আসামি চাঁদা দাবি করে। প্রথমে ইট ভাটা মালিক সেন্টুর কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তারা, সেন্টু ভয়ে তাদেরকে ১ লাখ টাকা চাঁদা দেন। এরপর নামলার বাদী ইট ভাটা ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেনের ইট ভাটায় গিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে আসামি তোফায়েল আহমেদ, মেহেদী হাসান (রিয়াদ), মো. মোকতাদের হোসেন ও মো. আল-আমিন।
চাঁদার টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় বাদীর সাথে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রেফতারকৃত আসামিদের স্বজনরা বলছেন, তারা (আসামিরা) বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত, স্থানীয় প্রেসক্লাবেরও সদস্য। তাদেরকে ভূয়া সাংবাদিক বলে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা নিরপরাধ, তাদেরকে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ মামলার সঠিক তদন্ত পূর্বক বিচার চাই।
এদিকে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতারের কারণে প্রেসক্লাবের সম্মান ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় প্রেসক্লাবের অর্থ-সম্পাদকের পদ থেকে মানিকছড়ি প্রেসক্লাবের সদস্য মো. মোকতাদের হোসেনকে অব্যাহতি দিয়েছে মানিকছড়ি প্রেসক্লাব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়ন’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ আরেফিন জানান, গ্রেফতারকৃত ওই ৪ জন সাংবাদিক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার। তাদেরকে মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর নেপথ্যে রয়েছে খাগড়াছড়ির স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রতিহিংসা পরায়ন মনোভাব। বাদী মো. আলমগীর হোসেনের চাঁদাবাজি মামলার ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো নাটক, সাংবাদিকদের নিকট চাঁদার টাকা পাওয়া যায় নি। বিষয়টি গভীর ভাবে তদন্ত করার দাবি জানান সাংবাদিক নেতা সোহাগ আরেফিন।